লখনৌর ছেলের কুমিল্লার হৃদয় জয়

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
হাসিম আপ্পু। বয়স ৮৩ বছর। কুমিল্লার মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছেন ৬৭বছর। কুমিল্লা নগরীর সবাই তাকে এক নামে চিনেন। নাটকের অভিনয় দিয়ে জয় করেছেন কুমিল্লার মানুষের হৃদয়। নাটকের হাজারের বেশি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। ৯ম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে তার নাটকের সাথে প্রেমের শুরু। তার জন্ম ১৯৪১সালের ২৩জানুয়ারি ভারতের উত্তর প্রদেশের লখনৌ শহরে। বাবা সৈয়দ মোস্তফা হোসেন। তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন। মা মনোয়ার জাহান বেগম। এক ভাই চার বোনের মধ্যে তিনি ২য়। তিনি ১৯৫৭সালে প্রথম নাটকে নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। পেশাগত জীবনে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির সমবায় বিভাগে কাজ করেন। ১৯৪৭সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় তারা কুমিল্লার বাগিচাগাঁওয়ে চলে আসেন। সেখানেই তার বেড়ে উঠা।
তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নাটকের সাথে জড়িত থাকতে চান। বৃহস্পতিবার বিকালে নগরীর দারোগাবাড়ির বাসায় এই প্রতিবেদকের সাথে নানা বিষয়ে কথা বলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা হাসিম আপ্পু।


হাসিম আপ্পু বলেন, ভারতের নায়ক দিলীপ কুমারের ভক্ত ছিলাম। কুমিল্লার বাগিচাগাঁওয়ে পাড়ায় নাটক মঞ্চস্ত হবে শুনে আগ্রহের কথা জানাই পরিচালক হানিফ মাস্টারকে। তিনি নারী চরিত্রের কথা বলেন। তখন নারী চরিত্রে কাজ করা নারী তেমন পাওয়া যেতো না। দ্বিতীয়ত আমার গায়ের রঙ ফর্সা ছিলো। সেই থেকে নাটকের নেশা পেয়ে বসে। ওই নাটকের নাম ছিলো বিরোধ। সামাজিক দ্বন্দ্ব ভিত্তিক নাটক। নাট্যকার আসকার ইবনে শাইখ। তার চরিত্রের নাম ছিলো হাবিবা। তার বিপরীতে অভিনয় করেন প্রয়াত কমিশনার আবদুর রশিদ। সংগীত পরিচালক ছিলেন সুখেন্দু চক্রবর্তী। রূপচর্চায় অসিত চৌধুরী।
তিনি বলেন,ভার্নাল থিয়েটারে কাজ করেছি। পরে ৯জন মিলে ১৯৭৫সালের ২৩জুন যাত্রিক নাট্য গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করি। তার মধ্যে গিয়াস উদ্দিন ও আমি বেঁচে আছি। নাটকের প্রদর্শনী নিয়ে গিয়েছি ঢাকা,দিনাজপুর,রংপুর ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলায়। দর্শকের ভালোবাসা তার জীবনের বড় পাওয়া।
অবসরে সময় কাটানোর বিষয়ে তিনি বলেন,এখন বয়স হয়েছে। বাসায় বই পড়ে ও টিভি দেখে সময় কাটে তার। এক ছেলে এক মেয়ে। স্ত্রী অসুস্থ। তার দেখভালও তিনি করেন। তবে মঞ্চের লাল নীল আলো তিনি সব সময় মিস করেন।
ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সংগঠক বদরুল হুদা জেনু বলেন, মফস্বল শহরে নাটকের সাথে প্রায় সাত দশক জড়িত থাকা বিরল। শিল্পের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে এটা সম্ভব নয়।
শিক্ষাবিদ ড.আলী হোসেন চৌধুরী বলেন,তিনি মানুষ যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি তার মনও সুন্দর। আচরণেও তিনি বিনয়ী। তার সাথে আমরাও সহশিল্পী হিসেবে কাজ করেছি। তিনি নতুনদের দিকে সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন।
জেলা কালচারাল অফিসার সৈয়দ মুহম্মদ আয়াজ মাবুদ বলেন,আমি দীর্ঘ সময় থেকে তাকে দেখছি। শিল্পের মানুষ হিসেবে তিনি সব সময় শৈল্পিক আচরণ ধারণ করেন। তিনি দক্ষ অভিনেতার পাশাপাশি একজন বিনয়ী মানুষ। তরুণ প্রজন্মের জন্য তিনি অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।