অভিযুক্ত এলডিপি নেতা, যৌন নির্যাতনে মারামারির মামলা!

নারী এনজিও কর্মীকে যৌন নির্যাতন

প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার চান্দিনায় রাতের অন্ধকারে নির্জন বাগানে নিয়ে নগ্ন করে এক নারী এনজিও কর্মীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মারামারির মামলা নিয়েছে পুলিশ। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে আঁতআঁত করে যৌন নির্যাতনকারীদের বাঁচাতে এবং ঘটনাকে ভিন্নদিকে প্রবাহিত করতে নামমাত্র মামলা নিয়েছে বলে পুলিশের ওপর অভিযোগ তুলছেন সাধারণ মানুষ।
মামলার আসামিরা হলেন- চান্দিনার তুলাতলী গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে স্বপন মিয়া প্রকাশ চোরা স্বপন (৩০)। স্বপন চান্দিনা পৌর গণতান্ত্রিক যুবদলের(এলডিপি) সহ-সভাপতি। একই গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে মো. শাওন (২৩), মজিবুর রহমানের ছেলে মো. আনসার (২২) ও একই গ্রামের রবিউল (২৪)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এনজিওর কিস্তির টাকা নিয়ে ফিরতে গেলে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় চান্দিনা পৌরসভার তুলাতলী গ্রামে আইডিএফ নামে একটি এনজিওর দুই কর্মীকে আটক করে সংঘবদ্ধ একটি বখাটে দল। তাদেরকে আটকের পর বৈদ্যুতিক সকার দিয়ে পুরুষ ও নারী কর্মীকে একের পর এক সক দিতে থাকে। এক পর্যায়ে নারীর ওড়না দিয়ে পুরুষের হাত বেঁধে দুইজনকে টেনে হিঁচড়ে একটি নির্জন বনে নিয়ে যায়। সেখান রাত ১১টা পর্যন্ত আটক করে তাদের মারধরসহ নারী কর্মীকে নগ্ন করে যৌন নির্যাতন করে চার বখাটে যুবক। এসময় তাদের কাছ থেকে কিস্তির আদায়করা টাকা, ব্যক্তিগত টাকা ও স্বর্ণের কানের দুল, মোবাইল ফোন লুটে নেয়। এসময় নির্যাতনকারীরা নারী কর্মীর নগ্ন ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদাদাবি করে। বিকাশে ২০ হাজার টাকা প্রদান করেও রেহাই পায়নি তারা। এক পর্যায়ে গ্রামবাসী টের পেয়ে তাদেরকে ধাওয়া করে দুই এনজিও কর্মীকে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়।
চান্দিনা থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলেও চিকিৎসা দেয়া হয় মারামারি বলে। ঘটনার শুরু থেকে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এলাকাবাসী ও গণমাধ্যমকর্মীরা অবহিত করলেও তিনি বিষয়টি পাত্তাই দেননি এবং তিনি ঘটনাস্থলে না গিয়ে দূরে আছেন বলে সকলকে জানান। পরে দাউদকান্দি (সার্কেল) সহকারী পুলিশ সুপার ফয়সাল তানভীর থানায় এসে ওই নারী ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সবকিছু জেনে আসামি ধরতে একাধিক টিম পাঠান। কিন্তু কোন টিমই আসামি নিয়ে থানায় আসতে পারেনি।
এদিকে, এনজিওর ওই নারী কর্মী আসামি ধরে ভিডিওগুলো উদ্ধার করতে পুলিশকে বারবার অনুরোধ করলেও পুলিশ অভিযুক্তদের বাঁচাতে কোনো একটি মহলের সাথে সখ্যতা গড়ে মামলা নেন মারামারির ঘটনা দেখিয়ে।
চান্দিনার পৌর এলাকার বাসিন্দা তানভীর ইসলাম জানান, সারা দেশে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সাধারণ মানুষ যখন সোচ্চার, এমন মুহূর্তে চান্দিনায় নারী এনজিও কর্মীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনাটি পুলিশ ভিন্ন দিকে প্রভাহিত করার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
অভিযুক্ত গণতান্ত্রিক যুবদল চান্দিনা পৌরশাখার সহসভাপতি স্বপন সম্পর্কে জানতে চইলে সংগঠনের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মাস্টার বলেন, আমার জানামতে স্বপন আমাদের কমিটিতে নেই। সে একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা নিবে বলে আশা করছি।
মামলার বাদী মো. তারেক রহমান জানান, থানার কম্পিউটার থেকে মামলাটি টাইপ করে আমাকে স্বাক্ষর করতে বলেন। আমি স্বাক্ষর করেছি। কি লিখা ছিল, আমি জানি না।
চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমূল হুদা জানান, মামলার বাদী যেভাবে দরখাস্ত দিয়েছে, সেভাবেই মামলা রেকর্ড করা হয়েছে’। থানার কম্পিউটারে এজাহার টাইপ করে বাদীকে স্বাক্ষর করার জন্য বলা হয়েছে, এমন প্রশ্নে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী পুলিশ সুপার (দাউকান্দি সার্কেল) ফয়সাল তানভীর জানান, ঘটনা শোনার পর ভোর পর্যন্ত চান্দিনা থানায় অবস্থান করি। ভুক্তভোগী নারীর সব কথা রেকর্ড করি। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা মান সম্মানের ভয়ে যৌন নির্যাতনের বিষয়টি সামনে আনতে চায়নি। তারপরও আমি তাদের মুখ থেকে সব কথা শুনে বুঝিয়ে মামলা দিতে বলেছি। মামলা নেয়ার বিষয়টি ওসির। তিনি কি মামলা নিয়েছেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে দেখছি।