গাছ ভর্তি বাবুই পাখির জন্য মমতা

 

চার শতাধিক বাবুই পাখির জন্য একজন কৃষকের ভালোবাসা মুগ্ধ করেছে সবাইকে। কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার রামপুর গ্রাম। এই গ্রামের কৃষক মো. রিপন মিয়া পাখিদের প্রতি এই ভালোবাসা দেখান। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

সংবাদে উল্লেখ করা হয়,রামপুর গ্রামের মূল সড়কের পাশে একটি দীর্ঘ তালগাছ। গাছের মাথায় পাতায় পাতায় বাবুই পাখির দুই শতাধিক বাসা। সম্প্রতি গাছের মালিক তজু মিয়া সেটি বেপারির নিকট বিক্রি করে দেন। গাছের পাশেই রিপন মিয়ার ধানের জমি। বিষয়টি তার নজরে পড়ে। তিনি খেয়াল করেন গাছটি বেপারি কেটে নিয়ে যাবে। এতে নষ্ট হবে পাঁচ শতাধিক পাখির আবাস। তাল গাছটি ৪০০০হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তিনি আরো ২০০টাকা বেশি দিয়ে সেটি কিনে নেন। যত দিন গাছে পাখি থাকবে তিনি ততদিন সেটি বিক্রি বা কাটবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,বুড়িচং উপজেলার ভরাসার বাজার পার হয়ে যেতে হয় সদর উপজেলার বলেশ্বর। তার পরের গ্রাম রামপুর। রামপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে সুন্দর সড়কটি গিয়ে মিলেছে তৈলকুপি বাজারে। রামপুর গ্রামের সড়কের পাশে তাল গাছটি। গাছ আর পাখি দেখতে এখানে ভরাসারে অবস্থিত সোনার বাংলা কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় তরুণরা ভিড় করে।

কৃষক মো. রিপন মিয়া বলেন, তিনি এসএসসি পাশ করেছেন। এখন জমিতে ফসল ফলানো আর বাড়িতে গরু পালন তার মূল পেশা। জমির পাশের তাল গাছটিতে অনেক বাবুই পাখি কিচির মিচির শব্দ তুলে ডাকে। গাছের কাছে এসে পাখির শৈল্পিক বাসা বুনন আর ডাক শুনলে তার মন ভালো হয়ে যায়। তাদের গ্রামে এই রকম বাবুই পাখির বাসা বাঁধা তাল গাছ আর নেই। তাই তিনি গাছটি কিনে নেন।
স্থানীয় সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ বলেন,পাখি প্রকৃতির প্রতি যত্নের বিষয়ে আমরা অনেক উদাসীন। সেখানে একজন কৃষক পাখির প্রতি যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন সেটি বিরল। তার নিকট আমাদের অনেক শেখার আছে। তার মতো অন্যদেরও জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসা উচিত।

সামাজিক বন বিভাগ কুমিল্লার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন,দিন দিন পরিবেশ থেকে বৃক্ষ,পাখি ও বিভিন্ন প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এগুলো সংরক্ষণের বিকল্প নেই। কৃষক রিপন মিয়ার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

আমরা মনে করি,দিন দিন পাখি,বৃক্ষ হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এই সময়ে রিপন মিয়ার ভূমিকা অনুকরণীয়। আমাদের সবার রিপন মিয়া থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে প্রকৃতির প্রতি মমতা বাড়ানো উচিত।