গাছ কেটে সাবাড়- খোঁজ নেই সড়ক উন্নয়নের
কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে যানজট-দুর্ঘটনা
তৈয়বুর রহমান সোহেল।।
কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের সিক্সলেনের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে। এই সড়কটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে। কিন্তু ২০২৪ সাল অতিবাহিত হতে চললেও এই জাতীয় মহাসড়ককে সিক্সলেনে উন্নীতকরণের কাজে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এখনো পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণের কাজই শেষ হয়নি। প্রকল্প চলমান থাকায় খানাখন্দে ভরপুর অংশের সংস্কার নেই। যার কারণে প্রতিদিন যানজটের কবলে পড়ছেন লাখ লাখ মানুষ। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর ঘটনা নিত্য-নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার ময়নামতি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধোরকরা পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ১৮ ফুট প্রশস্ত। একে আরও ৬ফুট প্রশস্ত করে টু লেনে উন্নীত করা হবে। ওই টু লেনসহ আরও চারলেন; মোট ছয়লেনের কাজ বাস্তবায়নে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় সাত হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। যার মধ্যে ভারত থেকে ঋণ পাওয়ার কথা দুই হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। ভারত নিজেদের কন্ট্রাক্টরদের মাধ্যমে কাজ করবে, এমন চুক্তিতে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয়। শর্ত থাকে দরপত্র আহ্বানের পর যারা কাজ করতে আগ্রহী, তাদের থেকে একটি শর্টলিস্ট সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে পাঠানো হবে। ওই শর্টলিস্ট থেকে ঠিকাদার বাছাই করবে সওজ। কিন্তু দুই বছরের বেশি সময় হতে চললেও ভারত থেকে অদৃশ্য কারণে ঠিকাদারদের শর্টলিস্ট পাঠানো হয়নি। আর এতেই থমকে যায় গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় এই মহাসড়কটির কাজ। এছাড়া ঋণ ছাড়ের জন্য যে প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হওয়ার কথা, তাও শুরু হয়নি।
এদিকে সড়কের কাজ আটকে যাওয়ায় সীমাহীন দুভোর্গের কবলে পড়েছেন কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লাখ লাখ মানুষ। সড়কটির কুমিল্লা অংশের ৪২ কিলোমিটারের মধ্যে বাসস্ট্যান্ড ও ছোট-বড় বাজার আছে অন্তত ২৫টি। এসব স্থানে রয়েছে যানবাহনের চতুর্মুখী চাপ। আছে সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার অবাধ চলাচল। মূল সড়কে যানবাহন পার্কিং করে চলে যাত্রী ওঠা-নামার কাজ। বাস, কাভার্ডভ্যান ও মাটি কাটার ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্য রয়েছে সড়ক জুড়ে। এ কারণে বাসস্ট্যান্ড ও বাজারের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় ছড়ায় যানজট। বিশেষ করে মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ টার্মিনালের আশপাশের কিছু অংশ, দেবিদ্বারের সদর, পান্নারপুল, কালিকাপুর, জাফরগঞ্জ, বুড়িচংয়ের কংশনগর, রামপুর ও সাবের বাজারে সবসময় যানজট লেগে থাকে।
কংশনগর বাজারের মুদি দোকানি আবু মিয়া জানান, যানজট কংশনগর বাজারের নিত্যদিনের সঙ্গী। একে স্থানীয়রা বলেন যানজটের বাজার। এখানে যাত্রী,পথচারী ও পরিবহন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
দেবিদ্বারের মোহাম্মদ শরীফ, মুরাদনগরের তানভীরসহ অন্তত ১০জন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এই সড়কটি মানুষ খেকো। অনেকে পাগলা সড়ক বলে থাকেন। এখানে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। তার মধ্যে সিটিং সার্ভিসের মিনি বাস, পিক-আপ, কাভার্ডভ্যান, থ্রি হুইলার ও মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতিতে চালানোর প্রতিযোগিতা সড়ককে অশান্ত করে তুলেছে। দীর্ঘদিন শুনে আসছি এ সড়কটিকে ছয় লেন করা হবে। এ কারণে কেটে ফেলা হয়েছে সড়কের দুইপাশের প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো ৪ হাজার ৮২৪ টি গাছ। এখন দেখছি, গাছ কাটা ছাড়া আর কোনো কাজই হয়নি।
