বন্দর চালু- বিমান নামে না ৪৭ বছর
কুমিল্লা বিমান বন্দর
মহিউদ্দিন মোল্লা ।।
জেলা কর্মসংস্থান কার্যালয়ের তথ্যমতে ১৫লাখের বেশি বৈধ প্রবাসী কুমিল্লার। রেমিট্যান্সেও সর্বোচ্চ কুমিল্লা জেলা। ঢাকা-চট্টগ্রামের মাঝামাঝি জেলা কুমিল্লা। বিমানবন্দরের পাশে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ইপিজেড। বিমান যোগাযোগ চালু থাকলে এতে সহজে বিদেশি বিনিয়োগকারী আসতে পারবেন। খুলে যাবে সমৃদ্ধির দ্বার। এছাড়া বেশি প্রবাসী থাকায় বিমান বন্দর দ্রুত লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কুমিল্লা জেলার বিমান বন্দরটিতে বিমান নামা বন্ধ রয়েছে গত ৪৭ বছর ধরে।
সূত্রমতে,১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেউরা-ঢুলিপাড়ার পাশে স্থাপিত হয় কুমিল্লা বিমান বন্দর। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে সেনাবাহিনী এ বিমান বন্দর ব্যবহার করতো। ১৯৬৬ থেকে এ বিমান বন্দর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বিমান ওঠানামা করে এ বন্দরে। তারপর তা বন্ধ হয়ে যায়।
কুমিল্লা বিমান বন্দর এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ৭৭ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিমান বন্দর। রানওয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে গাড়ি প্রশিক্ষণের কাজে। সামান্য কিছু জায়গা বাদ দিয়ে বেশিরভাগ এলাকায় ঘাসে ঢাকা। কুমিল্লা ইপিজেডের ৩নম্বর গেট রয়েছে কুমিল্লা বিমান বন্দর এলাকায়। এর আশেপাশে আছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশেনের নেউরা, ঢুলিপাড়া, রাজাপাড়া, উনাইসার, দিশাবন্দ ও রসুলপুর এলাকা। বিমানবন্দরের জন্য নির্মিত রাস্তা অবস্থিত ঢুলিপাড়া, রসুলপুর ও রাজাপাড়ার একাংশে। যাত্রী ওঠানামার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এ রাস্তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
বিমান বন্দরের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, মাত্র ৩০ কোটি টাকার সংস্কারে বিমান বন্দরটি সচল হতে পারে। বিমান বন্দরটি চালু হলে বিমান বন্দর সংলগ্ন কুমিল্লা ইপিজেডে আরও অনেক বিদেশি বিনোয়াগ আসতো, কর্মসংস্থান হতো বিপুল সংখ্যক মানুষের। কুমিল্লার অর্থনীতিতে যোগ হতো নতুন মাত্রা।
বিমান বন্দরটি এখন আন্তর্জাতিক রুটের সিগন্যালিংয়ের কাজ করে। প্রতিদিনই ৩৫ থেকে ৪০টি বিমান এই সিগন্যাল ব্যবহার করে। বেশি চলাচল করে ভারতে অভ্যন্তরীণ রুটের বিমান। আগরতলা বিমানবন্দরে যাওয়া বিমান এই রুটে চলে। এছাড়া রয়েছে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুরের বিমান। এ বিমান বন্দর প্রতিমাসে সিগন্যালিং বাবদ আয় করছে ৩০-৪০লাখ টাকা। বিমান বন্দরটি চালু করতে বেশি অর্থের প্রয়োজন নেই। বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে। জমি কেনা বা অধিগ্রহণের ঝামেলা নেই। প্রয়োজন রানওয়ে কার্পেটিং, ফায়ার সার্ভিস ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের জনবল। বর্তমানে এ বন্দরে ২০জন লোকবল রয়েছে।
কুমিল্লা ইপিজেডের ব্যবসায়ীদের সূত্র জানায়, বিমান বন্দর চালু হলে কুমিল্লা ইপিজেডে আরও বেশি বিদেশি বিনোয়াগকারী আসতো, কর্মসংস্থান হতো বিপুল সংখ্যক মানুষের। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যাতায়াতে কুমিল্লা বিমান বন্দর চালু করা জরুরি। এদিকে দীর্ঘদিন কুমিল্লা বিমান বন্দরে যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ কুমিল্লার প্রবাসীরা। বিমান বন্দর থাকা সত্ত্বেও এর কার্যক্রম অসম্পূর্ণ থাকায় ফেসবুকে নিয়মিত ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন কুমিল্লার মানুষ।
মো. সুমন মিয়া নামে একজন আবুধাবি প্রবাসী জানান,ঢাকা বিমান বন্দর হয়ে কুমিল্লায় ফেরত আসা খুবই কষ্টসাধ্য। সবাই তো আর শহরে থাকে না। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কুমিল্লা শহরের দূরবর্তী উপজেলাগুলোতে যেতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার মতো সময় লেগে যায়। কুমিল্লা বিমান বন্দরটি পুনরায় চালু করলে বাড়ি পৌঁছাতে মাত্র এক ঘণ্টা সময় ব্যয় হতো।
সৌদি আরব প্রবাসী জসীম উদ্দিন জানান,আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল না করে শুধুমাত্র লোকাল রুটে বিমান চলাচল শুরু করলেও আমরা খুব নিরাপদে কুমিল্লা পৌঁছাতে পারতাম। বন্দর আছে, তা চালু করা দরকার। এক্ষেত্রে কেন অবহেলা করছে, তা বোধগম্য নয়।
কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, বিমান বন্দর সংলগ্ন ইপিজেডে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বিমান চলাচল এখন সময়ের দাবি। এছাড়া বাংলাদেশের মধ্যে কুমিল্লার সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রবাসে অবস্থান করছে। তাদের অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচলে চাহিদা রয়েছে।
কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল হাসানাত বাবুল বলেন, ঢাকারও আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কুমিল্লা বিমান বন্দর চালু হয়। মাঝে বিমান বন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক পিছিয়ে গেছে কুমিল্লা।
কুমিল্লা বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বিমান বন্দরটির বেশিরভাগ যন্ত্র সচল। ২০-২৫কোটি টাকা খরচ করলে এ বন্দরটিতে বিমান ওঠানামার কাজ শুরু করা যাবে। এ বন্দরটি চালুর বিষয়ে কুমিল্লার এমপি মহোদয়রা যদি আন্তরিক হন, তবে তা আলোর মুখ দেখতে পারে।