প্রতিবন্ধকতা জয়ী খামারির গল্প

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
ডান হাত অচল। পাও তেমন কাজ করে না। পা টেনে হাঁটতে হয় সাবধানতার সাথে। তার ছোট ছেলেটিরও দুই পা অসাড়। এই শারিরীক প্রতিবন্ধকতার পরেও থেমে নেই হুমায়ুন কবির। তিনি একটি খামার গড়ে তুলেছেন। খামারটির অবস্থান কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার মিথিলাপুর গ্রামে। তবে হুমায়ুন কবিরের জীবন যাত্রা ২০১৫সালের আগে এমন ছিলো না।

inside post


পারিবারিক সূত্র জানায়,তারা চার ভাই তিন বোন। হুমায়ুন কবির সবার বড়। প্রাণিবিদ্যায় ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। একটি কলেজে চাকরি করতেন। কিন্তু সপ্তাহে তিনদিনের কাজ তাকে বিরক্ত করে। তিনি আরো বেশি কাজ খুঁজতে থাকেন। যোগ দেন বহুজাতিক কোম্পানিতে। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তিনি এগিয়ে যান। এক পর্যায়ে পৌনে দুই লাখ টাকাও বেতন পেতেন। গাড়ি,আবাসিক ব্যবস্থাসহ নানা সুবিধা। কঠোর পরিশ্রম করে কোম্পানির উন্নতিতেও ভূমিকা রাখেন। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়। ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ডান হাত ও পা অকেজো হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় কথা। ফিরে আসেন গ্রামের বাড়ি মিথিলাপুরে। ধীরে ধীরে তার শরীরের কিছুটা উন্নতি হয়। কথাও বলতে শুরু করেন। কাজের মানুষ,তাই বসে থাকতে চাইলেন না। ভাই ও বন্ধুদের সহযোগিতায় গড়ে তোলেন সমন্বিত খামার। তাকে সহযোগিতা করতে প্রবাস জীবন ফেলে দেশে চলে আসেন তার ছোট ভাই সাইদুল কবীর মুন্না। ভারী কাজ গুলোতে মুন্না সহযোগিতা করেন। ২০১৮ সালের শেষ দিকে একটি গরু কেনেন। একটি থেকে ১১টি গরু। নিজেদের তিনটি পুকুরে মাছ চাষ করেন। চাষ করেন সবজিও। আছে মুরগি ও হাঁস।


সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ছেলে আরহাদকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে খামার পরিদর্শনে বেরিয়েছেন হুমায়ুন কবির। ঝড়ে বড় পুকুরের পূর্ব পাড়ের সবজির মাচা ভেঙে গেছে। তা মেরামত করছেন মুন্না। পরামর্শ দিচ্ছেন হুমায়ুন কবির। মসজিদের পেছনে রয়েছে আরেকটি সবজির জমি। সেখানে তিনি একাই সবজির গাছ গুলো ঠিক করে দিচ্ছেন। এরপর যান লেবু,আম,কলা,কাঁঠালের গাছ পরিদর্শনে। গরুর জন্য বড় জমিতে চাষ করা হয় বিদেশি ঘাস। ঘাস এনে গরুকে দেন। গরু গুলো তাকে দেখে এগিয়ে আসে। তিনিও গলা ও মাথা চুলকে তাদের আদর করেন।


হুমায়ুন কবির মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলেন,অবসর থাকতে ভালো লাগে না। খামারের কাজ আর পড়ালেখায় সময় কাটে। জীবনের যে কোন পরিস্থিতিতে হাসি মুখে বলতে পারি-আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। আমাদের যৌথ পরিবার। পরিবারের সদস্যদের সাহস ও সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে পেরেছি। এমন পরিবার পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তিনি আরো বলেন, সার. বীজ ও পশুর খাদ্যের দাম কমলে আমরা আরো বেশি লাভ করতে পারবো।
আলোকিত বজ্রপুর সংগঠনের সংগঠক ও হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী রফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন,হুমায়ুন কবির শারিরীক প্রতিবন্ধী হয়েও সমন্বিত খামার গড়ে তুলেছেন। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন। তার মত অন্য শারিরীক প্রতিবন্ধী ও বেকার তরুণরাও উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার আফরিণা আক্তার বলেন,হুমায়ুন কবির একজন পরিশ্রমী উদ্যোক্তা। তার খামরটি পরিদর্শন করেছি। আমরা তাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এরকম আরো উদ্যোক্তা তৈরিতে আমরা কাজ করছি।

আরো পড়ুন