পরলোকে রামমালা পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক ইন্দ্র কুমার সিংহ

তৈয়বুর রহমান সোহেল।।
উপমহাদেশের উল্লেখযোগ্য জ্ঞান ভান্ডারের একটি কুমিল্লার রামমালা পাঠাগার। এই পাঠাগারকে ১৯৫৬ সাল থেকে আগলে রেখেছেন নগরীর ইশ্বর পাঠশালা স্কুলের সাবেক শিক্ষক ইন্দ্র কুমার সিংহ। তিনি এ পাঠাগারের গ্রন্থাগারিকের দায়িত্বে ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ১০০ বছর। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইশ্বর পাঠশালা স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুধাংশু কুমার মজুমদার।
তিনি জানান, ইন্দ্র বাবু একজন শিক্ষানুরাগী মানুষ ছিলেন। তিনি একাধিক গ্রন্থের প্রণেতা। মহেশাঙ্গনের প্রাণ ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে, তিন মেয়ে রেখে গেছেন। তার জন্ম কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বরইগাঁও গ্রামে।
কুমিল্লা মহেশাঙ্গনের সাবেক ট্রাস্টি নির্মল পাল বলেন, ইন্দ্র কুমার রামমালা গ্রন্থাগারের প্রাণ ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।
উল্লেখ্য-কুমিল্লা নগরীর লাকসাম রোডে ১৯১২ সালে শিক্ষানুরাগী মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য রামমালা পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন। শতবর্ষ বয়সী পাঠাগারে বিভিন্ন ধরনের ৩০ হাজার বই রয়েছে। এখানে রয়েছে প্রাচীন আট সহস্রাধিক পুঁথি। পুঁথিগুলো বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় রচিত। পুঁথির বিষয় হচ্ছে ইতিহাস,প্রাচীন মহাকাব্য,বাংলা গীতি,সাহিত্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞান। এখানে অনেকে গবেষণা করেন পুঁথি নিয়ে। লাল লালু মোড়ানো পুঁথির ভেতর থেকে বের করে আনেন শত শত বছর পুরাতন ইতিহাস ঐতিহ্য। রামমালা পাঠাগারের আড়াই হাজার পুঁথি ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংরক্ষণের জন্য মাইক্রো ফিল্ম করে। রামমালা পাঠাগারের তিনটি বিভাগ রয়েছে। সাধারণ,পুঁথি ও গবেষণা বিভাগ।
দানবীর মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য জাতীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১৯২৯ সালে পুঁথি সংগ্রহের পরিকল্পনা করেন। বৃহত্তর কুমিল্লা,বৃহত্তর নোয়াখালী এবং বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পুঁথি সংগ্রহ করা হয়। রামমালা সংলগ্ন ঈশ্বর পাঠশালার ছাত্র,শিক্ষক এবং কর্মচারীরা এসব পুঁথি সংগ্রহ করেন। অনেকে নিজ উদ্যোগে এখানে পুঁথি জমা দিয়ে যান। রামমালা পাঠাগার শুক্রবার ছাড়া প্রত্যেক দিন খোলা থাকে। মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য চ্যারিটেবল ট্রাস্ট্রের টাকায় চলে পাঠাগারটি। ১৯২৬ সালে এ পাঠাগার পরিদর্শনে এসেছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

inside post
আরো পড়ুন