চলমান ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ ।। ওসমান গনি।।

আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র বিশ্বমানচিত্রে স্থান করে নিয়েছিল। তৎসময়ে এদেশ ছিল যুদ্ধবিধস্ত একটি ধবংসস্তুপ। যা হাটি হাটি পা পা করে ফিনিক্স পাখির মতো ধ্বংসস্তুপে জেগে ওঠেছিল আজকের বাংলাদেশ। যা দেখে বিশ্ব এখন অবাক তাকিয়ে রয়। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করেছিলেন। কিন্তু দেশ সাজিয়ে যেতে পারেন নি। বাংলার কতিপয় দুষ্কৃতকারী ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে সে সুযোগ দেননি। ক্ষমতার লোভে সেই দুষ্কৃতকারীগন বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে হত্যা করেছিলেন। তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেছিলেন বঙ্গবন্ধু কে হত্যা করতে না পারলে ক্ষমতা গ্রহন করা যাবে না। যেই চিন্তা সেই কাজ। যেটা বঙ্গবন্ধু কোনদিন বিশ্বাস ও করতে পারেননি যে এ সমস্ত লোকজনের হাতে তাকে প্রাণ হারাতে হবে। কারন হত্যাকারী লোকজনগুলো জাতির পিতার অতি নিকটতম ও আস্থাভাজন । 
কিন্তু সেই বিশ্বাসঘাতক নরপিশাচরা বঙ্গবন্ধুর সেই বিশ্বাস ও আস্থাভাজন কে ভূলুণ্ঠিত করে তাকে হত্যা করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনে বিভিন্ন পথও পন্থা অবলম্বন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে দেশ পরিচালনা করেছেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে দেশের মানুষের উন্নয়ন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় তেমন কোন দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেননি। সব সময় তারা দেশের মানুষ ও রাষ্ট্রের কাছে ধিক্কারের পাত্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করছেন। যখনই যারা ক্ষমতায় এসেছেন তখনই তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নিজ দলের ও ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে নিমজ্জিত ছিলেন। যার কারনে আজ দেশের বহু রাজনৈতিক দল ও নেতাকর্মী কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। দেশের ও দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান ছিল খুবই নাজুক অবস্থা। তখন দেশ প্রায় সময় দুর্ণীতিতে এগিয়ে যেত।
পরিশেষে বহু আঘাত ও প্রতিঘাত সহ্য করে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ রাষ্ট্র পরিচালনার করার ক্ষমতা পায়। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনা করার ক্ষমতা গ্রহন করেন। তিনি তার দক্ষতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করেন।  ১৯৯৬ হতে (২০২১) চলমান  সময় পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। তার শাসনামলে দেশ ও দেশের মানুষের সফলতা ও ব্যর্থতা কি তাও দেশের সুশীল সমাজের লোকজন পর্যবেক্ষণ করছেন। শুধু দেশ নয় আন্তর্জাতিক ভাবেও দেশের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দেশ ও দেশের বাহিরের বিভিন্ন সংস্থা নিয়মিত খোজ খবর নিচ্ছেন। আমরা প্রায় সময় দেশী বিদেশী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পাই বাংলাদেশের অভাবনীয় সফলতার কথা। যদি শেখ হাসিনার শাসনামল উল্লেখযোগ্য খারাপ হতো তাও তো দেশী বিদেশী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আসত।
তেমন উল্লেখযোগ্য কোন খবর সচরাচর আসে না। তাহলে সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে ধরে নেয়া যেতে পারে চলমান ( বর্তমান) বাংলাদেশের অবস্থা আগেকার যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক ভালো।
রাজনৈতিক দিক বিবেচনা করলে একটি কথা সবার মনে আসতে পারে তাহলো, দেশের কোন একটা অংশ মনে করে থাকে যে, আওয়ামীলীগ বিভিন্ন পন্থা অর্থাৎ প্রশাসনিক ক্ষমতায় নিজ দলের দলীয় লোক বসিয়ে ক্ষমতায় টিকে আছে। এ কথাটার ভিত্তিটা কতটুকু গ্রাহ্য?  এটা সাধারণ কথা যখন যে দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকে সে দলের প্রভাব কিছুটা বেশী থাকবে এটাই নিয়ম। যেমনটা বিগত ২০০১ সালে একটি দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে দলের নেতাকর্মীরা যেভাবে প্রভাব বিস্তার করছিল তৎসময়ে দেশে যে ভয়াবহতার সৃষ্টি হয়েছিল বিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে কোণঠাসা করতে সে থেকে আজকের ক্ষমতাশীল দল শিক্ষা নিয়েছিল। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে – ছায়াকে পা দেখালে ছায়াও ঠিক একই রুপ পা দেখায়। তাহলে বর্তমান এ পরিস্থিতির জন্য কে দায়ী? আমি একজনের সাথে ভালো আচরণ করলে তার থেকে ভালো আচরণ আশা করতে পারি। যেমন আম গাছে তাল আশা করা যায় না। আম গাছ থেকে আম ই আশা করতে পারি। বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে পরিস্থিতি চলছে কোন সময় ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে এমটাই বা তার থেকে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। মানুষ সব সময় অতীত থেকে শিক্ষা নেয়। রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার দ্বন্দ্বে দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা অনেকটা শোচনীয় হয়ে পড়ে। তবে দেশের রাজনৈতিক চলমান অবস্থা ২০০১ এর চেয়ে অনেকটা ভালো মনে হয়। ভবিষ্যতে কি হবে সেটা নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর মর্জির ওপর। দেশের সবদিক বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় জাতীয়ভাবে দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
লেখক- সাংবাদিক ও কলামিস্ট 
০১৮১৮৯৩৬৯০৯