সঙ্কটে সম্ভাবনায় কুমিল্লার খাদি শিল্প
![](https://amodbd.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও দক্ষ তাঁতির সঙ্কট দেখা দেওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে কুমিল্লার সম্ভাবনার খাদি শিল্প। দুই দশক আগেও যেখানে কুমিল্লায় তাঁতির সংখ্যা ছিল ২শ’র বেশি। বর্তমানে তা গিয়ে ঠেকেছে ২০-এর নিচে। রঙের কারিগর ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিকসহ এ কাপড় উৎপাদনের সাথে বর্তমানে জড়িত আছেন ৯০জন। কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে বাঁচাতে মন্ত্রণালয়ের কোনও উদ্যোগ না থাকাতে এমন সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে দাবি করছেন খাদির সাথে সংশ্লিষ্ট কারিগর ও খাদি কাপড়ের ব্যবসায়ীরা। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
সংবাদে উল্লেখ করা হয়,প্রতিজন তাঁতি দৈনিক ৬০ গজের মতো কাপড় উৎপাদন করতে পারেন। সে হিসেবে তাঁতির সংখ্যা বিবেচনায় জেলায় দৈনিক গড়ে ১২০ গজ খাদি কাপড় উৎপাদন হয়। মোটা কাপড় প্রতি গজ বিক্রি হয় ৪০ টাকায়, আর চিকন কাপড় বিক্রি হয় ১২০টাকায়। উৎপাদন কম হলেও দাম নিয়ে সন্তুষ্ট তাঁতিরা। কাপড় কিনে নেন কুমিল্লা নগরীর খুচরা বিক্রেতারা। তারপর নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে সেলাই করে নেন তারা। পূর্বে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বেলাশহর, দেবিদ্বারের বরকামতা, মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর ও কুমিল্লা সদরের কমলপুরে খাদি কাপড় উৎপাদন হতো। বর্তমানে বরকামতা ও বেলাশহরে খাদি কাপড় তৈরি হচ্ছে। কমলপুরে সীমিত পরিসরে খাদি কাপড় উৎপাদন হলেও রামচন্দ্রপুরে খাদি কাপড় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
কুমিল্লা মহানগরীতে বর্তমানে চার শতাধিক খাদি কাপড়ের দোকান রয়েছে। লোকবল আছে ৩হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে চার থেকে পাঁচটি দোকান ব্যতীত বেশিরভাগ দোকানই মেশিনে তৈরি কাপড় ক্রয় করে খাদি হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছেন। স্বাভাবিক সময়ে দোকানগুলোতে দৈনিক গড়ে ৩০ হাজার টাকার খাদি কাপড় বিক্রি হতো। সাধারণ ছুটি শেষে বিক্রি কিছুটা কম। তবে কাপড় বিক্রির ভরা মৌসুম অর্থাৎ শীত আসাতে বিক্রি বেড়েছে। শীতের সময়ে প্রতি দোকানে গড়ে ৪০ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার ব্যবসায়ীরা। শীতের প্রকোপ শেষ হলে বিক্রি অর্ধেকে নেমে আসবে বলে ধারণা করছেন তারা।
খাদি কাপড় উৎপাদনের সাথে বেশকিছু বিষয় জড়িত আছে। তা হচ্ছে তাঁতি, সুতা কাটুনি, ব্লক কাটার ও রঙের কারিগর।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও ইউরোপের দেশসহ প্রায় ১০টি দেশে কুমিল্লার খাদি কাপড় রপ্তানি হতো। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটক ও কুমিল্লার প্রবাসীদের পছন্দ ছিল খাদির পোশাক। নব্বইয়ের দশকের পর রপ্তানি কমতে থাকে। গার্মেন্টের কাপড়ের দিকে ঝুঁকতে থাকে বিদেশি বিনোয়গকারীরা। খাদি কাপড়ের তুলনায় গার্মেন্টে তৈরি কাপড় সহজলভ্য হওয়ায় খাদি কাপড়ের দিকে ঝোঁক কমে যায় আমদানিকারকদের। এদিকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও কমতে থাকে ধীরে ধীরে। ফলে খাদি কাপড়ের উৎপাদন কমে যায়। বংশ পরম্পরায় তাঁতিরা এ ব্যবসাকে লালন করে আসলেও বিক্রি কমে যাওয়ায় অধিকতর লাভজনক পেশার দিকে ঝুঁকতে থাকে তাদের উত্তরসূরীরা। মোটা কাপড়ের তুলনায় চিকন কাপড়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়াও খাদি শিল্পের সঙ্কটের একটি বড় কারণ।
১৯২১ সালে স্বদেশি আন্দোলনের সময় কুমিল্লার ঠাকুরপাড়া অভয়আশ্রমে আসেন মহাত্মা গান্ধী। এসময় দেশের সর্বত্র মোটা কাপড়, মোটা ভাত আন্দোলন গড়ে ওঠে। ডাক ওঠে বিদেশি পণ্য বর্জনের। তিনি নিজেও চরকার বুনন দেয়া মোটা কাপড় পরিধান করতেন। গান্ধীর আহ্বানে চান্দিনার শৈলেন গুহ পথপ্রদর্শক হিসেবে কুমিল্লায় খাদি কাপড় উৎপাদন শুরু করেন। তখন থেকে শুরু হয় কুমিল্লায় খাদি বিপ্লব। মোটা ও পরতে বেশ আরামদায়ক পোশাক হওয়ায় অল্প সময়ে সারাদেশে বিস্তার লাভ করে কুমিল্লার খাদি কাপড়। সে থেকে ১০০ বছর ধরে কুমিল্লায় তৈরি হচ্ছে খাদির পোশাক।
আমরা মনে করি. খাদির সাথে সংশ্লিষ্ট কারিগর ও খাদি কাপড়ের ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন। কুমিল্লার সম্ভাবনার খাদি শিল্প রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। খাদি শিল্পকে বাঁচাতে মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে।