বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার আর নেই
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনের চেনামুখ, একজন আগাগোড়া রাজনীতিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার আর বেঁচে নেই। সোমবার (০২ অক্টোবর) সকালে ৬৯ বছর বয়সে তিনি জেলা শহরের বাগানবাড়িস্থ শ্বশুরালয়ে ঘুমন্ত অবস্থাতেই ইন্তেকাল করেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আল মামুন সরকারের শ্যালক তানভীর আহমেদ জানান, সোমবার সকাল ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠে শৌচাগারে যান আল মামুন সরকার। পরে আবার ঘুমিয়ে পড়েন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর স্ত্রী জিনাত আখতার তাঁকে ডাকতে গিয়েও কোনো সাড়া পাননি। পরে চিকিৎসক ডাকলে তিনি এসে তাঁকে মৃত ঘোষণা করে জানান, ঘুমন্ত অবস্থাতেই তিনি ইন্তেকাল করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই হার্ট, কিডনি, ফুসফুসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।
আল মামুন সরকার ১৯৫৪ সালের ১ মার্চ জেলার সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের আয়নাডোবা গ্রামের স্কুলশিক্ষক ছাফিউর রহমান সরকার ও আনোয়ারা বেগমের ঘরে জন্ম নেন আল মামুন সরকার। দশম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়েই মাত্র ১৭ বছর বয়সে দেশ মাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেন আল মামুন সরকার। ছাত্রজীবন থেকে আমৃত্যু তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। তিনি ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ’র ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমাণ্ডের প্রথম সাধারণ সম্পাদক। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী আল মামুন সরকার ছিলেন আপাদমস্তক রাজনীতিক, দক্ষ সংগঠক এবং একজন মেধাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব। দিনের শুরু থেকে রাতে শয্যায় যাওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক চিন্তা-কর্মেই নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। সাংগঠনিক মুনশিয়ানায় দক্ষ আল মামুন সরকার রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিলেন ব্যাপক আলোচিত। সংবাদপত্র পাঠ ছিলো তাঁর জীবনের এক অনন্য নেশা। বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখিও করতেন আল মামুন সরকার। ‘সমাজসেবায় রাষ্ট্রীয় মানবকল্যাণ খেতাবপ্রাপ্ত’ আল মামুন সরকার শহরের নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিগত ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে আল মামুন সরকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আল মামুন সরকার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনিটের চেয়ারম্যান। সর্বশেষ জেলা পরিষদের বিগত নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেন।
মরহুমের পরিবারের সদস্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম জানিয়েছেন, সোমবার বাদ আছর জেলা ঈদগাহ ময়দানে আল মামুন সরকারের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে শেরপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক শোক জানিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে মরহুমের বাড়িতে যান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী ফাহিমা খাতুন, জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিও এবং তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সুহৃদ-সহকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।