খালি হচ্ছে নগরীর বাসা (সম্পাদকীয় ৯জুলাই ২০২০সংখ্যা)

প্রবাসী অধ্যুষিত কুমিল্লা জেলা। গ্রামের বাড়িঘর ছেড়ে সন্তানদের ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর জন্য যারা কুমিল্লা নগরীতে বাসা নিয়েছেন, করোনার প্রভাবে স্বামীর কম উপার্জন বা উপার্জনহীনতায় ওইসব বাসাবাড়ি ছেড়ে তারা আবার ফিরে যাচ্ছেন গ্রামে। অনেকে আবার টিকে থাকার জন্য কম ভাড়ার বাসা খুঁজছেন। অনেকে টিকে থাকার আশা ছেড়ে দিয়ে মালামাল নিয়ে চলে গেছেন গ্রামে। আবার বাসা বাড়ির ভাড়া, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল দিয়ে কতদিন জীবন চালিয়ে নিতে পারবেন, তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদে উল্লেখ করা হয়,কুমিল্লা নগরীর নজরুল এভিনিউতে ১৩হাজার টাকা বাসা ভাড়া দিয়ে থাকেন এক নারী। সন্তান কুমিল্লা জিলা স্কুলে পড়ার সুবাদে কাছাকাছি বাসা নিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দে দিন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু ওমান প্রবাসী স্বামীর আয় একেবারে কমে যাওয়ায় তিনি বাসা ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনি জানান, হয় কম ভাড়ার বাসা নিব, তাতে সুবিধা করতে না পারলে চলে যাব গ্রামে।
ঠাকুরপাড়ার আরেক নারীর স্বামী কুয়েত প্রবাসী। তিন সন্তান নিয়ে কোনোভাবে দিন কাটে। দুই সন্তান পড়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ও নবাব ফয়জুন্নেছা স্কুলে। স্বামীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে। লুকিয়ে কাজ করেন। করোনার এ সময়ে লুকিয়ে কাজ করে কতদিন সন্তান-সন্ততির জন্য অন্ন জোগাড় করবেন, এ চিন্তায় ঘুম হয় না ওই নারীর। এদিকে বাসা ছেড়ে গ্রামে চলে গেলে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে সন্তানদের ভবিষ্যত। এমন দোদুল্যতায় দিন কাটছে তার। তবে আর দুই-একমাস এভাবে চলতে থাকলে বাসা ছেড়ে গ্রামে চলে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
কুমিল্লা নগরীতে প্রবাসী পরিবার, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারী, শিক্ষক ও বাড়ির মালিক ছাড়াও নানা পেশার মানুষ বসবাস করে। পুরো জেলার প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের বসবাস কুমিল্লা শহরে। করোনার এ দু:সময়ের প্রভাব অনেক বেশি পড়েছে প্রবাসী পরিবার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক,হোটেল রেস্তোরাঁয় কাজ করা শ্রমিক ও বাসা মালিকদের ওপর। এতে প্রবাসী পরিবার ও বেসরকারি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ইতিমধ্যে বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে পাড়ি জমিয়েছেন। সে সাথে বিভিন্ন বাসায় ফ্ল্যাট নিয়ে থাকা ব্যাচেলরদের বড় একটি অংশ বাসা ছেড়ে চলে গেছেন।
নগরীর বাগিচাগাঁও, ঠাকুরপাড়া, রানীর দিঘীর পাড়, রেসকোর্স, ঝাউতলা ও নজরুল এভিনিউসহ অভিজাত শহরের এলাকায় সবচেয়ে বেশি বাসা খালি হয়েছে। তুলনামূলক বেশি আয়-রোজগার করা মানুষের বসবাস ছিলো এসব এলাকায়। এদিকে প্রবাসী পরিবার ও ইপিজেড শ্রমিকদের ভরসাস্থল হিসেবে খ্যাত আশ্রাফপুরে সবচেয়ে বেশি বাসা খালি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জুলাই-আগস্টে খালি হয়ে যেতে পারে নগরীর বিপুল সংখ্যক বাসা।
আমরা মনে করি, এধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য বাসা মালিক ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন। দুই পক্ষের ছাড় দেয়ার মানসিকতায় সংকটকাল অতিক্রম করা সম্ভব হবে।