‘ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অতি উৎসাহ সন্দেহজনক’

inside post
গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা এম.এ মতিন বলেছেন, দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএম’র বিপক্ষে মত দিলেও নির্বাচন কমিশন তাদের কর্মপরিকল্পনায় পক্ষে মত দেয়া দলের সংখ্যা বেশি দেখিয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ইসির সাথে সংলাপে লিখিত প্রস্তাবনার ৯ দফার কোথাও ইভিএম এর পক্ষে মত দেয় নি। অথচ, নির্বাচন কমিশন ইসলামী ফ্রন্টের লিখিত প্রস্তাবনাও পাল্টে দিয়ে হঠকারিতার আশ্রয় নিয়েছে। যেখানে লিখিত প্রস্তাবনা পাল্টে দিচ্ছে, সেখান ভোটের ফল যে পাল্টাবে না, তার নিশ্চয়তা দিবে কে? এতে করে নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট হচ্ছে। বিশেষ একটি দলকে সন্তুষ্ট করার জন্য ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অতি উৎসাহ সন্দেহজনক। তিনি আরো বলেন, সারা বিশ্বে বর্তমানে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। আমাদের দেশ এর ব্যতিক্রম নয়। বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি, কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে আমদানি নানা পণ্যে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। দেশের স্বার্থে বিপরীত পদক্ষেপ নেয়ারও ঘোষণা দিয়েছে কিছু দেশ। অন্যদিকে, আমাদের ইসি জাতির এ সংকটকালে ইভিএম কেনার জন্য সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি বাজেট দিয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য। কার স্বার্থে ইসি কাজ করছে? প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন- ইভিএম ক্রয়ের এ জনস্বার্থ বিরোধী প্রকল্পটি বাতিল করতে হবে।
 দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের যাঁতাকলে পিষ্ট করে জনগণকে নীরবে হত্যা করা হচ্ছে। দেশে নীরব দূর্ভিক্ষ চলছে। সর্বসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে সব দ্রব্যমূল্য। এমতাবস্থায় বিক্ষুদ্ধ জনতা যে কোন সময় গণবিস্ফোরণে রূপ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার ভিত নাড়িয়ে দিতে পারে। তাই জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ হওয়ার জন্য তিনি বর্তমান সরকারকে আহ্বান জানান।
 এমএ মতিন পঞ্চগড়ে করতোয়ায় নৌকাডুবিতে ৬৮ জনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়ে বলেন, নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি। অতিরিক্ত যাত্রী বহন কঠোরভাবে দমন করতে হবে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সাথে সাথে যাত্রীদের নিজেদেরকেও সচেতন হতে হবে। কারণ ঈদ বা পুজাপার্বণে ঘরমুখো মানুষের ঢল দেখে বোঝা যায় যে, যাত্রীদেরও দোষ কোনো অংশে কম নয়। সর্বক্ষেত্রে সবার সচেতনতা নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি , দেশ-জাতির কল্যাণে ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংস সুফিবাদি উদার মতাদর্শের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন। আউলিয়া কেরামগণ ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত এর নীতি-আদর্শ প্রচার-প্রসার করে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। ইসলামে প্রত্যেক সম্প্রদায় নিরাপদ। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টও আহলে সুন্নাতের আদর্শ সমুন্নত রেখে জনগণের অধিকার আদায়ে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের নব-নির্বাচিত কেন্দ্রীয় পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠান গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইংরেজি বুধবার বিকাল ৩টায় পল্টন মোড়স্থ ফেনী সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা এম.এ মতিনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মান্নান। তিনি সুন্নীয়তের স্বার্থ রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বৈদেশিক শক্তিকে সন্তুষ্ট করতে ব্যস্ত। আমাদেরকে দেশবাসীকে সন্তুষ্ট করতে মনোযোগী হতে হবে। এ নির্বাচনেই নির্ধারণ হবে জাতির ভবিষ্যত। তিনি খোলাফায়ে রাশেদীনের উত্তম ব্যবস্থা সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে সবাইকে সুন্নীয়তের শ্বাশত বিধানকে সমুন্নত রাখারও আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা স.উ.ম আবদুস সামাদ বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমার সীমান্তে তাদের সেনাবাহিনীর রকেট হামলা, গোলাগুলি ও বিভিন্ন অপতৎপরতা নিন্দনীয়। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ। মিয়ানমারের পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি হত্যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালেও দিনাজপুর সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক এক বাংলাদেশি তরুণকে গুলি করে হত্যা করেছিল। সীমান্ত হত্যা বন্ধে সরকারের ভূমিকা যথার্থ নয়। সরকারের দৃঢ় পররাষ্ট্রনীতি ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ দেশবাসী প্রত্যাশা করে।তিনি বলেন, শিক্ষার পরিবেশ বিনস্টকারী ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীদের শাস্তির ব্যবস্থা না করলে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন,অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিগত ১৮ জুলাই নির্বাচন কমিশনকে ৯ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেছিল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। প্রস্তাবনার আলোকে নির্বাচনকালীন সময়ে  স্থানীয় সরকার, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও অর্থ – এ ৫টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের অধীনে সাংবিধানিক পন্থায় আনার ব্যবস্থা করা না হলে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কোন দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। আজ্ঞাবহ ও পরাধীন নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম হবে না।
দপ্তর সচিব মাওলানা আবদুল হাকিমের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মাঝে বক্তৃতা করেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা আবু ছুফিয়ান আল কাদেরী, আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম হারুন, গোলামুর রহমান আশরাফ শাহ, মাওলানা অধ্যক্ষ আবু জাফর মানুদ্দিন, সৈয়দ মোজাফফর আহমদ মুজাদ্দেদী, আলহাজ্ব মাছুম বিল্লাহ মিয়াজী,এডভোকেট ইসলাম উদ্দিন দুলাল, মাষ্টার আবুল হোসাইন, কাজী সোলায়মান চৌধুরী,এম এ মাবুদ, রেজাউল করিম তালুকদার, এনামুল হক, সৈয়দ মনিরুল ইসলাম আশরাফী, ফজলুল করিম তালুকদার প্রমূখ।
অভিষেক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহি পরিষদ ও মজলিশে শূরা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়ে শপথ পূর্বক অভিষিক্ত হন। শপথ বাক্য পাঠ করান, সদ্য বিদায়ী চেয়ানম্যান ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার আল্লামা এম এ মান্নান।
আরো পড়ুন