অচলের অন্যদের সচলের সংগ্রাম!

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
ঠক ঠক শব্দ। মাটিতে ফেলা হাতের লাঠির শব্দ। পা টেনে হাঁটছেন। আগে পুরো অচল ছিলেন। এখন লাঠিতে ভর দিয়ে একটু দাঁড়াতে পারেন। নিজের শিরদাঁড়া(মেরুরুজ্জু) ক্ষতিগ্রস্থ। অনেকটা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। তিনি এখন কাজ করছেন অনাথ শিক্ষার্থীদের শিরদাঁড়া মজুবত করতে। তিনি মোবারক হোসেন মোহন। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ভুবনঘরে। থাকেন কানাডা। সেখানের নামকরা বিশ^বিদ্যালয়ে একটি বিভাগে চাকরি করেন। অসুস্থতার পরে কাজে না গেলেও বেতন পাচ্ছেন। সেখানে আরামেই ছিলেন। কিন্তু তার মন পড়ে থাকে গ্রামে। এখানে তিনি আনন্দ ভুবন গড়ে তুলেছেন। গড়ে তুলেছেন দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ। প্রতিষ্ঠান গুলো হচ্ছে, অলাভজনক হালিমা আইডান হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা এবং আবদুস সাত্তার মেম্বার ইসলামিক কিন্ডারগার্টেন। ব্যবস্থা করেছেন নানাজনের কর্মসংস্থানের। এছাড়া চিকিৎসা সহায়তা করে যাচ্ছেন গ্রামের মানুষদের। প্রতি বছর এসে মাস খানেক থেকে এগুলো তদারকি করে যান।


ভুবনঘর গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসায় মনোযোগ সহকারে কোরআন পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। তদারকি করতে গেছেন মোবারক হোসেন মোহন। তিন চার পা হাঁটার পর হাঁপিয়ে যান। পাশে চেয়ার পেয়ে বসে যান। গাড়িতে উঠতে বা ছোট সিঁড়ি ভাঙ্গতে অন্যের সহায়তা নিতে হয়। বিশেষ করে ডান পা তেমন কাজ করে না, ধরে উঠিয়ে দিতে হয়। জুতাটা আরেকজন পরিয়ে দিতে হয়। কিন্তু তার মনোবল প্রবল। একইভাবে কিন্ডারগার্টেনে যান। শিক্ষার্থীদের হুই-হুল্লোড় দেখেন। লাঠি ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।
মোবারক হোসেন মোহন বলেন,বাবা ছিলেন এলাকার জনপ্রতিনিধি ছিলেন। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছেন। মানুষের বিপদে এগিয়ে যেতেন। তাই তার মৃত্যুর ৫০বছরেও মানুষ তাকে স্মরণ করছে। আমিও কাজের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। তিনি বলেন, ২০১২সালে অসুস্থতায় অপারেশন করতে গিয়ে স্পাইনাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মৃত্যুর মুখে চলে গিয়ে ছিলাম। ফিরে এসে মনে হলো এটা আমার দ্বিতীয় জীবন। আমি না থাকলে সন্তানদের কি হতো। তাই অনাথদের কল্যাণের চেষ্টা করছি। শরীর না চললেও মনের জোরে মানুষের পাশে থাকতে প্রতি বছর চলে আসি। এখানের এক দুই মাসের নেয়া মানসিক শক্তি দিয়ে সারা বছর উজ্জীবিত থাকি। হাফেজিয়া মাদ্রাসাকে সচল করতে কিন্ডার গার্টেন চালু করেছি। কিছু লাভ হলে তা মাদ্রাসার অনাথদের সহায়তা কাজে লাগানোর চিন্তা করছি। আমার অবর্তমানে যেন প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ না হয়।
হালিমা আইডান হাফেজিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ মো.সাদেকুর রহমান বলেন, এই মাদ্রাসায় নির্দিষ্ট পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি করাে হয়। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদের থাকা,খাওয়া,পোষাক ও শিক্ষা সামগ্রী ফ্রি। শিক্ষার্থীদের কোথাও দান তুলতে পাঠানো হয় না।
আবদুস সাত্তার মেম্বার ইসলামিক কিন্ডার গার্টেনের প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম, এখানে বাংলা ও ধর্মীয় শিক্ষা একসাথে দেয়া হয়। তাদের বাড়িতে আলাদা করে প্রাইভেট পড়তে হবে না। দিনের পড়া দিনে স্কুলেই শেষ করা হয়।
আলোকিত বজ্রপুর সংগ্রঠনের পরিচালক রফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন,মোহন মানসিক শক্তি দিয়ে তার শারিরীক সমস্যাকে জয় করেছে। তার শেকড়কে ভুলেননি, তাই কানাডার ঐশ^র্যপূর্ণ জীবন রেখে বার বার ফিরে আসছেন। সমাজ থেকে নিয়েছেন,তা ফিরিয়ে দিতে চান। তার এই অনুভূতি সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়–ক। এতে আমাদের সমাজ আরো এগিয়ে যাবে।