সাড়ে ৫ বছর ধরে বন্ধ আখাউড়া ইমিগ্রেশন ভবনের কাজ
মো.ফজলে রাব্বি, আখাউড়া ।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট এলাকায় বাংলাদেশ পুলিশের ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণকাজ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধার মুখে গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে বিদ্যমান জরাজীর্ণ ভবন ও অনুন্নত অবকাঠামোর কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দুই দেশের পাসর্পোট ধারী যাত্রীরা।
আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপেস্টের নতুন ভবনের নকশা নিয়ে আপত্তি তুলেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মাধ্যমে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে বিএসএফ। বিষয়টি সুরাহার জন্য আগের নকশায় পরিবর্তন এনেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনও বিএসএফ কোনো সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ নিয়ে চার দফায় বিএসএফের আপত্তির কারণে কাজ বন্ধ হলো।
ইমিগ্রেশন সূএে জানাগেছে, আখাউড়া উপজেলার কালিকাপুর ও ভবানীপুর মৌজার ৩ একর ১০ শতাংশ জায়গার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন। সেখানে বিদ্যমান ভবনটি ১৯৫৩ সালে নির্মাণ করা। বর্তমানে চেকপোষ্টে একটি কার্যালয় ও ব্যারাক ভবন, একটি এসআই কোয়ার্টার ও একটি রান্নাঘর আছে। ১৯৬৫-৬৬ সালে এই ভবনে অভিবাসন কাজ শুরু করে। এরপর আর এখানে নতুন কোন ভবন নির্মাণ করা হয়নি। বর্তমানে ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, প্রতিদিন আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে এক থেকে দেড় হাজার যাত্রী ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত করেন। এই যাত্রী সংখ্যার বিপরীতে বর্তমান ইমিগ্রেশন ভবনটি একেবারেই ছোট এবং জরাজীর্ণ। বারবার সংস্কার করে কোনো রকমে টিকে আছে ভবনটি। টানা বৃষ্টি হলে হাঁটুপানি জমে ইমিগ্রেন ভবনের সামনে। তখন যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। বর্তমান ভবনটিতে যাত্রীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত বসার জায়গা এবং টয়লেট ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। এর ফলে যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল প্রয়াজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি আধুনিক ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণ।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণ কাজের জন্য ২০১৬ সালে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। নির্মাণ কাজটি দেয়া হয় মেসার্স বিজনেস সিন্ডিকেট ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ছয়তলা বিশিষ্ট ভবনের দুইতলা পর্যন্ত করতে ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ সামগ্রী এনে জড়ো করার পর ২০১৭ সালের মার্চ মাসে বিজিবির মাধ্যমে বিএসএফ নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলে। প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার তত্ত্বাবধানে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। পাইলিংয়ের কাজ চলার মধ্যেই নকশা নিয়ে আপত্তি তুলে আবারও নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে বিএসএফ।
বিজিবির মাধ্যমে বিএসএফ জানিয়েছে, ভূমি থেকে ৩৫ ফুটের বেশি উচ্চতার ভবন করা যাবে না। এর ফলে গত ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দফায় দফায় কাজ বন্ধ রাখার কারণে চরম বিপাকে পড়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে এই কাজের পেছনে দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক গিয়াস উদ্দিন বলেন, নতুন এই ভবনে ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমসসহ দুই দেশের যাত্রীদের জন্য আধুনিক সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। বিএসএফ ভবনের নকশা নিয়ে আপত্তি তুলেছে। তারা চাইছে ৩৫ ফুট বেশি উচ্চতার ভবন যেন না হয়। বিএসএফ এর কথা অনুযায়ি নকশাটি পরিবর্তন করে বিজিবির মাধ্যমে বিএসএফের কাছে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ২০১৪ সালের দর অনুযায়ী ২০১৬ সালের দরপত্রে এই কাজটি পেয়েছি। ২০২২ সালে এসে আমাদের ২০১৪ সালের দর অনুযায়ীই কাজ করতে হচ্ছে। নির্মাণ সামগ্রী ও শ্রমিক খরচসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে। কাজটি পেয়েছি বলে আমাদের করতে হবে। কিন্তু এই কাজ করে আমাদের লোকসানের শেষ নেই।
আখাউড়া আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনর্চাজ আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, প্রতিদিন আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে হাজারেরও বেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারত ও বাংলাদেশে যাতায়াত করেন। কিন্তু বর্তমান দুই কক্ষের একতলা ইমিগ্রেশন ভবনটি যাত্রীর তুলনায় বেশ ছোট এবং জরাজীর্ণ। বৃষ্টি হলে ভবনের সামনের অংশ ডুবে গিয়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। এতে করে যাত্রীদের সেবা দিতে গিয়ে আমাদেরও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আশা করছি নির্মাণাধীন ইমিগ্রেশনে নতুন ভবনের কাজ শেষ হলে কোন সমস্যা থাকবেনা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন,বিএসএফ জানিয়েছে ৩৫ ফুট উচ্চতার বেশি ভবন করা যাবে না। আমরা সেই অনুযায়ী নকশা অনুমোদন করে তাদের কাছে জমা দিয়ে রেখেছি। তারা জানিয়েছে বৈঠক করে পুনরায় কাজের সিদ্ধান্ত দেবে। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।
সুলতানপুর ৬০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মুহাম্মদ আশিক হাসান উল্লাহ বলেন, বিএসএফ আমাদের কাছে আপত্তির কথা বলার পর আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। এটির সুরাহা মন্ত্রণালয় হয়ে আসবে, আমাদের কাছে কিছু নেই। এটা সুরাহা যখন হবে তখন আবার আমরা জানাবো।