সন্তানের উরুর ওপর মায়ের শয্যা
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ(কুমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটের দিকে প্রতিদিনই করোনা রোগীর স্রোত বাড়ছে! সারা দিনই হাসপাতাল সড়কে সংকটাপন্ন রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন শোনা যায়। করোনা ইউনিটের ১৮৬ শয্যার বিপরীতে ২২০জন রোগী ভর্তি করা হয়। তারপরও রোগীদের ভিড় বাড়তে থাকে। বেড ফ্লোর কোথাও স্থান ফাঁকা নেই। গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ১০জন মারা গেছেন। রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সাপোর্ট স্টাফরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বারান্দায় বসে আছেন মুরাদনগরের নাজমা বেগম। করোনা ইউনিটে শয্যা খালি নেই। মায়ের তীব্র শ্বাসকষ্ট। তাই বাধ্য হয়ে মা আছমা বেগমকে দুই উরুর ওপর শুইয়েছেন নাজমা। সেখানেই শয্যা পেতে মাকে অক্সিজেন লাগিয়েছেন তিনি।
চৌদ্দগ্রামের শামসুন্নাহার। বাইরে থেকে অক্সিজেন লাগিয়ে হাসপাতালে ভর্তির উদ্দেশে নিয়ে আসা হয় তাকে। কিন্তু আসন খালি না থাকায় ফেরত যেতে হয় তাকে।
শুধু শামসুন্নাহার নয়। গত দুইদিনে করোনায় আক্রান্ত অন্তত ৫০জন জটিল করোনা রোগী ভর্তি না হতে পেরে ফেরত গেছেন এই হাসপাতাল থেকে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, হাসপাতালটির করোনা ইউনিটে ৩০টি আইসিইউসহ ১৩৬টি শয্যা ছিল। সম্প্রতি আরও ৫০টি শয্যা বাড়ানো হয়। অক্সিজেন কনসেনট্রেটর থাকায় ১৮৬ শয্যার বিপরীতে ২২০জন রোগী ভর্তি করা হয়। তারপরও রোগীদের ভিড় বাড়তে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের একাধিক ডাক্তার জানান, হাসপাতালটিতে এখন খুবই খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। নতুন করে রোগী ভর্তি করার সুযোগ নেই। নেই কোনো অক্সিজেন কনসেনট্রেটর। রোগীদের স্রোত সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রেজাউল করিম বলেন,‘ আমরা ৫০টি আসন বাড়িয়েছি। সবগুলো আসনেই রোগী ভর্তি আছে। আসন আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। অক্সিজেন কনসেনট্রেটর যতটুকু ব্যবস্থা করা গেছে, ওই পরিমাণ রোগী ভর্তি করা হয়েছে।’
কুমিল্লার সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসেন জানান,‘কুমিল্লা জেলায় করোনা রোগীদের জন্য ৫৪১টি সিট রয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী আরও ১৫০টি আসন খালি আছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন খালি থাকা সবগুলোই অন্যান্য উপজেলার। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ও কুমিল্লা সদর এলাকায় কোনো আসনই খালি নেই।