অভিনন্দনে অনুপ্রাণিত

।। মতিন সৈকত ।।
১৯৮১সালে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কুমিল্লা আয়োজিত সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার গ্রহণ করি। এটি আমার প্রথম একাডেমিক স্বীকৃতি। ১৯৮৫ সালে সিংগুলা ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই ব্যালেট মাধ্যমে। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ডিগ্রি ক্লাসের বড় ভাই। আমি তার থেকে ১০০ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হই। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠা করি তিন গ্রামের উন্নয়নে পুটিয়া, আদমপুর, বিটমান আদর্শ যুব সংঘ (পিএবি ক্লাব)। সামাজিক উন্নয়নে আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ।
সে গ্রামগুলিতেই পরবর্তীতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গণশেয়ারের ভিত্তিতে আপুসি, আপুবি, বিসমিল্লাহ মৎস্য প্রকল্প প্রতিষ্ঠিত করি। ১৯৮৭ সনে এসএসসি পরীক্ষার আগে মহামান্য রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ কে একটি স্বরচিত কবিতা পাঠাই। তিনি রাষ্ট্রীয় প্যাডে ডাকযোগে আমার চিঠির জবাব পাঠান। এ চিঠি আমাকে ব্যাক্তিগত প্রশান্তির পাশাপাশি সামাজিক অবস্থান তৈরিতে ছাত্র জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সে সময়ে আমি ১২টি কবিতা দিয়ে কবিতা পত্র প্রকাশ করি। ১৯৮৯ সালে ৩৩ টি কবিতা নিয়ে প্রকাশ করি অলংকার কাব্য গ্রন্থ। পরে মুক্তি চাই, তোমরাতো সুখেই আছো প্রকাশিত হয়।
নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি বক্তৃতা, আবৃত্তি, কবিতা, গল্প, ফিচার লেখার চেষ্টা করি। ছোট বেলা থেকে সামাজিকতা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু এবং সৃজনশীল আড্ডা প্রিয় ছিলাম। ১৯৯০ সালে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে প্রথম রক্ত দান কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে জগন্নাথ কলেজে পড়ার সময়ে লেখালেখিতে মনোযোগী হই। তখন জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রায় লেখা প্রকাশিত হয়। সাহিত্য সংস্কৃতি আড্ডার আয়োজনে যুক্ত ছিলাম। ১৯৯০ সালে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। সে সময়ে বাবা-মা, ভাই-বোন পাড়া-প্রতিবেশীদের উৎকণ্ঠার পাশাপাশি বন্ধুদের উপস্থিতি ছিল সারাজীবন মনে রাখার মত। তখন কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে আমার অসুস্থতার সংবাদ ছাপা হয়। সে সময়ে পশ্চিম বঙ্গের বিশিষ্ট কবি মোঃ রফিকুর রহমান ‘দোয়া’ নামের এ কবিতাটি আমার জন্য লেখে পাঠান। তাঁর অপূর্ব এ হৃদ্যতা স্মরণীয়।
‘ফুল কুড়ি নয় ফোটা গোলাপ / চাঁদের মত মুখ / হাটতে হাটতে নুহের কিস্তি / হয়ে যায় তাঁর বুক। / আকাশ নীলে তারার হরফ/ হয়ে যায় তার কাব্য / হারিয়ে গেলে বল তখন / কাকে নিয়ে ভাবব? / সেই ফুলে ঝড়ো হাওয়া / ঝরে যায় গো যদি / হৃদয় হবে ব্যাথার পাহাড় / অশ্রু সাগর নদী। / প্রভু আমার নীড় করে দাও / তার দরাজ বুক / মানুষ যাতে পায় ঠিকানা / হৃদয় জুড়ে সুখ।’
২০১০ সালে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ব্যাবহার ও সম্প্রসারণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রদান করেন। সে সময়ে আমার বক্তব্য শুনে প্রধানমন্ত্রী বলেন” তোমার সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের জন্য অভিনন্দন জানাই। আমাদের দেশের সবকটি নদী পূনঃখনন প্রয়োজন”
কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রদত্ত সার্টিফিকেটে উল্লেখ করেন ‘ এ দেশের গণ মানুষের অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টায় পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন-এর মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে আপনি জনাব এম এ মতিন (মতিন সৈকত) এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দেশ গড়ার অব্যাহত সংগ্রামে গৌরবময় ও কৃতিত্বপূর্ণ এ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ আপনাকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারে ভূষিত করা হলো।
‘কৃষি মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪১৫ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থ থেকে কৃষি সচিব সি,কিউ, মোস্তাক আহাম্মদ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২৬ জুলাই ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করেন। ” জনাব এম,এ মতিন ( মতিন সৈকত) ২০০০ সন থেকে কৃষি, মৎস্য ও আই,পি,এম বিষয়ক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। তিনি নিজ উদ্যোগে নদী খনন,ড্রেনেছ নির্মাণ, কচুরিপানা পরিস্কার এবং ১৫৪টি আইপিএম- আইসিএম ক্লাবকে সংগঠিত করার মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও ব্যাবহার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। তার এসব কর্মকা- নিঃসন্দেহে দেশের পরিবেশ উন্নয়নে সহায়তা করছে। জনাব এম এ মতিন এর পরিবেশ বান্ধব কর্মকাণ্ডের জন্য এলাকার জনগণের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ও কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরুপ জনাব এম,এ মতিনকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪১৫ প্রদান করা হলো।”
২০১৭ সালে দ্বিতীয়বার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক অর্জন করি। কৃষি মন্ত্রণালয় প্রকাশিতস্মারক গ্রন্থে সংক্ষিপ্ত জীবনীতে উল্লেখ করা হয়। কৃষি সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে ১৬ জুলাই ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে উপস্থাপন করেন। ” জনাব এম,এ মতিন সৈকতের উদ্ভাবিত স্বল্পমূল্যের সেচ প্রযুক্তি স্হানীয় জনসাধারণকে আকৃষ্ট করেছে। তিনি কৃষি ও মাছ চাষে সেচ ব্যাস্হাপনা এবং পরিবেশ উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এছাড়া বোরো মৌসুমে বিঘাপ্রতি মাত্র ২০০ টাকার বিনিময়ে ২০ বছর যাবৎ সেচ সুবিধা প্রধান করে আসছে। নিরাপদ ও বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদনের জন্য ক্ষতিকর বালাইনাশক এবং জমিতে জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে কৃষককে উৎসাহিত করছেন। তিনি দাউদকান্দি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ১৫৪ টি আইপিএম ও আইসিএম ক্লাবকে সংগঠিত করে রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা এবং জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ব করে যাচ্ছেন। এছাড়া নিজস্ব নার্সারির মাধ্যমে চারা উৎপাদন, মৎস চাষ সম্প্রসারন, বৃক্ষরোপণ অভিযান পরিচালনা করে স্থানীয় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। স্বল্প ব্যয়ের সেচ প্রযুক্তি উদ্ভাবন, জৈব সার ও জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্বকরণ এবং বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ এম এ মতিন ( মতিন সৈকত ) কে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২১ প্রদান করা হলো”।
