কুমিল্লায় ৫২ বছর পর বধূবরণ
মাহফুজ নান্টু ।
ঠিক যেন সিনেমার গল্প। ৫২ বছর পর স্বামীর বাড়িতে এলেন বউ। আর সেই বউকে ধান-দুর্বা-ধর্মীয় রীতিনীতি আর উৎসবের আমেজে বরণ করলেন স্বজনরা। ঐতিহ্যের রসমলাই দিয়ে করালেন মিষ্টিমুখ। গত ২৩ জুলাই এমন বিরল ঘটনার স্বাক্ষী হলো কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার খেয়াস গ্রামের মানুষজন।
ওই বধুর নাম গীতা রানী সরকার। দেশ বিভক্তির সময় ভারতে চলে যান। সেখানে বসবাসকারী সুভাষ দাসের সাথে বিয়ে হয়। প্রয়াত সুভাষ দাস কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার খেয়াস গ্রামের বাসিন্দা। তিনিও দেশ বিভক্তির সময় ভারতে চলে যান।
গীতা রানী সরকারের বাবার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার চুনটা গ্রামে। সেখানে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া করেন গীতা সরকার। পরে দেশ ভাগের সময় ভারতের আগরতলায় চলে যান। ২৪ বছর বয়সে সুভাষ দাসের বিয়ে হয়।
সেখানে গীতা রানী সরকার ও সুভাষ দাশ বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার শুরু করেন। গীতা রানী সরকার ভারতে গিয়ে এম এ শেষ করেন। তারপর শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। তার মাঝেই বিয়ে করেন। তারপরেই স্বামী সন্তান সংসার আর চাকরি নিয়ে ব্যস্ত গীতা সরকার ঘুরে যেতে পারেননি স্বামীর ভিটেয়। জীবন সায়াহ্নে এসে মনে পড়লো নিজের স্বামীর বাড়ির কথা। ঘুরে দেখবেন -কথা বলবেন স্বজনদের সাথে। যেই কথা সেই কাজ। গীতা সরকারের দুই মেয়ে।
গত ২৩ জুলাই গীতা সরকার নিজের ছোট মেয়ে মেয়েকে শ্রীমতি শংকরী দাশ নিয়ে আসেন বাংলাদেশে। মেয়ে শংকরী দাশ ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই জেলার জেলা ও দায়েরা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
৫২ বছর পরে স্বামীর পৈত্রিক বাড়িতে আসলেন গীতা রানী সরকার ও তার মেয়ে শংকরী দাস। সেখানে উৎসবের আমেজে বধূকে বরণ করে নিলেন স্বজনরা। পরদিন মা-মেয়ে ঘুরে দেখেন তাদের গ্রাম। কথা বলেন স্বজনদের সাথে।
গীতা রানী সরকার বলেন, স্বামী সন্তান সংসার চাকরি নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তাই কখনো ঘুরে যেতে পারিনি স্বামীর ভিটায়। আজ আমার স্বামী নেই। তবে এই বয়সে এসে বার বার মনে হতে লাগলো আমি বাংলাদেশে ফিরে যাই। আমার স্বামীর বাড়ির স্বজনদের সাথে কথা বলি। আমার মনটা হাল্কা হবে। আমি মেয়েকে নিয়ে চলে আসি। চোখের পানি মুছতে মুছতে গীতা রানী সরকার বলেন, আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাকে যে আদর করলো আমাকে যেভাবে বরণ করলো এক জীবনে আমি স্বার্থক। তারপর গীতা রানী স্বামীর আত্মীয়-স্বজন নিয়ে দীর্ঘ স্মৃতিচারণ করলেন। এ সময় গীতা রানী সরকারের প্রয়াত স্বামী সুভাষ দাশের বন্ধুদের স্বজন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সেসব স্মৃতিচারণ শুনেন।
গীতা রানী সরকারের মেয়ে খোয়াস জেলার জেলা ও দায়রা জজ শংকরী দাশ বলেন, বাবার বাড়ি এসেছি। খুব ভালো লাগছে। আসলে নিজের বাড়ি আসলে যে অনুভূতি হয় তা বলে প্রকাশ করা যাবে না। সবার উদ্দেশ্য শংকরী দাশ বলেন, আপনারা আগরতলা আমার বাড়িতে যাবেন।
বুধবার গীতা রানী সরকার তার মেয়ে শংকরী দাসকে নিয়ে চলে যাবেন ভারতে।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভাষিস ঘোষ বলেন, সেদিন আমি উপস্থিত ছিলাম। আমি দেখলাম একজন বধূকে কিভাবে আপনজনেরা বরণ করে নেন। স্বামীর ভিটায় এসে স্বজনদের এমন আয়োজন দেখে আনন্দে আপ্লুত হয়ে যান গীতা রানী সরকার। বিষয়টা আমার কাছেও অন্য রকম ভালো লেগেছে।