কুমিল্লার গ্রামের উঠানে মুড়ির উৎসব
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
চৈত্রের খরতাপ। তার মধ্যে দুপুরে কাঠের চুলা জ্বালিয়ে মুড়ি ভাজছেন নারীরা। কেউ
মুড়ি চালুন দিয়ে পরিস্কার করছেন। পুরুষরা মুড়ি বস্তায় ভরে মুখ সেলাই করছেন।
শনিবার কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার
লক্ষীপুর গ্রামের দুর্গাচরণ পালের বাড়িতে এই দৃশ্য দেখা যায়। এমন দৃশ্য দেখা
যাবে গ্রামের ৪০ পরিবারে।
সূত্রমতে,মুসলিম সম্প্রদায়ের রমজান মাস শুরু। রোজা পালন শেষে সন্ধ্যায় ইফতার।
ইফতারে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর সাথে থাকবে মুড়ি। লক্ষীপুর গ্রামে চলছে
রমজান মাসের জন্য মুড়ি ভাজার ব্যস্ততা। এই গ্রামে শত বছর ধরে মুড়ি ভাজা
চলছে। কারো সাথে কারো কথা বলার সুযোগ নেই। পরিবারের ছেলে বুড়ো সবাই
ব্যস্ত। গ্রামের পাশে পিকাপ ভ্যানে ও ট্রাকে তুলে দেয়া হচ্ছে মুড়ির বস্তা। সেগুলো
নিয়ে যাওয়া হচ্ছে,কুমিল্লা,চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও ঢাকা।
ওই গ্রামের নারী খোদেজা বেগমসহ ১০জন নারী দুর্গাচরণ পালের বাড়িতে
প্রতিদিন মুড়ি ভাজেন। রাত ২টা থেকে দিনের ২টা পর্যন্ত তারা কাজ করেন।
দুর্গাচরণ পাল বলেন,তারা সারা বছর মুড়ি ভাজেন। হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা
রয়েছে। মুড়িতে শুধু লবণ পানি দেয়া হয়। এগুলো খেতেও সুস্বাদু। দাম একটু বেশি
হলেও সচেতন মানুষ হাতে ভাজা মুড়িই বেশি খোঁজ করেন। কুমিল্লায় আগে
বরুড়ার রামমোহন বাজার সংলগ্ন গোপালনগর ও দাদিসারে বেশি মুড়ি ভাজা
হতো। এখন শুধু লক্ষীপুরে বেশি ভাজা হয়। রোজার সময় তাদের মুড়ির চাহিদা বেশি।
তাই ব্যস্ততাও বেশি। তারা এখন গিগজ ও টাবি ধানের মুড়ি ভাজছেন।
ওই বাড়ির আরেক মুড়ি উৎপাদনকারী লক্ষণ পাল বলেন, গ্রামের ৪০ পরিবার প্রতিদিন
প্রায় ৮০ বস্তা মুড়ি ভাজেন। প্রতি বস্তায় ৪৫ কেজি মুড়ি থাকে। তারা পাইকারি
প্রতি কেজি ৮৫ টাকা বিক্রি করেন। খুচরা বাজারে তা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা
বিক্রি হচ্ছে। এবার চালের দাম কম হওয়ায় চাহিদা বেশি। আশা করছেন, এবার
মুড়িতে ভালো লাভ করতে পারবেন।
বরুড়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন,আমরা
ওই গ্রামের মুড়ি উৎপাদনকারীদের বিষয়ে খোঁজ নেবো। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে
আরো দক্ষ করা যায় কিনা সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।