আখাউড়া শুল্ক গুদামের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা ।
নিউজের বক্তব্য চাওয়ায় সাংবাদিকের সাথে অশোভন আচরণ করেছেন এক সরকারি কর্মকর্তা। তথ্যের প্রয়োজন হলে সরাসরি অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তাকে (কর্মকর্তা) ফোন দিতে বারণ করেন। রাগান্বিত স্বরে ওই কর্মকর্তা বলেন ‘আর কখনও ফোন দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আজকের পর থেকে কখনও ফোন দিবেন না। ফোন দিয়ে কোন তথ্য চাইবেন না। কোন তথ্যের প্রয়োজন হলে স্থল শুল্ক স্টেশনে এসে কথা বলেন। এ কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন। আলোচিত ওই কর্মকর্তা হলেন আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ আশরাফ উদ্দিন। স্থল শুল্ক গুদামের অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে বুধবার (৩১ মে) দুপুরে ওই কর্মকর্তাকে মোবাইলে ফোন দিলে তিনি এমন আচরণ করেন।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া শুল্ক গুদামের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যারে কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। গত ১৮ মে জেলা শহরের পাইকপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মানিক মিয়া শুল্ক গুদামের বিভিন্ন অনিয়মের তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়ে এ আবেদন করেন।
ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগে বলা হয়, আখাউড়া শুল্ক গুদামে দীর্ঘদিন যাবত সিল টেন্ডার হয় না। সময় মত নিলাম না হওয়ায় কোটি কোটি টাকার পণ্য গুদামেই মেয়াদোর্ত্তীণ হয়ে নষ্ট হচ্ছে। মাঝে মধ্যে ওপেন নিলাম হলেও তা নিয়ম মোতাবেক হয় না। নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ নিলাম ডাককারী ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিয়ে মালের ডেলিভারী মেমো বুঝে নিবেন। কিন্তু আখাউড়ায় শুল্ক গুদামের নিলামকৃত পণ্যের মূল্য নগদ টাকায় গ্রহণ করা হয়। ডাককারীকে যে ডেলিভারী মেমো দেওয়া হয় তাতে কোন কোন জি.আর নম্বরের মালামাল এবং কি কি পণ্য নিলামে বিক্রি হয়েছে তা উল্লেখ করা হয় না। পরে গুদাম কর্মকর্তারা তাদের ইচ্ছে মত টাকা জমা দেয়। ফলে সরকারি কোষাগারে কত টাকা জমা হয় কেউ জানে না। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যা সঠিকভাবে তদন্ত করলে প্রমান পাওয়া যাবে। অভিযোগে আরও দাবী করা হয়, আখাউড়া শুল্ক স্টেশন সহ শুল্ক গুদামের ৫ জন কর্মকর্তা বাড়ি স্থল শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার আবু হানিফ মোহাম্মদ আহাদের নিজ এলাকায়।
অভিযোগকারী মানিক মিয়া বলেন, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ২০২৩ সালের ১৫ মে পর্যন্ত আখাউড়া শুল্ক গুদামের নিলামকৃত শীটের ট্রেজারি চালান ও ডেলিভারী মেমো যাচাই করলে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমান পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, বিজিবি’র বিভিন্ন ক্যাম্পে আটককৃত পণ্য প্রায়ই কাষ্টম্স কর্মকর্তারা নিলাম করেন। কোন প্রচারণা করা হয় না। নিলাম সম্পর্কে স্থানীয় নিলাম ডাককারীরা জানে না। আখাউড়া শুল্ক গুদাম কর্মকতা মোঃ আশরাফ উদ্দিন বিভিন্ন কৌশলে তার পছন্দের ব্যক্তিকে কম দামে মালামাল পাইয়ে দেয়। এতে সরকার ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। তিনি শুল্ক গুদামের অনিয়ম দূরীকরণ ও সরকারের রাজস্বের স্বার্থে তার অভিযোগগুলোর তদন্ত করার দাবী জানান।
চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয় কাস্টম্স এক্সাইজ ও ভ্যাট এর কুমিল্লা কমিশনার, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিজিবি’র কুমিল্লার সেক্টর কমান্ডার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসককে।
এ ব্যপারে বুধবার (৩১ মে) দুপুর পোনে বারটায় আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এবং গুদাম কর্মকর্তা মোঃ আশরাফ উদ্দিনকে মুঠো ফোনে কল দিলে তিনি ৫ মিনিটের মধ্যে অফিসে যেতে বলেন। এত কম সময়ের মধ্যে যাওয়া সম্ভব না বলায় তিনি বিকাল ৫টায় যেতে বলে ফোন রেখে দেন। এর কিচ্ছুক্ষণ পর গুদাম কর্মকর্তা নিজেই ফোন করে রাগান্বিত স্বরে বলেন ‘আর কখনও ফোন দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আজকের পর থেকে কখনও ফোন দিবেন না। ফোন দিয়ে কোন তথ্য চাইবেন না। সরাসরি আসলে তথ্য দিব। কোন তথ্যের প্রয়োজন হলে স্থল শুল্ক স্টেশনে এসে কথা বলেন। এ কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এই বিষয়ে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার আবু হানিফ মোহাম্মদ আহাদের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানে কাছে লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। অভিযোগ দিয়ে থাকলে তা তদন্ত হবে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়।