কুমিল্লায় আগ্রহ বাড়ছে মেশিনে ধান লাগানো
কম খরচ বেশি ফলন, খুশি বুড়িচংয়ের কৃষক
অফিস রিপোর্টার।।
কুমিল্লার তিন উপজেলার প্রায় ৪০০ একর জমিতে এবার ট্রান্সপ্লান্ট রাইস মেশিনের সাহায্যে বোরো ধান রোপণ করা হচ্ছে। বুধবার কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় এই পদ্ধতিতে ধান চাষের উদ্বোধন করা হয়। উপজেলার শোভারামপুর গ্রামের কৃষক ওমর ফারুকের জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে মেশিনের মাধ্যমে ধান চাষের উদ্বোধন করা হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দশ মিনিটেই আমার ১৫ শতাংশ জমির ধান রোপণ হয়ে গেছে। এসময় গ্রামের শত শত কৃষক ও উৎসুক জনতা রোপণ পদ্ধতি দেখতে ভিড় করেন। কেউ ছবি তুলছে। কেউ ভিডিও করছেন। চলতি বোরো মৌসুমে বুড়িচং উপজেলাতে ১৫০ বিঘা জমিতে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হবে। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে খরচ কমবে। সাথে ফলন বাড়বে। এছাড়া পরিপক্ব ধান পেতে সময়ও কমে আসবে। এনিয়ে খুশি স্থানীয় কৃষকরা। এর আগে শোভারামপুর মাঠে রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বোরো ধানের সমলয়ে চাষাবাদের ব্লক প্রদর্শনীর উদ্বোধন ও কৃষক সমাবেশ উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভাপতিত্ব করেন বুড়িচং উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদা আক্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ বানিন রায়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উপসহকারি কৃষি অফিসার মো. মিজানুর রহমান ও ওমর ফারুক। উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. মোহাইমেনুল ইসলাম, ৯ নং ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওমর ফারুক ও ৮ নং ভারেল্লা উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইস্কান্দার আলী ভূঁইয়া।
বক্তারা বলেন, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে মাত্র ২৫-৩০ দিনের সঠিক বয়সের চারা রোপণ সম্ভব হয়। এতে ধানের জীবনকাল ১০-১৫ দিন কমে আসে। তাছাড়া মেশিনের সাহায্যে রোপণে সঠিক গভীরতায় চারা রোপণ সম্ভব হয়। যার কারণে প্রতি গুছিতে কুশির সংখ্যা বেশি হয়। সর্বোপরি ফলন ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
শোভারামপুর গ্রামের কৃষক শাহ আলম ভূঁইয়া জানান, আমি এবার দুই বিঘা জমি আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করব। দুই বিঘা জমি রোপণে আমার ন্যূনতম আট হাজার টাকা খরচ হতো। ্েখন আমার মাত্র দুই হাজার ৪০০ টাকা খরচ হবে। এতবারপুর গ্রামের কৃষক অহিদ মিয়া বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদ নিয়ে আমাদের মধ্যে ভুল ধারণা ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। রামপুর গ্রামের কৃষক ওমর ফারুক বলেন, আগে ধান রোপণে অনেক পরিশ্রম করতে হতো। আজ দশ মিনিটেই আমার ১৫ শতাংশ জমির ধান রোপণ হয়ে গেছে।
মোহাম্মদ এগ্রিকালচারাল মেশিনারিজের স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন জানান, প্রতি একর জমিতে ধান রোপণে আমাদের মাত্র আড়াই লিটার ডিজেল খরচ হয়। একর প্রতি আমরা মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকার খরচ নিই। যদি একসাথে বেশি জমিতে রোপণ করি, তাহলে খরচ নিই তিন হাজার টাকা।
বুড়িচং উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বানিন রায় বলেন, প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল এ এলাকার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা। আমরা তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। এখন তারা এ পদ্ধতিতে ধান চাষে আগ্রহী। এবার প্রণোদনার আওতায় থাকা ১০৯ জন কৃষক সুবিধা পাচ্ছেন। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে ৫০ একর জমি রোপণের উদ্দেশ্যে চার হাজার ৫০০ ট্রেতে চারা উৎপাদন করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, এবার কুমিল্লার বুড়িচং, লাকসাম ও সদর দক্ষিণ উপজেলার প্রায় ৪০০ একর জমিতে ট্রান্সপ্লান্ট রাইস মেশিনের মাধ্যমে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এতে ধান চাষের কারণে সময় কমে আসবে। জমিতে তিন ফসলের পরিবর্তে চার ফসল হবে।