এক জমিতে সাত ফসল; ২০ লাখ টাকা পুঁজিতে আসবে দেড় কোটি টাকা
মহিউদ্দিন মোল্লা ।।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামের মাঠ। গ্রামের কৃষক মো. ইউনুস ভুঁইয়া ৬০ বিঘা জমিতে কুল,সীডলেস লেবু,কলা,পেঁপে,মাল্টা,আম ও সবজির চাষ করেছেন। এছাড়া জমির পাশের নালায় মাছ চাষ করেছেন। মৃদু হাওয়ায় দুলছে কৃষকের ফসলের মাঠ। মন ভালো নেই কৃষকের। এখন শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। ২০ লাখ টাকা পুঁজি পেলে ভালো ফসল তুলতে পারবেন। তার আশা আগামী বছর তিনি দেড় কোটি টাকার ফসল বিক্রি করতে পারবেন।
মো. ইউনুস ভুঁইয়া জানান,তিনি ১৪বছর সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানে কৃষি খামারের তত্ত্বাবধান করেছেন। কয়েক বছর আগে দেশে আসেন। নিজের এবং অন্যের জমি লিজ নিয়ে ৬০ বিঘা জমিতে মাছের খামার করেন। এলাকাটা উঁচু হওয়ায় পানি কমে যায়। তেমন লাভও পাচ্ছিলেন না। চিন্তা করলেন খামারের পাড়ে ও ভেতরের জমিতে লেবুর চারা লাগাবেন। টাঙ্গাইল থেকে সাত হাজার লেবুর চারা এনে লাগিয়েছেন। সাথে আর কি করা যায় সেই ভাবনায় ইউটিউবে দেখলেন বল সুন্দরী কুলের চাষ। চারা আনলেন নাটোর থেকে। আট মাসে কুলের ফল আসা শুরু করেছে। তিনি প্রথম বছর দুই লক্ষাধিক টাকার কুল বিক্রি করেছেন।
তিনি জানান,প্রথম বছরে প্রতি গাছে ১০/১২ কেজি কুল পাওয়া যায়। ২য় বছরে আগামীবার প্রতি গাছে ১২০/১৩০ কেজি কুল আসবে। এই গাছ থেকে ১০/১২বছর ফল আসবে। সামনের মাসে লেবু তোলা যাবে। রয়েছে মাল্টার বাগান। সাথে বেগুন,ডাঁটাসহ অন্যান্য সবজির চাষ করেছেন। তার দাবি,তিনি ৫০ লাখ টাকার পুঁজি লাগিয়েছেন। কিন্তু এখন শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। ২০ লাখ টাকা পুঁজি পেলে ভালো ফসল তুলতে পারবেন। তার আশা আগামী বছর তিনি দেড় কোটি টাকার ফসল বিক্রি করতে পারবেন।
বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ধানের মাঠের মাঝে একটি বড় পুকুর। পুকুরের শুকনো জমি জুড়ে কুল,লেবু,কলা,পেঁপে ও মাল্টা বাগান। দক্ষিণের হাওয়ায় দুলছে বল সুন্দরী কুল ও লেবু গাছ। চাষি মো. ইউনুস ভুঁইয়া গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করছেন,সাথে আছেন কয়েকজন শ্রমিক। জমির যে অংশ থেকে মাটি তুলে পুকুরের পাড় বাঁধা হয়েছে। সেখানে খালের মতো পানি জমেছে। খালের পানি সেচ দেয়া ও খালে পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে। খালে মাছ চাষ করা যাচ্ছে। এছাড়া জমির ফসল চুরি ও ক্ষতি ঠেকাবে খাল।
মো. ইউনুস ভুঁইয়ার প্রতিবেশী উপজেলা কৃষকলীগের আহবায়ক কামাল উদ্দিন খন্দকার বলেন,একজন ব্যতিক্রমী ও সাহসী কৃষক তিনি। সহজ শর্তে ঋণ পেলে মো. ইউনুস ভুঁইয়া আরো ভালো করতে পারবেন। মানুষ বিষমুক্ত নিরাপদ ফল ও সবজি পাবে।
মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহমেদ বলেন,এই এলাকায় মো. ইউনুস ভুঁইয়ার খামার সবচেয়ে বড়। তাকে আমরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি। জৈব সার ব্যবহার করে যেন ফল ও সবজি উৎপাদন করতে পারে সেজন্য তাকে প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা দিয়েছি। তার ঋণ পাওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।