কুমিল্লার মিরপুর হাইওয়ে ফাঁড়ির থানার ইনচার্জ গিয়াসউদ্দিন বলেন, কুমিল্লা-সিলেট জাতীয় সড়কটি খুবই সরু। সড়কে প্রচুর যানবাহনের চাপ। সড়কে অনেকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকও আছে। সড়কটি ছয়লেনে উন্নীত হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুমিল্লার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, কুমিল্লা-সিলেট সড়কটির কুমিল্লার যে অংশে গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে, এসব অংশের সংস্কার চলমান। যেহেতু প্রকল্প চলে এসেছে, তাই বড় কোনো সংস্কার কাজ হাতে নেওয়া যাচ্ছে না।
কুমিল্লা-সিলেট জাতীয় সড়ক ছয়লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশীষ মুখার্জি বলেন, প্রজেক্ট চলে আসায় সংস্কার চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ২০২৬ সাল নাগাদ জাতীয় মহাসড়কটির কাজ শেষ করার কথা, কিন্তু এখনো পর্যন্ত ২৫৩ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ বাকি রয়েছে। ভারত থেকে ঋণ ছাড় দেওয়া হয়নি। ঠিকাদারদের শর্টলিস্টও দেয়নি ভারত। এ অবস্থায় কাজ কবে নাগাদ শেষ হয় তা বলা যাচ্ছে না। এদিকে দুর্ঘটনা, ভাঙা রাস্তা ও যানজট ডিপ কনসার্নের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে ব্যবস্থা নিতে আমরা সড়ক ও জনপথের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলব।
যা আছে প্রকল্পে:
প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভারত, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার ও চীনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ার ইঙ্গিত করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এই প্রকল্পের আওতায় উভয় পাশে আলাদা দুটি লেনসহ ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চারলেন প্রশস্ত সড়ক তৈরি ও বিদ্যমান সড়ককে আরও ৬ফুট প্রশস্ত করার কথা। কুমিল্লা জেলার বুড়িচং, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা ও আখাউড়া উপজেলায় সড়কের কাজ বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের আওতায় বাজার এলাকার জন্য ৪ দশমিক ৪৭ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। এছাড়া, প্রকল্পের আওতায় ১৪টি ব্রিজ, একটি ফ্লাইওভার, দুটি আন্ডারপাস, ৫০টি কালভার্ট ও ১২টি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের সিক্সলেনের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে। এই সড়কটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে। কিন্তু ২০২৪ সাল অতিবাহিত হতে চললেও এই জাতীয় মহাসড়ককে সিক্সলেনে উন্নীতকরণের কাজে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এখনো পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণের কাজই শেষ হয়নি। প্রকল্প চলমান থাকায় খানাখন্দে ভরপুর অংশের সংস্কার নেই। যার কারণে প্রতিদিন যানজটের কবলে পড়ছেন লাখ লাখ মানুষ। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর ঘটনা নিত্য-নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার ময়নামতি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধোরকরা পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ১৮ ফুট প্রশস্ত। একে আরও ৬ফুট প্রশস্ত করে টু লেনে উন্নীত করা হবে। ওই টু লেনসহ আরও চারলেন; মোট ছয়লেনের কাজ বাস্তবায়নে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় সাত হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। যার মধ্যে ভারত থেকে ঋণ পাওয়ার কথা দুই হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। ভারত নিজেদের কন্ট্রাক্টরদের মাধ্যমে কাজ করবে, এমন চুক্তিতে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয়। শর্ত থাকে দরপত্র আহ্বানের পর যারা কাজ করতে আগ্রহী, তাদের থেকে একটি শর্টলিস্ট সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে পাঠানো হবে। ওই শর্টলিস্ট থেকে ঠিকাদার বাছাই করবে সওজ। কিন্তু দুই বছরের বেশি সময় হতে চললেও ভারত থেকে অদৃশ্য কারণে ঠিকাদারদের শর্টলিস্ট পাঠানো হয়নি। আর এতেই থমকে যায় গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় এই মহাসড়কটির কাজ। এছাড়া ঋণ ছাড়ের জন্য যে প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হওয়ার কথা, তাও শুরু হয়নি।
