ক্লাশ চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন ছাত্রীরা!

জরায়ুর টিকাকে দুষছেন অভিভাবকেরা

inside post

টিকার সাথে  অসুস্থ হওয়ার সম্পৃক্ততা নেই: সিভিল সার্জন

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কাইতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ক্লাশ চলাকালীন সময়ে শ্রেণিকক্ষে বারবারই ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়ছেন। গত দুই সপ্তাহে অন্তত তিনবার বিদ্যালয়টিতে ৪০ জন শিক্ষার্থী ‘অসুস্থ’ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় অভিভাবকদের কারও কারও অভিযোগ, ‘জরায়ু ক্যান্সারের টিকা নেয়ার পর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকেই বারবার ছাত্রীরা ক্লাশে ‘অজ্ঞান’ হয়ে পড়ছে।’
তবে জেলার সিভিল সার্জন এরকম অভিযোগ অস্বীকার করে জানান,’মূলত এটি ‘গণ মনস্তাত্ত্বিক রোগ’। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এ রোগে মৃত্যু ঝুঁকি নেই।’
খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত শত বছরের প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাইতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাশ চলাকালীন সময়ে হঠাৎ করে ছাত্রী অসুস্থ হওয়ার প্রথম ঘটনাটি ঘটে গত ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার। ওইদিন দুপুরে ক্লাশে আকস্মিকভাবে ১০/১২ জন ছাত্রী প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওইসময় তাৎক্ষণিকভাবে অসুস্থ ছাত্রীদেরকে দ্রুত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়।
এ ঘটনার পর পুরো এলাকায় ভীতি ও আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
স্কুলের শিক্ষকরা জানান, এ ঘটনার মাত্র মাত্র দুদিন পর ১৭ নভেম্বর রবিবার আবারও প্রায় ১৫ জন এবং সর্বশেষ গত ২৮ নভেম্বর ১৫ জনের মতো ছত্রী একইভাবে ক্লাশে অসুস্থ হয়ে হাসপতালে চিকিৎসা নেয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এনামুল হক বলেন,’কেন যে বারবার ক্লাশে এভাবে ছাত্রীরা ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়ছে, আমরা ঠিক বুঝতে পারছিনা। বারবার এরকম ঘটনার পর প্রশাসনের নির্দেশে আমরা ইতিমধ্যে কয়েকদিন স্কুল বন্ধও রেখেছিলাম। কিন্তু স্কুল খোলার পর আবারও ক্লাশে গত বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) প্রায় ১৫ জন ছাত্রী আগের মতো প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়ে।’
তবে নাছিম সরকার (শিক্ষক) নামের স্থানীয় একজন অভিভাবক ক্ষোভের সঙ্গে জানালেন,’দুই সপ্তাহে এ পর্যন্ত ৩ বারে ৪০ জনের মতো ছাত্রী অসুস্থ হল। অথচ এ পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো মেডিকেল টিম স্কুলটি পরিদর্শন করেনি। পরিদর্শন করেননি বিদ্যালয়ের সভাপতি (ইউএনও) সহ সংশ্লিষ্ট কেউই। এটি খুবই দু:খজনক।’
তবে বিদ্যালয়টির সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব চৌধুরী এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,’পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরা সর্বক্ষণ কাজ করে যাচ্ছি। স্বয়ং মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি অবগত আছে। আমরা বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেই দু’দিন স্কুল বন্ধ রেখে স্কুলে গণসচেতনতা বিষয়ক কর্মশালাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও জানান,’কাল রবিবার (১ ডিসেম্বর) ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম স্কুলটিতে পাঠাচ্ছি।’
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন মো. নোমান মিয়া আজ শনিবার সকালে বলেন,’এটি হল মূলত ‘গণ মনস্তাত্ত্বিক রোগ’। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা সামনে রেখে ‘ডিপ্রেশন’ থেকে এ সমস্যা সাধারণত হয়ে থাকে। তবে সাময়িক শ্বাসকষ্ট হলেও, এ রোগে মৃত্যুর কোন ঝুঁকি নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,’জরায়ুর টিকা দেয়ার সাথে এরকম অসুস্থ হওয়ার কোন সম্পৃক্ততা নেই। কারণ জরায়ুর টিকা দেয়া হয়েছে ২২ অক্টোবর। তাই টিকায় কোন সমস্যা থাকলে, এতদিন পর এমন প্রতিক্রিয়া কখনই হত না।’

আরো পড়ুন