নারী উদ্যোক্তার স্বপ্ন থেতলানো হলো বুলডোজারে

inside post
তৈয়বুর রহমান সোহেল ।।
কুমিল্লায় এক নারী উদ্যোক্তার ফুড কার্ট গুঁড়িয়ে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। বুধবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা নগরীর নিউমার্কেট সংলগ্ন শিক্ষা কমপ্লেক্স ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনায় মর্মাহত ওই উদ্যোক্তা।
ওই নারী উদ্যোক্তা চৈতী কর্মকার জানান, ‘আমার ফুড কার্টটি দিনের বেলা বন্ধ থাকে। সিটি করপোরেশন থেকে দিনের বেলা ওয়ার্নিং দেওয়া হয় এগুলো তুলে নিতে। কিন্তু এটা আমার জানা ছিল না। সন্ধ্যায় যখন দোকান খুলি তখন ম্যাজিস্ট্রেটসহ সিটি করপোরেশনের লোকজন আসেন। এসময় তারা এটি সরিয়ে নিতে বলেন। আমি জানাই, ফুড কার্টটি সরিয়ে নিতে বাড়তি লোক দরকার। আমার একার পক্ষে এটা সরানো সম্ভব নয়। আমাকে একটু সময় দিন। লোক আসলে এটি সরিয়ে নিবো। কিন্তু ওনারা আমার কথা রাখেননি। সেখানে দায়িত্বশীল ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে জানান, তাহলে আমরাই এটা সরিয়ে দিচ্ছি- এ কথা বলেই ফুড কার্টটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আমি ওই ম্যাজিস্ট্রেটের শুধু পা ধরা বাকি রেখেছি, কিন্তু তিনি আমার কোনো কথা-ই শুনতে চাননি।
চৈতী কর্মকার আরো জানান, আশেপাশে অনেক দোকানই ছিল, সেগুলো ভাঙা হয়নি।
সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু জানান, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে সিটি করপোরেশন কাজ করবে এটা ঠিক। কিন্তু কারোটা রাখবে, কারোটা ভাঙবে এমনটা ঠিক না। এ উদ্যোক্তা বাবাহীন৷ তিনি এখান থেকে আয় করে মা, নানি ও ভাই-বোনদের খরচ বহন করতেন। তার উপার্জনের বাহন ভেঙে দেওয়া অত্যন্ত মানবিক কাজ। তাকে সুযোগ দেওয়া যেত। যারা এ কাজটি করেছেন, তারা ঠিক কাজ করেননি।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলর হাবিবুর আল আমিন সাদী জানান, সিটি করপোরেশন থেকে কোনো স্থাপনা উচ্ছেদ করলে আগে থেকে তিন-চারবার জানানো হয়, তারপর অভিযান পরিচালিত হয়। এ মেয়ের ক্ষেত্রেও তাই হওয়ার কথা। তারপরও ওই উদ্যোক্তা যেহেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, আমাদের পক্ষ থেকে তাকে অনুদান দেওয়া হবে।
জানা গেছে, চৈতী কর্মকারের বাবার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। তিনি স্বর্ণ ব্যবসা করতেন। শৈশবে বাবাকে হারিয়েছেন। মামার বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার পাঁচগাছিয়া গ্রামে। সেখানে বড় হয়েছেন। একাদশ শ্রেণিতে পড়েছেন কুমিল্লা কমার্স কলেজে। ইংরেজিতে অনার্সে ভর্তি হন ঢাকার একটি কলেজে। সেটা সম্পন্ন করতে পারেননি। একটি ছোট সরকারি সরকারি চাকরি হয়। মায়ের আপত্তিতে দূরে যেতে পারেননি। কুমিল্লা শহরে এসে রানীর দিঘির পাড়ের বাসায় মা ও নানিকে নিয়ে থাকেন। কিছু করার ইচ্ছে থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর একটি কোর্স করেন। মাঝে এক বছর হোটেল রিজেন্সিতে কাজ করেন। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে চিন্তা করেন কুমিল্লায় খাবারের দোকান দেবেন। কিন্তু এত পুঁজি ছিল না। তাই চিন্তা করেন- সড়কের কাছে ছোট করে কিছু করার। শেষে মা ও নিজের গয়না বন্ধক দিয়ে নেমে পড়েন। প্রথমে একটি ফুড কার্ট ভাড়া নেন। পরে ওই মালিক ফুড কার্টটি বিক্রি করতে চাইলে ৪০হাজার টাকা কষ্টেসাধ্যে জোগাড় করেন চৈতী। ফুড কার্টের নাম দেন সামথিং ফিশি। তার ফুড কার্টে কাঁকড়া মাসাল, লইট্টা ফ্রাই, রূপচাঁদা ফ্রাই, স্কুইড মাসালা ফ্রাই, অক্টোপাস মাসালা ফ্রাই পাওয়া যেত। এ ছাড়া চিকেন টিক্কা বার্গার, চিকেন পাকোড়াও বিক্রি করতেন।
তার স্বপ্ন ছিল, পুঁজি বাড়লে কুমিল্লায় সি-ফুডের একটি রেস্টুরেন্ট করবেন। সেই স্বপ্ন ভেঙে দিল সিটি করপোরেশন।
আরো পড়ুন