মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছয় সদস্যকে গণধোলাই
আমোদ রিপোর্টার।।
কুমিল্লার দেবিদ্বারে চাঁদবাজির অভিযোগে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছয় সদস্যকে গণধোলাই দেয়া হয়েছে। এনিয়ে একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অভিযানে ছয় হাজার টাকা আদায়ের ঘটনায় স্থানীয়রা ভুয়া ডিবি পুলিশ সন্দেহে তাদের গণধোলাই দিয়ে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্থানীয় বাড়িতে নিয়ে যান। ঘটনাটি ঘটে বুধবার উপজেলার জাফরগঞ্জ গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন গোদারাঘাট মীর বাড়ির বজলু মিয়ার বাড়িতে।
স্থানীয়রা জানান, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের পরিদর্শক আবু বকর ছিদ্দিক, সহকারী উপ-পরিদর্শক উত্তমবরণ দেবনাথ, সহকারী উপ-পরিদর্শক আবুল কাসেম, সিপাই মো. শরিফুল ইসলাম, মিঠুন চন্দ্র রবি দাস, গাড়ি চালক মো. রফিকুল ইসলামসহ ৬ সদস্যের একটি দল ‘মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের স্টিকার লাগানো একটি জিপ নিয়ে জাফরগঞ্জ বাজারে আসেন। (গাড়ি নং- নাভারা এল,ই ঢাকা-মেট্রো ঠ- ১৩-১৬৭৯)। পরে তারা জাফরগঞ্জ গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন গোদারাঘাট বজলু মিয়ার বাড়িতে গিয়ে বজলু মিয়ার ছেলে মো. রাসেল ইসলামকে(২৭) খোঁজ করেন। পরে তাকে না পেয়ে তার বৃদ্ধা মা’ রাফিয়া বেগম(৬৫) ও তার বোন ময়না আক্তারকে(২৯) চাপ দিতে থাকেন। রাসেলকে উদ্ধার না করে দিলে তাদেরকেই ধরে নিয়ে যাবে।
স্থানীয়রা আরো জানান, উপস্থিত লোকজন তাদের ভুয়া ডিবির লোক মনে করে বেধরক মারধর করতে থাকেন, এসময় ৩জন পালিয়ে যান। স্থানীয় কিছু লোক এসে জনরোষ থেকে ৩জনকে উদ্ধার করে জাফরগঞ্জ গ্রামের পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তার বাড়িতে নিয়ে যান। ওই কর্মকর্তা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর রেলওয়ে পুলিশের নিরাপত্তা প্রধান ডি,আই,জি মো. শাহ আলম। ডি,আই,জি মো. শাহ আলম তার ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর কারণে বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। ডি,আই,জি মো. শাহ আলম বিষয়টি দেবিদ্বার থানা পুলিশকে জানালে দেবিদ্বার-ব্রাক্ষণপাড়া সার্কেল এ,এস,পি মো. আমিরুল্লাহ ও দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আরিফুর রহমান একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে আটককৃত লোকদের পুলিশ হেফাজতে রাখেন।
রাসেলের বোন ময়না বলেন, ওরা কখনো ডিবির লোক, কখনো সিআইডির লোক আবার কখনো মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোক বলে দাবি করেন। আমার ভাই মাদকের সাথে জড়িত না হলেও নিজেরাই ঘরে কিছু মাদক রেখে তারাই উদ্ধার করে আমাদের চাপ দিতে থাকেন। আর মাসোহারার ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমরা তা দিতে অপারগতা দেখালে অনেক বাকবিতন্ডার পর ৭ হাজার টাকায় নেমে আসে। টাকা না দিলে আমাদের জোর করে তুলে নেয়ার হুমকি দেন। আমরা ঘরে থাকা ৬ হাজার টাকা দিলে তারা ওই টাকা ও মাদক নিয়ে দ্রুত চলে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের সন্দেহ হয়।
এ ব্যাপারে দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আরিফুর রহমান এবং ডি,আই,জি মো. শাহ আলম’র সাথে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি।
দেবিদ্বার-ব্রাক্ষণপাড়া সার্কেল এএসপি মো. আমিরুল্লাহ বলেন, কুমিল্লা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছয় সদস্যের একটি টিম দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকায় মাদক উদ্ধার অভিযানে আসেন। রাসেলের বাড়ি থেকে কিছু মাদকও উদ্ধার করেন। স্থানীয়দের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে একটু হিচিং হয়। রাসেলের পরিবারের লোকজন বলছেন, ওদের ওখানে মাদক ছিলনা এবং তাদের কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা নিয়ে আসেন। তাদের দেয়া টাকার বর্ণনা অনুযায়ী মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজনের মানি ব্যাগে থাকা ২ টি এক হাজার টাকার নোট ও ৮টি পাঁচশত টাকার নোট পাওয়া গেলেও তার সাথে আরো টাকা ছিল। তাই সত্যটা নিরুপণ করা কঠিন। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তারা আসলে এদের থানা থেকে হস্তান্তর করা হবে। পরবর্তীতে তাদের মতো তদন্ত করে তারাই ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানান।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুমিল্লার ইন্সপেক্টর ব্রজলাল চাকমা জানান,আমি ঘটনাস্থলে যাইনি। ডিডি স্যার গিয়েছেন। তাই বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি।