কুমিল্লা নগরীতে বাড়ছে মানহীন হাসপাতাল

 

আবু সুফিয়ান রাসেল।।

কুমিল্লায় বাড়ছে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। গত এক দশকে নগরীতে দ্বি-গুণেরও বেশি হাসপাতাল বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বাড়লেও এসব প্রতিষ্ঠানের সেবার মান, চিকিৎসা ব্যয় ও দক্ষ জনবল নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। নগরীতে দেড় শতাধিক হাসপাতালের লাইসেন্স থাকলে এর সংখ্যা হবে দুই শতাধিক। কিছু কথিত হাসপাতাল রিকশা চালক দালাল নিয়োগ করে। তারা বাস টার্মিনাল বা রেল স্টেশন থেকে রোগী সংগ্রহ করে। অসচেতন রোগী ভালো হাসপাতালের কথা বললেও তারা মানহীন হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকের বদলে স্টাফ দিয়ে রোগী দেখে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্রমতে, নগরী ও কাছাকছি এলাকায় ১৫২টি লাইসেন্স প্রাপ্ত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও হোমনা ১৩টি, মেঘনা ২টি, বুড়িচং ১৩টি, ব্রাহ্ম্নণপাড়া ৮টি, তিতাসে ১৩টি, দেবিদ্বারে ২৯টি, মুরাদনগর ১৯টি, দাউদকান্দি ৪৮টি, চান্দিনা ২৭টি, চৌদ্দগ্রাম ১৮টি, বরুড়া ১৬টি, নাঙ্গলকোট ১১টি, সদর দক্ষিণ ১১টি, লাকসাম ২২টি ও মনোহরগঞ্জে ২টিসহ কুমিল্লা জেলায় ৪০৪টি বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

কুমিল্লা রয়েল হাসপাতালের পরিচালক মো. রাসেল বলেন, শহরের অলিতে গলিতে হাসপাতাল। প্রতিযোগিতা বাড়ছে, সেবার মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, কুমিল্লা নগরীতে ভারতের সোনামুড়া, আগরতলাসহ ত্রিপুরা অঞ্চলের প্রচুর রোগী চিকিৎসা সেবার জন্য আসেন। তারা কোলকাতা থেকে সহজে কুমিল্লায় আসতে পারেন। এখানে সেবার তুলনায় ভারতের হিসাবে খরচ অনেক কম। হাসপাতাল তৈরির পর কাগজপত্র পর্যালোচনা করা হয়। যদি কোন কোন হাসপাতাল ভুল করে তাকে প্রথমবার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। তবে হাসপাতাল বন্ধ করে দিলে রোগী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেকার হয়ে যাবে।

কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসেন বলেন, কুমিল্লা একটি বড় জেলা । যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো। এখানে সরকরি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থাকার কারণে দক্ষ চিকিৎসক রয়েছেন। এতে কুমিল্লাকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল-ক্লিনিকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিযোগিতা থাকায় সেবার মানও বাড়ছে। আমরা চেষ্টা করছি এ ধারা দিন দিন বৃদ্ধি করার জন্য। দক্ষ জনবল তৈরির জন্য সময়ের প্রয়োজন। যে তুলনায় হাসপাতাল সে তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালে জনবল কম আছে।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.সফিকুল ইসলাম বলেন, নগরীর হাসপাতাল, স্কুল ও বড় শপিংমল গুলোকে পরিকল্পিত ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হাসপাতালে যথাযথ পার্কিং এর ব্যবস্থা রাখতে হবে। নগরীর হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ব্যস্ত নগরীতে রোগী প্রবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে আইন মানা জরুরি।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. মুজিবুর রহমান জানান, হৃদরোগ, কিডনি ও স্ট্রোকের চিকিৎসকের কুমিল্লায় সংকট আছে। আইসিইউ আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেবার মান নিশ্চত করা যায় তাহলে কুমিল্লায় বিশ্ব মানের চিকিৎসা সেবার তেমন বাধা থাকবে না। কুমিল্লায় বেসরকরি চিকিৎসা সেবার বিপ্লব বলা যায় গত এক দশক। সেটির শুরু কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে। এ সময়ে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। একই সাথে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানও বেড়েছে। তবে একটি কথা এসকল প্রতিষ্ঠান সেবার থেকে ব্যবসার চিন্তাটা বেশি করে থাকে। আমাদের মহাসমস্যা হলো দালাল ও কমিশন বাণিজ্য। যদি এ চক্র থেকে বের হওয়া যায়, তবে কুমিল্লায় রোগীরা কম খরচে আরও ভালো সেবা পাবে। সার্বিক চিকিৎসার জন্য কুমিল্লায় একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রয়োজন।