আমোদ সাংবাদিক শোনার পর বিয়ে!

আবু সুফিয়ান রাসেল।।
শুক্রবার স্বজনরা মেয়ের বাড়ি ঘর দেখতে গেলো। বিবাদ বাধলো মেয়ের নানার কথায়। যে বিয়ে করবে, পাত্রী সে দেখবে। অন্য পুরুষ পাত্রী দেখা জায়েজ নেই। এটা সুন্নত বিরোধী। নানার কথার যুক্তি আছে। আরও দুই ঘণ্টা অপেক্ষা। সকল অনুষ্ঠানিকতা শেষ। শুধু পাত্রী দেখার অপেক্ষায়। অবশেষে নারীদের সহযোগিতায় পাত্রী দেখা শেষ। শুক্রবারের পরের বুধবার মেয়ের পক্ষ আমাদের বাড়ি আসলো। ১০ বছরের ছোট শ্যালক তুষারসহ সাড়ে ১২জন। সবাই পুরুষ। যোহরের নামাজ শেষ করে সবাই উঠান আর ঘরবাড়ি দেখতে লাগলো। জমি, পুকুর কি আছে, তাও তালিকার বাইরে নয়। এরপর দুপুরের খাবার। নয়া আত্মীয়। সবাইকে আপ্যায়ন করলাম। এবার পাত্রকে দেখার পালা। পাত্র আমি নিজেই। মনে মনে ভাবলাম, পাত্র দেখার কী আছে? গত এক ঘণ্টা সবাইকে অপ্যায়ন করলাম। নিয়ম রক্ষার জন্য পাঞ্জাবি-টুপি পরে সবার সামনে গেলাম।
মাথা কী নিচের দিকে দিয়ে বসে থাকবো, নাকি সামনে তাকাবো সেটা বুঝতে পারছি না। কারণ এটা ছিলো জীবনের প্রথম বিয়ে!
এরই মাঝে মেয়ের ককাতো ভাই প্রশ্ন করতে লাগলেন, নাম কি? পড়া শোনা কী? ইত্যাদি। অবিবাহিত ছেলের এসব প্রশ্ন শুনে মনে মনে বললাম, আগে নিজে বিয়ে করো মিয়া!
হঠাৎ আমার বাবা বললেন, সবাইকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতাম। সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত মুখস্ত শোনালাম। এবার মুরব্বিরা একজন অন্যজনকে বলে প্রশ্ন করার জন্য। ১২জনের নানা প্রশ্ন। সব মনে নিলাম। আমি সাধারণ ভাবে হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে বসে আছি। মনে হয় প্রশ্ন আর নেই।
এরই মাঝে মেয়ের কাকা গাজী শাহজাহান বললেন, কি করেন? বললাম- সাংবাদিকতা করি। আবার প্রশ্ন – কোন পত্রিকা? বললাম দৈনিক আমাদের কুমিল্লা, সাপ্তাহিক আমোদ। কাকা বললেন, আমোদ অনেক পুরনো পত্রিকা। আমি আমোদ পড়ি। মনে মনে শুকরিয়া করলাম। যাক একজন পাঠক পাওয়া গেলো।
আপনার নিউজ কী নামে ছাপা হয়? বললাম, আবু সুফিয়ান রাসেল। পুরো গাল ভর্তি এক হাসি দিয়ে কাকা বললেন, হ্যাঁ, আপনার বেশ কিছু রিপোর্ট পড়ছি। তখন বুকে সাহস পেলাম। সেদিন ঘরে আমোদ ছিলো না। নয়তো দেখিয়ে দিতাম। ১২ জনের সাথে বাবা আর আমি। আমার পেছনে জেঠাতা ভাই ইব্রাহীম। কানে কানে বললাম, পাশের রুমে আমার মানিব্যাগ আছে। সেটা দেন। মানিব্যাগ থেকে বের করে তিনটা ভিজিডিং কার্ড তিনজনকে দিলাম। কাকা তখন আমোদ-এর লোগোর দিকে তাকিয়ে আছে। এরপর কাকা বললেন, আপনাদের আর কোন কথা আছে নি? বুঝলাম, কাকা আমোদ-এর প্রতি অনেক শ্রদ্ধাশীল। সবাই চুপ। কাকা ধরে নিয়েছে, কারো প্রশ্ন নাই। কাকা বললেন। এবার তাহলে আমরা কথা আগাতে পারি? বুঝলাম- চূড়ান্ত হয়েছে। সবাইকে সালাম দিয়ে আমি পাশের রুমে চলে গেলাম।

এরপর কথা উঠলো দেনমোহর নিয়ে। ছয় লাখ, ১০ লাখ, ২০ লাখ পর্যন্ত প্রস্তাব। কেউ বলে, সামাজিকতার জন্য দেনমোহর দরকার। কম হলে হবে না। বহু কথা।
আমার বড় ভাই বলে উঠলো মেয়ের নানা কই? মোহরানাটা সুন্নত হিসাবে করবো। অন্য একজন রেগে বললেন, যারা এখনো নিজের দেনমোহর দেননি। তারা এ বিষয়ে কথা বলবেন না। এক বাক্যে সবাই চুপ। তিনি আবার বললেন, মোহরানা যা ছেলের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব, সে পরিমাণ হিসাব করেন।
বিয়ের তারিখ নিয়ে আলোচনা। কেউ বলে, তিন মাস পর মেয়ে কাকা বিদেশ থেকে আসবে। কেউ বলে, পরে চিন্তা করে জানাবো। বহু কথার পর আমার আঙ্কেল মুফতি আলী আকবর ফারুকী বললেন- মেয়ের বাবা কি বলে? তিনি বললেন, সবাই যা বলে তা। আজ বুধবার, এ শুক্রবার বিয়ে। পাত্র, পাত্রের বাবা আর দু’জন সাক্ষী যাবে। অনুষ্ঠান মেয়ের কাকা দেশে আসলে করবেন।
বিয়ে হয়ে গেলো। আমিও এখন সে বিজ্ঞানীর কথা ভাবি। আর গর্ববোধ করি সাপ্তাহিক আমোদ নিয়ে। একাদশ শ্রেণিতে পড়েছিলাম। পাওয়ার অব দ্যা মিডিয়া। তখন বুঝনি। নিজের বিয়েতে বুঝলাম। সাপ্তাহিক আমোদ-এর পাওয়ার। আমোদ সাংবাদিক বলার পর বিয়ে ফাইনাল। এ সুখস্মৃতি মনে থাকবে অজীবন। ৬৯ বছরে আমোদ। শতবর্ষেও আমোদিত হতে চাই এ ভালোবাসায়। আমোদ থাকবে, শতাব্দীর পর শতাব্দী!.
লেখক: সাংবাদিক।