চুক্তি করেই ফাঁসলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ
আরো পড়ুন:
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
অনুমোদনহীন ক্লিনিকের সাথে করোনা পরীক্ষার চুক্তি করেই ফাঁসলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটির চেয়ারম্যান ডা. আবু সাঈদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে ঈশ্বরদী থানায়। এখানকার পিসিআর ল্যাব’র করোনা রিপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়েও ইটালী প্রবাসীকে আসতে হলো ফেরত! এসব নিয়ে চলছে তোলপাড়। ঘটনার দায় এড়াতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে করেন সংবাদ সম্মেলন। এতে হাসপাতাল চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকার কথা বলেও পুলিশী গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় সেখান থেকে সটকে পড়েন।
পাবনা জেলার রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিকের সংগ্রহ করা রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫০ জন কর্মচারী-শ্রমিকের নমুনা পরীক্ষা করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে। কিন্তু সরকারি অনুমোদন ছাড়া অবৈধ উপায়ে নমুনা সংগ্রহ, ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে মেডিকেয়ার ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হয় ঈশ্বরদী থানায়। ইতোমধ্যে ক্লিনিকটির মালিক আবদুল ওহাব রানাকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তিনজনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার ২ নম্বব আসামী করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডা. আবু সাঈদকে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রূপপুরের মেডিকেয়ার ক্লিনিককে ‘বিশ্বাস করে’ নমুনা সংগ্রহে অনুমতি দেয়ার কথা জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন আছে কি-না সেটি যাচাই না করে ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের অনুমতি দেয়ার কথাটিও তারা স্বীকার করেন।সংবাদ সম্মেলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান পিসিআর (পলিমার চেইন রিঅ্যাকশন) ল্যাবের ইনচার্জ ডা. জাকিউর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমাদের সরবরাহ করা হবে মর্মে আমরা বিশ্বাস করে মেডিকেয়ার ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে নমুনা সংগ্রহের জন্য অনুমতি দিয়েছিলাম। ৬ জুলাই সংগৃহিত ৫০টি নমুনা দেওয়ার পরদিন আমাদেরকে কাগজপত্র সরবরাহ করার কথা ছিলো। কিন্তু কাগজপত্র দিতে না পারায় আমরা তাদের কাছ থেকে আর কোনো নমুনা গ্রহণ করিনি। ৭ জুলাই ওই ৫০টি নমুনা পরীক্ষার রিপের্টের মধ্যে ৩৯টি নেগেটিভ, ১১টি পজিটিভ আসে। আমাদের ল্যাবে পরীক্ষিত রিপোর্টগুলোয় কোনো ভুল নেই। অ্যানালাইসিসহ এসব পরীক্ষার রিপোর্ট গ্রাফ পিসিআর মেশিনের মেমোরিতে সংরক্ষিত আছে।’
সংবাদ সম্মেলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) শফিকুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক আশাদুল্লাহ মিয়া, পিসিআর ল্যাব ইনচার্জ এস.এম. জুনায়েদ ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতাল চেয়ারম্যান আবু সাঈদের উপস্থিত থাকার খবরে প্রেস ক্লাবের সামনে পুলিশ অবস্থান নেয়। এরপরই তিনি সেখান থেকে সটকে পড়েন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, ১৭ জুন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। ৯ জুলাই পর্যন্ত তারা মোট এক হাজার ৬৯টি নমুনা পরীক্ষা করে। তন্মধ্যে ৪০৫ টি পজেটিভ এবং ৬৬৪ টি নেগেটিভ হয়। রূপপুরের ঘটনার পর ল্যাব ষ্টাফরা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে ল্যাবটি বন্ধ করে দেয়া হয়। যদিও বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে ল্যাব প্রধানসহ একাধিক ষ্টাফ উপস্থিত ছিলেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে তাদের করোনা ভালো হয়ে যাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো উত্তর তারা দিতে পারেননি। এদিকে জেলার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের দুবাজাইল গ্রামের ইটালী প্রবাসী (পাসপোর্ট নম্বর ইক ০৭৩২৬৯২) মো. সিরাজ মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে করোনার নেগেটিভ নিয়ে ইটালী গিয়েও ফেরত এসেছেন।বিমানবন্দর থেকে এক ঘন্টার মধ্যেই তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি ঢাকার হাজী ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এই বিষয়ে পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। এছাড়াও তাদের করোনা টেষ্ট রিপোর্ট নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন জানান, ‘ঈশ্বরদী থানা থেকে পাঠানো ডা. আবু সাঈদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনো আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি।’