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে ২০২১ সালে জাতীয় পরিবেশ পদকে ভূষিত হই। সারাদেশে মাত্র দুই ব্যক্তি এবং দুই প্রতিষ্ঠানকে সরকার এ পুরস্কার প্রদান করে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যক্তিগত ক্যাটাগরিতে আমি চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে এ ক্যাটাগরিতে প্রথম পদক এবং কুমিল্লা থেকে একমাত্র পরিবেশ পদক প্রাপ্ত। এছাড়াও পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমি ছয়বার চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারিভাবে শীর্ষস্থান অর্জন করেছি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২১ স্মারক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়। ‘জনাব এম, এ মতিন (মতিন সৈকত) ১৯৮৭ সন থেকে পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছেন। মাছের অভয়াশ্রম সৃষ্টি, বোরোধান উৎপাদনের জন্য তিনি টামটা-বিটমান খাল, সুন্দলপুর খালসহ কুমিল্লা জেলার কালাডুমুর নদীর ১১ কিলোমিটার খননের আন্দোলনকারী। নির্মল পরিবেশ, বিষমুক্ত ফসল, নিরাপদ খাদ্য, খাল পূনঃখনন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি, বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, কীটনাশক বর্জন, ফসলি জমিতে পার্চিং, সেক্স ফেরোমন ট্যাপ স্থাপন, জৈব পদ্ধতিতে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ দমন, রাসায়নিক সার নিরুৎসাহিতকরণ, জৈবসার, খামারজাত সার, কম্পোস্ট সার, সবুজসার ব্যাবহারে উদ্বুদ্ধকরণ এবং সমন্বিত বালাই ব্যাবস্থাপনা বা আইপিএম পদ্ধতির অনুসরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন।
জনাব মতিন সৈকত বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছেন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে তিনি ১০০০টি আহত ও ধৃত পাখি, ০৪টি বিরল প্রজাতির বন বিড়ালের ছানা, ০২ টি বেজি, ১০ টি গুইসাপ ও ৬টি শিয়াল উদ্ধার ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করে পরিবেশে অবমুক্ত করেছেন। নিজ গ্রামে পাখির বাসা করার জন্য হাঁড়ি, কলসি, ঝুড়ি দিয়ে বাসা তৈরি করে গ্রামটিকে পাখির অভয়াশ্রম তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ উৎসব, বিজ্ঞান উৎসব, পাখি মেলা, পরিবেশ বিষয়ক সেমিনার, আলোচনা সভা, হাট সভা, কৃষকদের সাথে ক্ষেতে খামারে বৈঠক, উঠান বৈঠকসহ স্কুল কলেজে পরিবেশ বিষয়ক অনুষ্ঠান উদ্বুদ্ধকরণে সার্বক্ষণিক কাজ করে আসছেন।
জনাব মতিন নিজ এলাকা কুমিল্লার দাউদকান্দি প্লাবন ভূমি মাছ চাষে মডেল। এ মডেলের অন্যতম উদ্যোক্তা মতিন সৈকত। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যাবহারের ফলে বোরোধানে রাসায়নিক সারের ৭০ ভাগ কমানো সম্ভব হয়েছে। প্রত্যেক ধানের জমিতে পার্চিং করার ফলে পাখি বসে পোকামাকড় খাওয়ার কারণে কোন রকম বিষ বা কীটনাশক ব্যাবহার করতে হয়না। কুমড়া, বাঙ্গি জাতীয় ফসলে সেক্স ফেরোমন ট্যাপ ব্যাবহারের ফলে পেস্টিসাইড লাগেনা। যে কোনো ফসলে, মাছে যাতে ফরমালিন, কার্বাইড, বিষাক্ত রং ব্যাবহার না করা হয় সে জন্য এলাকায় ঢোল পিটিয়ে, মাইকিং করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করছেন। বিষ, ফরমালিন, কার্বাইড বর্জনে কৃষক, উৎপাদক, ভোক্তা সকলের সচেতনতার জন্য মানববন্ধন, সমাবেশ, প্রচারপত্র বিলি, বিজ্ঞাপন দেওয়াসহ নানারকম কর্মসূচি পালন করেছেন। কম সেচ দিয়ে পানির অপচয় রোধে বোরোধানে এ,ডাব্লিউ, ডি (অল্টারনেট ওয়েটার এন্ড ড্রাই) ব্যবহারে কৃষকদের অনুপ্রাণিত করছেন।
সারা দেশের মহাসড়কের পাশের আবর্জনাকে সিটিজেন ফার্টিলাইজার বা নাগরিক সারে রুপান্তরিত করার জন্য তিনি আন্দোলন করছেন। দূষণ নিয়ন্ত্রণে মহাসড়কের দুই পাশের ময়লা-আবর্জনা সরানোর জন্য সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি কয়েকটি অঞ্চলে নিজস্ব উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতার কাজ চালিয়েছেন। নিজ গ্রামে পরিবেশ বান্ধব বন্ধু চুলার ব্যাবহার, প্রচার ও প্রসারে তিনি অগ্রণি ভূমিকা পালন করেছেন। দাউদকান্দি উপজেলার ১৫৪টি আই,পি,এম-আই,সি,এম ক্লাবকে সংগঠিত করে দাউদকান্দি