গরমে কদর বেড়েছে পানিতালের

আল-আমিন কিবরিয়া।।

কেউ ডাকে পানিতাল, কেউ ডাকে তালের শাঁস, কেউ বলে তালের চোখ, কেউ তালের বিচি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই কচি তালকে ভিন্ন নামে চিনলেও কুমিল্লা অঞ্চলে পরিচিত তালের শাঁস বা পানিতাল নামে।
গ্রীষ্মের ভ্যাপসা গরম। কুমিল্লা জেলাজুড়ে কদর বেড়েছে এ কচি তালের। তৃষ্ণা মেটাতে কচি তালের দোকানে বাড়ছে মানুষের ভিড়। প্রকৃতির উপহার মধু মাসের মধু ফলের স্বাদ। উপভোগ করেন ধনী-দরিদ্র আর শিশু-বুড়ো সব মানুষ।
বিক্রেতারা জানান, বৈশাখ মাস এলেই চুক্তিতে তালগাছ কিনে নেন তারা। তারপর বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের অর্ধেক পর্যন্ত মাত্র দেড় মাস চলে পানিতাল বিক্রির কাজ।
কুমিল্লা নগরী, জেলার সব উপজেলা সদর ও বিভিন্ন এলাকার হাটবাজারসহ সড়কের পাশেসহ ভ্যানে করে পাড়া ও মহল্লায় ঘুরে ঘুরে অস্থায়ীভাবে বিক্রি হচ্ছে এ পানিতাল ।
সদর দক্ষিণ উপজেলা পদুয়ার বাজার। এ বাজারে প্রতিদিন সকাল ৯ থেকে রাত ৮ পর্যন্ত পানিতাল বিক্রি করেন আবু বক্কর। তিনি জানান, প্রতি বছরের মতো এ বছরও তিনি বিক্রি করছেন পানিতাল। এবার গরম বেশি হওয়ায় এবং কোনো রকম ফরমালিন বা মানবদেহের ক্ষতিকারক কিছু মেশানো সম্ভব নয় বলে পানিতালের চাহিদা বেড়েছে বহু গুণ।

বুড়িচং উপজেলার কংশনগর বাজার। এ বাজার দিয়ে বয়ে গেছে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক সড়ক। সড়কের পাশেই প্রতিদিন পানিতাল বিক্রি করেন মো. শরিফ। তিনদিন পরপর পাইকারি দরে পানিতাল ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকার কিনে আনেন তিনি। বিক্রি করেন প্রায় ৩০ হাজার টাকা। লাভ হয় দুইগুণ। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিনই থাকে তার আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা।

মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানিগঞ্জ বাস টার্মিনাল। টার্মিনালে পানিতাল বিক্রি করেন প্রায় ১০ জন। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী জানান, শ্রমিক দিয়ে গাছ থেকে তাল কাটতে খরচ বেড়েছে। গাছ থেকে প্রতিটি তাল পাইকারি হিসেবে কিনছেন চার থেকে ৮ টাকায়। এর পর প্রতি গাছের পানিতাল কাটাতে শ্রমিককে দিতে হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। প্রতিটি পানিতাল বিক্রি করছেন ২০ থেকে ৩০ টাকায়।
জানা গেছে, তালে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আছে। যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে। এন্টি অক্সিডেন্ট গুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় তাল ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। এছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষায় ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও তাল বেশ উপকারী। তালে আছে ভিটামিন-বি, তাই ভিটামিন-বি এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধে তাল ভূমিকা রাখে।