মুদি দোকানি যেন ক্যালকুলেটর!

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
রতন স্টোর। মালিক রতন মজুমদার। দোকানের অবস্থান কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ দুধ বাজারে। তার বয়স প্রায় ৭০বছর। লেখাপড়া ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত করেছেন। দেশের আরো ৮-১০জন দোকানির মতো দেখতে সাদামাটা, তবে তিনি গুণে তাদের থেকে ব্যতিক্রম। তিনি কোন ক্যালকুলেটর ব্যবহার করেন না। মুখে মুখে করেন লাখ টাকার হিসাব। তাই ক্রেতাদের মুখে তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে মানব ক্যালকুলেটর নামে। এছাড়া সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি করায় দিন দিন তার ক্রেতা বাড়ছে। তিনি ক্যালকুলেটরের থেকে কম সময়ের মধ্যে হিসাব করতে পারেন। রতনের হিসাব নিখুঁত ও দ্রুত। তার গণনা যেন যন্ত্রকেও হার মানায়।
রতনের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ক্রেতাদের ভিড় লেগে আছে। কেউ পণ্য কিনতে এসেছেন, কেউ দেখছেন তার নির্ভুল গণনা। একজন ক্রেতার ক্রয় করা পণ্য তার সহকারী নয়ন মজুমদার ব্যাগে দিচ্ছেন আর তিনি মুখে হিসেব করে ফেলছেন। তার এ প্রতিভা দেখে মুগ্ধ ক্রেতারা।
সহকারী নয়ন মজুমদার বলেন, ১০টি পণ্যে দাম বলি আর তিনি মুখে হিসাব করে ফেলেন। দ্রুত ক্রেতা বিদায় করতে পারি। এতে ক্রেতারা খুশি হন। আমারও ভালো লাগে। ক্রেতারা তাকে মানব ক্যালকুলেটর বলে ডাকেন।
রতনের দোকানের ক্রেতা কাপ্তান বাজার এলাকার মফিজ উদ্দিন আখন্দ বলেন, ১৯৯৫সাল থেকে তার দোকানে আসি। ২০হাজার হোক বা ৪০ হাজার হোক তিনি মুখে হিসাব করে ফেলেন। হিসাবে কোন গরমিল হয়নি। তার এখানে পণ্যের দামও তুলনামূলক কম। তাই এখানে আসি।
আরেকজন ক্রেতা হালুয়াপাড়ার লোকমান হোসেন বলেন, তার বিষয়টি অনেক ইউনিক। তিনি অনেক লম্বা হিসাব মুখে করে ফেলেন। দেখতে অনেক ভালো লাগে। হিসাব করতে করতে তিনি এক্সপার্ট হয়ে গেছেন।
ক্রেতা চাঁন্দপুরের আবদুল আউয়াল রানা বলেন, রতন মজুমদার ভালো মানের পণ্য দেন সাশ্রয়ী দামে। চকবাজার থেকে এখানে কম দামে পাওয়া যায়। রাজগঞ্জ এলাকার মুদি মালের মধ্যে তিনিই ৪০ভাগ বিক্রি করেন।
রতন মজুমদার বলেন, তার বাসা গোয়ালপট্টি। স্ত্রী ও দুই ছেলে আছে। ব্যবসা করেন ৩৫ বছর। রাজবাড়ি গেটে প্রথম দোকান ছিলো। কেরোসিন বিক্রি দিয়ে শুরু। পান, সিগারেট ও চা বিক্রি করেছেন। পরে দুধ বাজারের পাশে মুদি দোকান দিয়েছেন। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন। মুদি দোকান দিয়েছেন প্রায় ২৫ বছর।
ক্রেতাকে সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো পণ্য দিতে পারাটা তার আনন্দ লাগে বলেও জানান। এছাড়া মুখে মুখে হিসাব করতে দেখেন তা মিলে যাচ্ছে। ক্রেতারা এনিয়ে প্রশংসা করেন তারও ভালো লাগে।

inside post
আরো পড়ুন