দোলনায় চড়ে দূর পাঁচ গ্রামের দারিদ্র


মহিউদ্দিন মোল্লা।।
দৈয়ারা। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাবুটিপাড়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম। ২৫ বছর আগে এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ তিনবেলা খাবার খেতে কষ্ট হতো। কারণ তাদের পর্যাপ্ত আয় ছিলো না। কৃষি কাজে তেমন আয় হতো না। বাঁশ ও সুতার তৈরি দোলনায় চড়ে দূর হয়েছে সেই গ্রামের দারিদ্র। নারীরা ঘরের কাজের পাশে অবসরে দোলনা তৈরি করে আয় করছেন। ওই গ্রামে ১২মাস নারী পুরুষের কর্মব্যস্ততার দৃশ্য চোখে পড়ে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,গ্রামে ভাঙ্গা সড়কের কাদার গর্তে সিএনজি এটো রিকশা আটকে গেছে। কয়েকজন ঠেলে সেটিকে উদ্ধার করেন। এই বিব্রতকর দৃশ্যের পরেই চোখে পড়বে স্বস্তির চিত্র। বাড়ির আঙিনা,সড়কের পাশে সর্বত্র রঙিন দোলনা তৈরির উৎসব। কেউ বাঁশ কাটছেন। গ্রাম জুড়ে বাঁশ কাটার ঠুসঠাস শব্দ। কেউ সুতার বোঝা মাথায় নিয়ে যাচ্ছেন। কারো মাথায় বাঁশের চাক্কি (গোল করে বাঁধা সরু বাঁেশর অংশ)। কয়েকটি কারখানায় সুতা ভাঁজ করা হচ্ছে। বাড়ির উঠানে নারীরা গল্প করতে করতে দোলনার সুতা বুনছেন। হালকা বাতাসে দুলছে প্রস্তুত করা রঙিন দোলনা। যে দোলনায় চড়ে বাড়িতে ্এসেছে সচ্ছলতা। পাশে দুই গাছের মাঝে বস্তা দিয়ে তৈরি দোলনায় দুলছে শিশুরা। এই দোলনা পাইকাররা নিয়ে যাচ্ছেন কুমিল্লা,ঢাকা,চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এই দোলনা বিদেশেও রপ্তানি হয় বলে কারিগররা জানান।

inside post


ব্যবসায়ী মো. মহসিন মিয়া ও রাসেল ভুইয়া বলেন,এই গ্রামে ২৫বছর আগে কবির হোসেন ভুইয়ার নামের একজন এই ব্যবসা শুরু করেন। তাকে দেখে অন্যরাও শুরু করেন। দৈয়ারার পাশের গাংরা, তেপুকুরিয়া, বাবুটিপাড়া,কৈয়ারপাড়সহ বিভিন্ন গ্রামে এই দোলনা তৈরির কাজ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা আরো বলেন,এক সময় অনেকে আমাদের কাজ দেখে হাসতো। বলতো এগুলো কি কাজ? এখন লাভ দেখে তারাও এই ব্যবসা করছেন। তারা আরো বলেন, গ্রামের সড়কের বেহাল অবস্থা। এতে মাল পরিবহনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সড়ক দ্রæত সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।
কারিগর রবিউল হোসেন ভুইয়া, সালমা বেগম ও মজিদ মিয়া বলেন,আগে এক বেলা খেতাম। আটার জাউ খেয়ে থাকতে হয়েছে। এই কাজ শুরুর পর গ্রামের অভাব দূর হয়েছে। আগে পরিবারের একজন কাজ করতেন। এখন সবাই কাজ করতে পারেন। ভালো আয় হচ্ছে। এতে গ্রামের অভাব দূর হয়েছে।
তারা আরো বলেন,ব্যবসায়ী আছেন ১০০জনের বেশি। কারিগর আছেন হাজারের বেশি। তার মধ্যে নারী বেশি। এই গ্রামে এখন আর বেকার নেই। ভিক্ষুকও নেই বললে চলে।
স্থানীয় তীরচর মাদ্রাসার শিক্ষক মতিন সৈকত বলেন, এই গ্রামের নারী পুরুষরা দোলনা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। দোলনা তৈরিতে দৈয়ারাসহ পাশের গ্রামে সচ্ছলতা এসেছে। এই গ্রামের মানুষের এমন উদ্যোমী কাজ অন্য গ্রামের মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। এই গ্রামের সড়কগুলো দ্রæত সংস্কার করা প্রয়োজন।
কুমিল্লা বিসিকের ডিজিএম মুনতাসীর মামুন বলেন,দৈয়ারা গ্রামে দোলনা তৈরির বিষয়টি আমরা জেনেছি। এতে গ্রামীণ জনপদে সমৃদ্ধি এসেছে। তাদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তাসহ যে কোন বিষয়ে সহযোগিতার চেষ্টা করবো। তাদের সড়কের বেহাল অবস্থা নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলবো।

 

আরো পড়ুন