কোন পথে বাংলাদেশের রাজনীতি



মনোয়ার হোসেন রতন।।
জাতীয় রাজনীতিতে মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে বিরোধী জোটভুক্ত দলগুলোর অবস্থান এক না হয়ে বরং স্পষ্ট মতভেদে পরিপূর্ণ। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপি নামের তিনটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে এনসিপি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংস্কারপন্থী মনোভাব প্রকাশ করেছে, যা দলটিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যতিক্রম হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
নেতৃত্ব ও জবাবদিহিতায় মতভেদ
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মেয়াদ নির্ধারণ, সংসদ সদস্য না হলে প্রধানমন্ত্রী না হওয়া এবং দলীয় প্রধানের পদ থেকে পৃথক করার প্রস্তাবে এনসিপি একমত হলেও বিএনপি ও জামায়াত এর বিরোধিতা করে। এনসিপি মনে করে, নেতৃত্বে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হলে এই সংস্কারগুলো সময়োপযোগী।
নির্বাচন ও বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা চায় এনসিপি
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (NSC) গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন, অ্যাটর্নি জেনারেল, মহাহিসাব নিরীক্ষকসহ গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে চায় এনসিপি। তবে বিএনপি ও জামায়াত এ প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করেছে।
বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এনসিপি ও জামায়াত একমত হলেও বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করেছে, যা বিচার বিভাগকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করার পথে অন্তরায় হতে পারে।
গণভোট ও নারীর অংশগ্রহণ প্রশ্নে দুই ধারায় বিভক্তি
সংবিধান সংশোধনে গণভোট চালু, সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচন এবং দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের মতো প্রস্তাবগুলোকে বিএনপি ও জামায়াত সরাসরি নাকচ করেছে। বরং এনসিপি গণতান্ত্রিক পরিসর সম্প্রসারণে এইসব প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছে।
রাষ্ট্রের কাঠামো ও বহুবাদী ধারা
রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে নির্বাহী ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং নীতিনির্ধারণে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মডেল হিসেবে এনসিপি একটি নতুন রূপরেখা দিয়েছে, যা আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
নীতিগতভাবে বহুবাদ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে এনসিপি ও জামায়াত একমত হলেও বিএনপি এর ঘোর বিরোধিতা করেছে, যা তাদের একনায়কতান্ত্রিক রাজনীতির প্রবণতার ইঙ্গিত বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
সার্বিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বিএনপি ও জামায়াত অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাবেই নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে, এনসিপি সংস্কারপন্থী ও গণমুখী রূপরেখায় স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে একটি বিকল্প ধারার প্রতিনিধিত্ব করছে। ক্ষমতাসীন দলের অনেক বিষয়ে অবস্থান অনির্ধারিত বা অস্পষ্ট।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভবিষ্যৎ অনেকাংশেই নির্ভর করছে কোন দল রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করে তার উপর।