স্থানীয় বিরোধে লাঞ্ছিত হন মুক্তিযোদ্ধা কানু
প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই ভূঁইয়া কানুকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্চিতের একটি ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় কোন রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা নেই। স্থানীয় বিরোধ নিয়ে ভুক্তভোগী কতিপয় যুবক আবদুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করে। কানুর বিরুদ্ধে ৯টি মামলা রয়েছে ।
চৌদ্দগ্রাম থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আব্দুল হাই কানুর বিরুদ্ধে ১টি হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, রোববার দুপুরে বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মুক্তিযোদ্ধা ও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা আব্দুল হাই ভুঁইয়া কানুকে জুতার মালা পরায় প্রবাসী আবুল হাশেমসহ এলাকার কতিপয় যুবক। এ সময় উপস্থিত স্থানীয়দের বলতে শোনা যায়, আব্দুল হাই কানুর কারণে তারা গত ১৫ বছর এলাকায় থাকতে পারেনি। ২০১৬ সালে যুবলীগ নেতা আবু বক্কর ছিদ্দিক প্রকাশ রানা হত্যার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্ত কৃষকলীগ নেতা আবদুল হাই ভুঁইয়া কানু ও তার ছেলে গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বিপ্লবকে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে স্থানীয় আ’লীগ সমাবেশ করে। সমাবেশে উপজেলা আ’লীগের প্রচার সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, আব্দুল হাই কানুর কারণে স্থানীয় আ’লীগ নেতাকর্মীরাও এলাকা ছাড়া।
সোমবার সকালে সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে স্থানীয় জসিম উদ্দিন বলেন, আবদুল হাই ভুঁইয়া কানুর সাথে আ’লীগ ব্যতিত আর কোন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব নেই। ভাইরাল ভিডিওটি রাজনৈতিক নয়। এলাকার ভুক্তভোগী কতিপয় যুবক ঘটনা করেছে। এ সময় আমিও সাথে ছিলাম। হত্যাকান্ডের শিকার যুবলীগ নেতা রানা হত্যা মামলায় ১নং আসামি আবদুল হাই ভুঁইয়া কানু। তিনি কুলিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী আবদুল হালিম মজুমদারকে লাথি মেরে পুকুরে ফেলে দেন। ওই নির্বাচনে আমাকেও লাঞ্ছিত করেন।
স্থানীয় ট্রাক্টর চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বে এ ঘটনা ঘটেছে। এর সাথে রাজনীতির কোন সম্পৃক্ততা নাই। গত ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর যুবলীগ নেতা আবু বক্কর ছিদ্দিক প্রকাশ রানাকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে কানু, তার ছেলে বিপ্লব ও তাদের সহযোগীরা। ওইদিন আমি নিজেও গুলির শব্দে ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে আহত হই। কানু আমার চাচা নুরুল ইসলাম মিনারকে রাতের আঁধারে মারধর করে।
আবদুল হালিম মজুমদারের ভাই আবদুর রহমান(৮০) অভিযোগ করে বলেন, কানু আমার ভাইকে বিদ্যালয়ের নির্বাচনের সময়ে লাথি মেরে পুকুরে ফেলে দেয়। আ’লীগ সরকারের সময়ে আমার ভাইয়ের থেকে ২৬ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে। এমনকি আমার ঘর নির্মাণের সময় আমার থেকেও ৭ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির নির্বাচনের দ্বন্দ্বেই রোববার দুপুরে কানুকে আটক করে এলাকাবাসী।
সাবেক ইউপি মেম্বার ও অবঃ সেনা সদস্য আবদুল হক বলেন, কানু গত ১৭ বছরে এলাকায় সন্ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করেছে। একাধিক হত্যা, বাড়িঘর ভাংচুর এবং চাঁদাবাজির সাথেও সে জড়িত। স্থানীয়রা পূর্বের ক্ষোভ থেকে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বেলাল হোসাইন বলেন, আমরা কাউকে অপমান করার বিষয়টি সমর্থন করি না। কৃষকলীগ নেতা আব্দুল হাই ভুঁইয়া কানু হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি। পূর্বের বিভিন্ন বিরোধ থেকে এলাকাবাসী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এর সাথে রাজনৈতিক কোন সম্পৃক্ততা নাই। এমনটি ভাইরাল ভিডিওকে উল্লেখিত ব্যক্তি জামায়াতের কোন পদ-পদবীতে নাই। আমরাও দোষীদের বিচার চাই।
আবদুল হাই কানু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন.তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করেছে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মুজিবুল হক।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এটিএম আক্তারুজ্জামান বলেন, আব্দুল হাই কানুর বিরুদ্ধে ৯টি মামলার বিষয়ে পুরনো অপারেটরের মাধ্যমে জেনেছি। তবে আমার কাছে একটি হত্যা মামলা এবং একটি ভাংচুরের মামলার তথ্য রয়েছে। ভাইরাল ভিডিওতে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।