উপজেলাকে দেশের বৃহত্তম আইপিএম উপজেলায় পরিণত করেছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতার জন্য স্কুলের আঙ্গিনাসহ আশপাশ পরিস্কার করা, গাছের চারা রোপণ ও পরিচর্যায় উৎসাহিত করে চলছেন। তিনি বিনামূল্যে গাছের চারা বিতরণের জন্য নার্সারি স্থাপন করেছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ অবদানের জন্য ৪ বার চট্টগ্রাম বিভাগে কৃতিত্ব অর্জন করেন। সৃজনশীল কাজের জন্য তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতির অভিনন্দন পত্র পেয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ব্যাবহার ও সম্প্রসারণের জন্য তাকে ২০১০ ও ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার দেয়া হয়।’
দেশের বিশিষ্টজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ আমার বিষয়ে বলেন” মতিন সৈকত ত্রিশ বছর যাবত পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে কাজটি খুবই চ্যালেঞ্জিং। নিঃস্বার্থভাবে তিনি এ কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও পাখি উদ্ধার ও অবমুক্ত করণে তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়। আমি এ ক্ষেত্রে তাঁর সফলতা কামনা করি।”
ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বিশিষ্ট সমাজ বিশ্লেষক, প্রযুক্তিবিদ অশোক কুমার সিনহা বলেন ‘মতিন সৈকত খুব ভালো কাজে জীবনকে অর্থবহ রেখেছেন। চারিদিকের প্রাকৃতিক দূষণ, সামাজিক দূষণ , রাজনৈতিক দূষণের মধ্যেও তাঁর মত মানুষরা ভরসা। পৃথিবী মানুষের বাসযোগ্য থাকুক এর থেকে বড় চাওয়া আর কি থাকতে পারে। আর মানুষ তো একক নয়, আছে পরিবার, সমাজ, দেশ, প্রকৃতি, জীবজন্তু-পাখি, সমগ্র প্রাণী জগত। প্রত্যেকে ভালো থাকলেই সবাই ভালো থাকবে, আলাদাভাবে কারও ভালো থাকা সম্ভব নয়। মতিন সৈকতের নদী-খাল বাঁচানোর লড়াই পরিবেশ আন্দোলনের এক গৌরবজনক অধ্যায়। তাঁকে দেখে নদীমাতৃক দুই বাংলার মানুষ নদী-খাল বাঁচানোর লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত হোক।’
সি,সি,এন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. আলী হোসেন চৌধুরী বলেন “মাটির গন্ধ মেখে আছে যার শরীরে। মনের মধ্যে জেগে থাকে গ্রাম আর গ্রামের মানুষ। পরিবেশ আর কৃষির উন্নয়ন যার পেশা তিনি মতিন সৈকত। দীর্ঘ দুই দশক ধরে কৃষি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে চলছেন তা অন্যকে প্রণোদিত করছে। তিনি এক ব্যতিক্রমী উজ্জন মানুষ।’
এটি এন নিউজের “কানেকটিং বাংলাদেশ” অনুষ্ঠানে মুন্নি সাহা বলেন ” আমাদের সঙ্গে আছেন মতিন সৈকত। গত সপ্তাহে যারা দেখেছেন তারা জানেন। এ রকম একজন মানুষ, খুব কম মানুষই আছেন, যাদেরকে নিয়ে খুব বড়াই করতে পারি। গর্ব করতে পারি। মতিন ভাই আমাদেরকে গর্বিত করেন। তিনি একজন সুশিক্ষিত, স্বশিক্ষত, কৃষক, মৎস্য চাষি, অনেক কিছু। রাষ্ট্রপতির পুরষ্কার পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর পুরষ্কার পেয়েছেন নানান কিছু নিয়ে। একজন চলন্ত, জীবন্ত উদাহরণ মতিন ভাই আমাদের সঙ্গে আছেন।”
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র, সঙ্গীত শিল্পী ইলা ভৌমিক বলেন “মতিন সৈকত বর্ণময় প্রতিভার বর্ণচ্ছটায় আলোকিত এক নায়ক। সততা আর প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকলে মানুষ সংগঠনের চেয়েও বড় কাজ করে যেতে পারে বীরদর্পে। সৈকত ওর নিজের ভিতর গোটা সমাজ তথা দেশকে ধারণ করেছে। মুক্ত বিহঙ্গের মতো ওর মন। অসুস্থ পাখিকে সুস্থ করে তোলে মানবিক তাড়নায়, দু’চোখে তার তৃপ্তির রেশ। সৈকত নিজেই বলেছে,মুক্ত আকাশে পাখি উড়িয়ে দিয়ে স্বাধীনতার আনন্দ পায়। আরও আছেঃ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও অবমুক্ত করে ভারসাম্যযুক্ত অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা, বিষমুক্ত কৃষি, সিটিজেন ফার্টিলাইজার, সবুজায়ন কার্যক্রম, খাল- নদী পুনঃখনন, প্লাবন ভূমিতে সমবায় ভিত্তিক মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ, বিনামূল্যে মাত্র দুইশত টাকার বিনিময়ে বোরোধান সেচ প্রদান ইত্যাদি আরও আছে লেখার মতো ভাবার মতো, অনুকরণ ও অনুসরণ করার মতো। মতিন সৈকতের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ থেকে শুধু মাত্র একটি কার্যক্রম নিয়ে যদি লিখতে বসি তাহলেও বেশ কয়েক পৃষ্ঠা দখল করে নিবে আমার বিস্ময়কর শব্দমালা। কোনটা বলবো কোনটা ছাড়বো! সৈকতের মতো আমার বাড়িও কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় তাই আমার বাড়তি গর্ব হয় তাকে নিয়ে। প্রকৃতি ও দেশের প্রতি রয়েছে অপ্রতিরোধ্য টান তাই আলিশান শহুরের চাকচিক্য বাড়ি নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ছুটে গেছে মাটির মায়াবী টানে। নিরন্তর ভালোবেসেছে প্রকৃতির প্রতিটি অনুষঙ্গকে। আমার খুব ভালো লাগে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে অকপটে পরিশুদ্ধ মনে যখন বলে, আমি কৃষক পরিবারের সন্তান। পেশাগত জীবনে শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখালেখিও করে। এত ব্যস্ততার মাঝেও এটা কীভাবে সম্ভব! অবাক হওয়ার সাথে সাথে আমিও নিজেকে অলক্ষ্যে তৈরি করি। করোনাকে নিয়ে ওর একটি কবিতা বেশ আলোড়িত হয়েছে ‘বাঁচতে চাই ‘। আসলে শিল্পীরাই পারে জীবনের বিভিন্ন সময়কে তুলে ধরতে তাদের শিল্পের মাধ্যমে।
ভাবছি সততা, সদিচ্ছা, ভালোবাসা কত উচ্চ পর্যায়ে উঠলে একজন মতিন সৈকত হওয়া যায়।”
এটিএন নিউজের হেড প্রভাষ আমিন ভাই আমার সম্পর্কে লেখেন “মতিন সৈকতকে আমি ঈর্ষা করি। কারণ আমি যে জীবন যাপন করতে চাই, অন্তত শেষ জীবনে হলেও; মতিন সৈকত সেটা করেন প্রতিদিন। মতিন সৈকত বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। রাজধানীতে উচ্চশিক্ষা নিয়ে আমরা সবাই শহুরে আয়েশের ফাঁদে আটকে যাই, আর ছটফট করি। কিন্তু মতিন সৈকত সেই ফাঁদ কেটে ফিরে গেছেন গ্রামে। সেখানে তিনি প্রকৃতিকে ফাঁদ থেকে মুক্ত করার লড়াই করছেন। আমরা নদী বাঁচানোর কথা, প্রকৃতি বাঁচানোর কথা, গাছ লাগানোর কথা স্বপ্ন দেখি-লিখি। আর মতিন সৈকত নিত্যদিন এই সংগ্রাম করেন। আমার ছেলেবেলার নদী কালাডুমুর এখন মরতে বসেছে। সেই নদী বাঁচাতে তার নিরন্তর চেষ্টা আমাকে কৃতজ্ঞ করে।
প্রায়ই ফেসবুকে দেখি মতিন সৈকত পাখি বা বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করছেন। জানলাম তিনি এক হাজারেরও বেশি পাখি, শিয়াল, বনবিড়াল, বেজি, গুইসাপ উদ্ধার করে অবমুক্ত করেছেন। জেনে কৃতজ্ঞতায় নুয়ে যাই। আমরা যাতে শহরে বসে বিষমুক্ত ফল, সব্জি খেতে পারি, তার জন্য প্রতিদিন চেষ্টা করেন মতিন সৈকত। স্বল্প খরচে সেচ, পাখি যাতে পোকামাকড় খেয়ে ফসল রক্ষা করতে পারে, তার জন্য কাজ করেন।
দাউদকান্দির প্লাবনভূমিতে মাছ চাষে রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তার লাগানো গাছ আমাদের ছায়া দিচ্ছে, অক্সিজেন দিচ্ছে। মতিন সৈকতরা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছেন বলেই আমরা আরামে থাকতে পারছি। আমি সত্যিই মতিন সৈকতকে ঈর্ষা করি। আর স্বপ্ন দেখি, কোনো একদিন আমিও মতিন সৈকত হবো।”
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন ” আমরা সারাদেশে সাদা মনের মানুষ খুঁজে বেড়াই, অথচ আমাদের বন্ধু মতিন সৈকত একজন সাদা মনের মানুষ। আমরা ঢাকাতে বসে বড় বড় কথা বলি, আর তিনি গ্রামের সাধারণ মানুষদের নিয়ে কাজ করেন। মতিন সৈকত একটি কালার টেলিভিশনের মত রঙিন।”
লেখক: জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষি ও পরিবেশ সংগঠক।