এদিকে সড়কের কাজ আটকে যাওয়ায় সীমাহীন দুভোর্গের কবলে পড়েছেন কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লাখ লাখ মানুষ। সড়কটির কুমিল্লা অংশের ৪২ কিলোমিটারের মধ্যে বাসস্ট্যান্ড ও ছোট-বড় বাজার আছে অন্তত ২৫টি। এসব স্থানে রয়েছে যানবাহনের চতুর্মুখী চাপ। আছে সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার অবাধ চলাচল। মূল সড়কে যানবাহন পার্কিং করে চলে যাত্রী ওঠা-নামার কাজ। বাস, কাভার্ডভ্যান ও মাটি কাটার ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্য রয়েছে সড়ক জুড়ে। এ কারণে বাসস্ট্যান্ড ও বাজারের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় ছড়ায় যানজট। বিশেষ করে মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ টার্মিনালের আশপাশের কিছু অংশ, দেবিদ্বারের সদর, পান্নারপুল, কালিকাপুর, জাফরগঞ্জ, বুড়িচংয়ের কংশনগর, রামপুর ও সাবের বাজারে সবসময় যানজট লেগে থাকে।
কংশনগর বাজারের মুদি দোকানি আবু মিয়া জানান, যানজট কংশনগর বাজারের নিত্যদিনের সঙ্গী। একে স্থানীয়রা বলেন যানজটের বাজার। এখানে যাত্রী,পথচারী ও পরিবহন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
দেবিদ্বারের মোহাম্মদ শরীফ, মুরাদনগরের তানভীরসহ অন্তত ১০জন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এই সড়কটি মানুষ খেকো। অনেকে পাগলা সড়ক বলে থাকেন। এখানে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। তার মধ্যে সিটিং সার্ভিসের মিনি বাস, পিক-আপ, কাভার্ডভ্যান, থ্রি হুইলার ও মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতিতে চালানোর প্রতিযোগিতা সড়ককে অশান্ত করে তুলেছে। দীর্ঘদিন শুনে আসছি এ সড়কটিকে ছয় লেন করা হবে। এ কারণে কেটে ফেলা হয়েছে সড়কের দুইপাশের প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো ৪ হাজার ৮২৪ টি গাছ। এখন দেখছি, গাছ কাটা ছাড়া আর কোনো কাজই হয়নি।
কুমিল্লার মিরপুর হাইওয়ে ফাঁড়ির থানার ইনচার্জ গিয়াসউদ্দিন বলেন, কুমিল্লা-সিলেট জাতীয় সড়কটি খুবই সরু। সড়কে প্রচুর যানবাহনের চাপ। সড়কে অনেকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকও আছে। সড়কটি ছয়লেনে উন্নীত হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুমিল্লার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, কুমিল্লা-সিলেট সড়কটির কুমিল্লার যে অংশে গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে, এসব অংশের সংস্কার চলমান। যেহেতু প্রকল্প চলে এসেছে, তাই বড় কোনো সংস্কার কাজ হাতে নেওয়া যাচ্ছে না।
কুমিল্লা-সিলেট জাতীয় সড়ক ছয়লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশীষ মুখার্জি বলেন, প্রজেক্ট চলে আসায় সংস্কার চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ২০২৬ সাল নাগাদ জাতীয় মহাসড়কটির কাজ শেষ করার কথা, কিন্তু এখনো পর্যন্ত ২৫৩ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ বাকি রয়েছে। ভারত থেকে ঋণ ছাড় দেওয়া হয়নি। ঠিকাদারদের শর্টলিস্টও দেয়নি ভারত। এ অবস্থায় কাজ কবে নাগাদ শেষ হয় তা বলা যাচ্ছে না। এদিকে দুর্ঘটনা, ভাঙা রাস্তা ও যানজট ডিপ কনসার্নের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে ব্যবস্থা নিতে আমরা সড়ক ও জনপথের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলব।
যা আছে প্রকল্পে:
প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভারত, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার ও চীনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ার ইঙ্গিত করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এই প্রকল্পের আওতায় উভয় পাশে আলাদা দুটি লেনসহ ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চারলেন প্রশস্ত সড়ক তৈরি ও বিদ্যমান সড়ককে আরও ৬ফুট প্রশস্ত করার কথা। কুমিল্লা জেলার বুড়িচং, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা ও আখাউড়া উপজেলায় সড়কের কাজ বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের আওতায় বাজার এলাকার জন্য ৪ দশমিক ৪৭ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। এছাড়া, প্রকল্পের আওতায় ১৪টি ব্রিজ, একটি ফ্লাইওভার, দুটি আন্ডারপাস, ৫০টি কালভার্ট ও ১২টি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে।