কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক; ফোরলেনে ব্যয় কমেছে ১৪১ কোটি টাকা

তৈয়বুর রহমান সোহেল ।।
কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ককে ফোরলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজে প্রায় ১৪১ কোটি টাকা ব্যয় কমানো হয়েছে। কুমিল্লার টমছমব্রিজ থেকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ আঞ্চলিক মহাসড়কটিকে ফোরলেনে উন্নীতকরণের জন্য বরাদ্দ ছিল দুই হাজার ১৭০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ব্যয় কমিয়ে ২০৩০ কোটি টাকা করা হয়েছে। কাজ শেষ হতে হতে এ ব্যয় আরও কমে আসবে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী রেজা-ই-রাব্বী।

inside post

এদিকে ২০২০ সালের জুন মাসে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ইতিমধ্যে প্রায় এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। সম্প্রতি প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত টেনে নেওয়া হয়েছে।

সওজ কুমিল্লা সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কটির কুমিল্লা অংশের দৈর্ঘ্য ৪৪ কিলোমিটার। ইতিমধ্যে সড়কের ৪২ কিলোমিটার অংশের ফোরলেনে সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয়েছে। বাগমারা অংশে দুই কিলোমিটার সড়কের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা ছিল। সম্প্রতি ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা কেটে গেছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দের কথা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে বাকি দুই কিলোমিটার অংশের সম্প্রসারণ কাজে হাত দেওয়া হবে।

অপরদিকে ৪২কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ হলেও পুরোপুরি কাজ শেষ হয়েছে সড়কের ৬০শতাংশ অংশের। ২০১৯ সালে কাজ খুব দ্রুত গতিতে অগ্রসর হয়। ২০২০ সালে করোনার প্রভাব শুরু হওয়ার পর কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। যে পরিমাণ কাজ সমাপ্ত হওয়া বাকি আছে, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও গতি থাকলে এক বছরের কম সময়ের ব্যবধানে কাজটি শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় নির্দিষ্ট সময়ে এর কাজ শেষ করা যায়নি।

২০১৭ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। ২০১৪ সাল থেকেই সড়কটি চলাচলের জন্য প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সামান্য বৃষ্টিতে বড় বড় গর্তগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে পুকুরের রূপ ধারণ করত। দীর্ঘ এ সময়ে সড়কটিতে বেশকিছু দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। প্রাণহানির ঘটনাও ছিল অনেক। বর্তমানে সড়কের বিভিন্ন অংশ, বিশেষ করে টমছমব্রিজ, জাঙ্গালিয়া, বাগমারা বাজার, হরিশ্চর, আলীশ্বর, লাকসাম বাইপাস এলাকার যেসব অংশে কাজ চলছে-ওইসব অংশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে। দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের অনেক যাত্রী বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছে। এতে যাত্রী কম হচ্ছে। যাত্রী কম থাকায় ও সড়কের কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়াতে ভাড়াও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।

উপকূল বাস সার্ভিসের পরিচালক অধ্যাপক কবির আহমেদ জানান, ‘সড়কটি খারাপ হওয়ায় যাত্রীরা ফেনী হয়ে নোয়াখালী ও লক্ষ¥ীপুর যাচ্ছে। এতে যাত্রী কমে গেছে। খুব প্রয়োজন না হলে কেউ এই সড়কে যাতায়াত করতে চান না। সড়ক ভাঙা হওয়ায় ঘন ঘন গাড়ি বিকল হচ্ছে। দ্রুত সড়কটি মেরামত করা না হলে গাড়ি চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলা ছাড়াও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী এ সড়কটি অর্থনৈতিক দিক থেকেও অতি গুরুত্বপূর্ণ। কুমিল্লা থেকে লালমাই পর্যন্ত (বিজয়পুরে প্রায় ১০০মিটার বাদে) ফোরলেনের কাজ শেষ হয়েছে। এতে কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর ও কুমিল্লার চারটি উপজেলায় যাতায়াতে প্রায় ৩০-৪৫মিনিট সময় কমে এসেছে। দ্রুত সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে অন্যান্য জেলার সাথে যোগাযোগে সময় কমে আসবে, কমবে দুর্ঘটনাও।

সওক ও জনপথ অধিদপ্তর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী রেজা-ই-রাব্বি জানান,‘ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতার কারণে প্রকল্পটি শেষ হতে দেরি হচ্ছে। আশা করি বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজটি পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।’

আরো পড়ুন