কুমিল্লায় পূজামণ্ডপ ঘিরে উত্তেজনা, গ্রেফতার ৪৩

 

অফিস রিপোর্টার।।

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপ ঘিরে উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৩জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার রাতে নগরীর নানুয়ার দিঘির পাড় ও শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন।

এদিকে দুপুরে নগরীর নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত, কুমিল্লার স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক শওকত ওসমান ও কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের আহবায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ শহিদ প্রমুখ।

আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বাংলাদেশের সকল ধর্মাবলম্বী মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। কিন্তু কিছু দুষ্কৃতকারী উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে অনভিপ্রেত ঘটনা যে ঘটাক না কেন, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনার পরই দেশের বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিও দেখলে বুঝা যায় একটা স্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বিশেষভাবে ঘটনাস্থল থেকে যে লোক ভিডিও করে ছড়িয়ে দিয়েছে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নাম ফয়েজ উদ্দীন। সে কোন দলের তাও যাচাই করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য-মঙ্গলবার রাতে নগরীর নানুয়ার দিঘিরপাড়ের একটি দুর্গাপূজার মণ্ডপে মূর্তির পায়ের ওপরে কোরআন শরিফ রাখার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার সকালে দুইজন ব্যক্তি ৯৯৯-এ কল করে পুলিশকে ঘটনাটি জানালে কোতোয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা পায়। কোতোয়ালি থানার ওসি আন্ওয়ারুল আজিম কোরআন শরিফটি উদ্ধার করেন। এমন একটি ভিডিওও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে বুধবার সকাল থেকে লোকজন নানুয়ার দিঘিরপাড়ে জড়ো হয়ে মিছিল করে। তারা দুটি মণ্ডপে ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।

১২টার পর উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। মনোহরপুরের শ্রী শ্রী রাজেশ্বরী কালিমন্দির, চকবাজারের মন্দিরে ভাঙচুর, ঠাকুরপাড়া বাগানবাড়ি এলাকার পূজার গেটে ভাঙচুর করে। বিকেলে টমছমব্রিজেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে জনতার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঠাকুরপাড়া এলাকাতেও সংঘর্ষ হয়। বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত দফায় দফায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও মিছিলের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ ১০০জন আহত হয়। একটি সূত্রে জানা যায়, আহতদের মধ্যে কুমিল্লা জেনারেল (সদর) হাসপাতালেই চিকিৎসা নেন ৬৬জন।

 

বড়ধরনের সংঘর্ষের শঙ্কায় বুধবার দুপুর থেকেই অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব ও চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। কুমিল্লায় ইন্টারনেট সংযোগ মন্থর করে দেওয়া হয়। এর আগে প্রায় ৩ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল কুমিল্লা।

 

এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সায়েদুল আরেফিন, সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ ও কুমিল্লা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিয়া আফরিন।
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানান, গঠিত এই তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার থেকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিবেন।
অপরদিকে নগরীর অন্যান্য পূজামণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা ও পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে মাঠে রয়েছে পুরিশ, র‌্যাব ও বিজিবি’র সদস্যরা।