উজ্জ্বল নক্ষত্রের জন্য ভালোবাসা
![](https://amodbd.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
।। ডা.গোলাম শাহ্জাহান ।।
বাংলার আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর অপ্রত্যাশিত আকস্মিক তিরোধানে বাঙ্গালী জাতির স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দ্বার মুখ থুবড়ে পড়ে। হতাশার করাল গ্রাসে আচ্ছন্ন হয় ভাগ্যাকাশ। নির্যাতিত নিপীড়িত শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বিশ্বনেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অকুতোভয় এই নেতার সংগ্রামী জীবন কালজয়ী। সীমাহীন অত্যাচার নিপীড়ন, জেল, জুলুম এবং ব্যক্তিক ও পারিবারিক দুর্ভোগ তাঁকে তাঁর অভিষ্ট লক্ষ্য থেকে এক চুলও সরাতে পারেনি। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কেটেছে মূল্যবান তারুণ্য ও যৌবনের প্রায় ১৩টি বছর। যার জন্য বিন্দুমাত্র আক্ষেপ ছিল না মহান এ নেতার। কারণ তাঁর সকল ত্যাগ, ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণার উৎসই হচ্ছে জনতার ভালবাসা, তাদের ন্যায্য দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞা। তাঁর হৃদয় জুড়ে ছিল জনগণের জন্য অপরিসীম ভালবাসা। আর তাই তাঁর পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল যে কোন মূল্যে জীবনবাজি রেখে সর্বাত্মক ত্যাগের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শণের। তাইতো এক বিদেশি সাংবাদিকের ‘আপনার সবচেয়ে ভাল গুণ ও খারাপ দোষ কোনটি?’ প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি আমার জনগণকে বেশি ভালবাসি এটিই আমার সবচেয়ে বড় গুণ, দোষটিও হলো আমি আমার জনগণকে বেশি ভালোবাসি।’ জনগণের প্রতি তাঁর প্রাণাধিক ভালবাসার জন্যই তিনি নিজেও জনগণের অকৃত্রিম গভীর ভালবাসায় হয়েছিলেন সিক্ত। জনগণের মৌলিক, গণতান্ত্রিক, সামাজিক , রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আপামর জনগণ ও সকল সহযোগীকে পক্ষপাতহীনভাবে তাঁর ভালবাসাকে হয়তোবা তিনি এর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা বা দোষ বলে বুঝাতে চেয়েছেন। তার এই সরলতা, সকলের প্রতি দুর্বলতাই হয়ে উঠেছিল তার জীবনের কাল এবং জাতীয় জীবনে ঘোর অমানিশার অধ্যায়। বিশাল এই ব্যক্তিত্বের তিরোধানে তাঁর লালিত শোষণহীন, স্বাধীন মর্যাদা সম্পন্ন এক উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আর সুসংগঠিত, সুপরিকল্পিত, দূরদর্শী চিন্তা চেতনার সফল রূপায়ন প্রক্রিয়া হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারের অনুপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার উন্নয়নের চাকা গতিহীন হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে সর্বোজ্জ্বল গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য, যা জাতি হিসাবে আমাদের গৌরবান্বিত করেছে। এই গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের প্রেরণায় অন্যতম উৎসই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুর্দান্ত, স্থির চিত্ত, অথচ ঝড়ের গতি ধেয়ে চলা অদম্য প্রাণশক্তি, অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা, শোষণ পীড়নের বিরুদ্ধে আপোষহীন এক নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানের সকল অঞ্চলের মধ্যে সাম্যতার ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের আলোকে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র গঠন। প্রদেশসমূহকে পূর্ব স্বায়ত্ত্বশাসন প্রদান করে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবিত ৬ দফা দাবি যদি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার মেনে নিত তাহলে সম্ভবত পাকিস্তানই হতে পারত বিশ্বসেরা গণতান্ত্রিক দেশের এক উজ্জ্বল মডেল। কিন্তু স্বার্থান্বেষী পাকিস্তানী শাসক ও শোষক গোষ্ঠী তাদের কায়েমী স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এ দফার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে নিজ পায়েই কুড়াল মারে। উপরন্তু বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে বিভক্ত করার নামে আজব ষড়যন্ত্র মামলা সাজিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের দুরভিসন্ধির ফাঁদ পাতে। কিন্তু তা হালে পানি পায়নি। পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয় ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারসহ বঙ্গবন্ধুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ব্যাপক গণ আন্দোলন। ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনের মূলে পাকিস্তান সরকার ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুর নি:শর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ৬ দফার ন্যায্য দাবি তথা বাঙ্গালীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু কখনো আপোষ করেননি। জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে শত নির্যাতন ও মৃত্যুভয় কখনো তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। পরবর্তীতে স্বাধীনতা যুদ্ধকালে পাক সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা সাজিয়ে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করে। কিন্তু সারা বিশ্বের প্রবল জনমতের চাপের মুখে তা স্থগিত করতে বাধ্য হয়। দেশ-বিদেশের এমন মহান নেতা শেষ পর্যন্ত নিজ দেশের বিপদগামী কিছু সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। স্নেহধন্য বিশ্বাসঘাতক সহকর্মী ও বিপদগামী সেনা সদস্যরা যাদের নিয়মিত বঙ্গবন্ধুর বাসায় যাতায়াত ছিল, তারাই ইতিহাসের জঘন্য এই হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়। জাতির মুখে মেখে দেয় কলঙ্কের কালিমা।
লেখক:স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা ও সমাজ সেবক।