মি’রাজঃ মানব ইতিহাসে বিরল ঘটনা 

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির 
পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল । (সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত ১)
◾ মিরাজ
এটি এমন এক বিষ্ময়কর ঘটনা  যার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্বয়ং আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনও ”সুবহান” শব্দটি উল্লেখ করেছেন (যা শুধু আশ্চর্যজনক ও বিরাট বিষয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়) শব্দটির অর্থ হচ্ছে পবিত্র ও মহিমাময়। এ বিশেষণ কেবল আল্লাহ পাকের জন্যই নিবেদিত। তাই, এ কথা সহজেই বুঝা যায় যে, মিরাজের ঘটনার পরিকল্পনাকারী ও সংঘটনকারী ছিলেন স্বয়ং আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুজিজা বা অলৌকিক ঘটনাগুলোর একটি এই মিরাজ। মানব জাতির ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা যার গুরত্ব মানব ইতিহাসে বিশেষ করে মুসলিম ইতিহাসে খুবই গুরত্বপূর্ণ । নবীদের (আ:) মুজেজার মাঝে আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই মুজেজা মানব ইতিহাসে অকল্পনীয় একটি মুজেজা যার বর্ণনা বা আলোচনা করার সেই সাহস আমার নেই। সত্যিকার অর্থে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আঙ্গুলের ইশারায় চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার কোন ব্যাখা আজও কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান দিতে পারেনি। মূলত নবী রাসূলদের মুজেজা তো তাকেই বলা হয় যা মানুষের চিন্তা- কল্পনার বাইরে।মিরাজের বর্ণনা বিশাল। সল্পজ্ঞানে সংক্ষেপে যতটুকু বুঝলাম তাই আলোচনা করার চেষ্টা করলাম ভুল হলে আশাকরি ক্ষমা করবেন। (المعراج) মিরাজ শব্দের অর্থ উর্ধ্বে গমন, কেননা আল্লাহ্পাক তার প্রিয় হাবীবকে ঐ দিনে মহাকাশ ভ্রমন করিয়ে ছিলেন । হাদিস শরীফে মিরাজ শব্দটি উল্লেখ করা হলেও কিন্তু আল্লাহ্পাক পবিত্র কোরআনে করিমে (اَسْراى) ‘আসরা’ শব্দ উল্লেখ করেছেন, আর আসরা শব্দের অর্থ সফর করা বা কাউকে রাতের বেলায় নিয়ে যাওয়া, কেননা মিরাজ হয়েছিল রাতের বেলায় ।
➲ মি’রাজের তারিখ নিয়ে একাধিক মত থাকলেও গ্রহণ করা মত হচ্ছে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওতের দশম বছর মক্কি জীবনের শেষলগ্নে পিতৃব্য আবু তালিব ও উম্মুল মুমেনীন হযরত খাদিজাতুল খুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহা ইহ জগৎ ত্যাগ করার পরে এবং হিজরতের আগে যখন আরবের কাফির মূনাফিকরা মুসলমানদের প্রতি অত্যাচার অনাচার বেশী শুরু করে দিলো তখনি আল্লাহ তার হাবীবকে মিরাজের এই সফর করিয়ে ছিলেন। মিরাজের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তার বন্ধুকে নিজের সান্নিধ্যে ডেকে এনে সান্ত্বনা দিয়ে সমাজ সংস্কারের একটি পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। হাদিস শরীফের বিভিন্ন বর্ণনাতে দেখা যায় মক্কা থেকে আল্লাহর হাবিবকে জিব্রাইল (আ:) বায়তুল মুকাদ্দাস নিয়ে যান, সেখানে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামগনের সাথে ২ রকাত সালাতের ইমামতি করে ঊর্ধ্ব  গমনে যান। এভাবে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আসমান অতিক্রম করে ”বায়তুল মামুরে” একত্ববাদের পরিচয় দান কারি নবী হজরত ইব্রাহীম (আ:) এর সাথে সাক্ষাত হয়। এরপর ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ থেকে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে – মহান রাব্বুল আলামীন উনার কুদরতের সাক্ষাতে নিয়ে যান।
➲ আবদুল আযীয ইবনুূু আবদুল্লাহ (রহঃ) হজরত আনাস ইবনুূু মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এত ঊর্ধ্বে  আরোহণ করান হলো, যা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানেনা। অবশেষে তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় আগমন করলেন। এখানে প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী হলেন। অতিনিকটবর্তীর ফলে তাঁদের মধ্যে দু, ধনূকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। (বুখারী ৭০০৯ ই,ফা)
সেখান থেকে ফিরে আসার সময় উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য ৫ ওয়াক্ত সালাত নিয়ে আসেন । সেখানে আল্লাহ তার নিদর্শন গুলো তার হাবীবকে দেখিয়েছেন, যে গুলি একমাত্র আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখিয়েছেন । আগের নবীরা (আ:) যে আল্লাহর কথা প্রচার করেছেন তার সমাপ্তি করেছেন শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহর আয়াত তথা নিদর্শনের একমাত্র সাক্ষী হলো আমাদের নবী রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
◾ মিরাজের আরো বিস্তারিত জানার জন্য সূরা আন নাজাম এর প্রথম ১ থেকে ১৮ আয়াত গুলি দেখুন এখানে আরো বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন,
وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَى
নক্ষত্রের কসম, যখন অস্তমিত হয়।
مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَى
 তোমাদের সংগী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি।
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَى
এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।
إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى
কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।
عَلَّمَهُ شَدِيدُ الْقُوَى
তাঁকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা,
ذُو مِرَّةٍ فَاسْتَوَى
সহজাত শক্তিসম্পন্ন, সে নিজ আকৃতিতে প্রকাশ পেল।
وَهُوَ بِالْأُفُقِ الْأَعْلَى
উর্ধ্ব দিগন্তে,
ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى
অতঃপর নিকটবর্তী হল ও ঝুলে গেল।
فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى
তখন দুই ধনুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরও কম।
فَأَوْحَى إِلَى عَبْدِهِ مَا أَوْحَى
তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করবার, তা প্রত্যাদেশ করলেন।
مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى
রসূলের অন্তর মিথ্যা বলেনি যা সে দেখেছে।
أَفَتُمَارُونَهُ عَلَى مَا يَرَى
তোমরা কি বিষয়ে বিতর্ক করবে যা সে দেখেছে?
وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى
 নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল,
عِندَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى
 সিদরাতুল মুন্তাহার নিকটে,
عِندَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَى
যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত।
إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى
 যখন বৃক্ষটি দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ার, তদ্দ্বারা আচ্ছন্ন ছিল।
مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَى
 তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয় নি এবং সীমালংঘনও করেনি।
لَقَدْ رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى
নিশ্চয় সে তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে।”
উপরোল্লিখিত আয়াত সমূহের দ্বারা মিরাজের অনেক কিছুই নিশ্চয় জানা যায়।
◾এ প্রসঙ্গে সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফের বিভিন্ন হাদীসেও মি’রাজের ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা পরিলক্ষিত হয়।
যেমন,  হজরত আবূ যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমি মক্কাতে ছিলাম। আমার ঘরের ছাদ ফাঁক করা হলো। তখন জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবতরণ করলেন। তিনি আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। এরপর তা যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন। তারপর হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি পাত্র আনা হলো এবং এতে তা রাখা হল ; পূনঃ তা আমার বক্ষে প্রবেশ করানো হল। তারপর ঊর্ধ্ব আকাশে যাত্রা শুরু। প্রথম আসমানে হযরত জিবাইল( আঃ) কে প্রশ্ন করা হল, প্রশ্নোত্তর শেষে দরজা খূলে দিলেন। এসময় বেহেশত  – দোজখ সহ নানা   ঘটনা, বিষয় অবগত হন-দেখেন সুবহানাল্লাহ। হজরত আনাস  রাঃ থেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়া  সাল্লাম বলেন,  তিনি আসমানসমূহে হযরত আদম, ইদ্রিস, মূসা ও ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথম আসমানে এবং ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ষষ্ঠ আসমানে। এছাড়া অন্যান্য নবীর অবস্থান এ রেওয়ায়েতে  উল্লেখ নেই। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হযরত জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হযরত ইদ্রিস (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, মারহাবা, হে সুযোগ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! সুযোগ্য ভ্রাতা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? জিবরাঈল (আঃ) উত্তর দিলেন; ইনি ইদ্রিস (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তারপর আমরা হযরত মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনিও বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , সুযোগ্য ভ্রাতা। জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। তারপর আমরা ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তিনিও বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , সুযোগ্য ভ্রাতা ! জিজ্ঞেস করলাম ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি হযরত ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। তারপর আমরা হযরত ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তিনিও বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , সুযোগ্য সন্তান! জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি হযরত ইবরাহিম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। ইবনু শিহাব, ইবনু হাযম, ইবনু আব্বাস ও আবূ হাব্বা আনসারী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তারপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে নিয়ে আরো ঊর্ধ্বে চললেন। আমরা এমন এক স্তরে পৌঁছলাম যে, তথায় আমি কলম-এর খশমশ (লেখার) শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। ইবনু হাযম ও আনাস ইবনু মালিক বর্ণনা করেনঃ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তখন আল্লাহ তা’আলা আমার ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামাজ) ফরয করেন। আমি এ নিয়ে প্রত্যাবর্তন করার পথে হযরত মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উম্মতের ওপর কি ফরয করেছেন? আমি উত্তরে বললাম, তাদের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামাজ),ফরয করা হয়েছে। হযরত মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে যান, কেননা আপনার উম্মাত তা আদায় করতে সক্ষম হবে না। তাই আমি আল্লাহর দরবারে ফিরে গেলাম। তখন আল্লাহ এর অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আমি আবার ফিরে আসলাম, হযরত মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-পুনরায় জানতে চাইলেন আমি বললাম,অর্ধেক    তিনি বললেন না, আপনি পুনরায় ফিরে যান, কেননা আপনার উম্মাত এতেও সক্ষম হবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আমি আল্লাহর দরবারে ফিরে গেলে তিনি বললেন, এ নির্দেশ পাঁচ, আর পাঁচই পঞ্চাশের সমান করে দিলাম, আমার কথার কোন রদবদল নেই। এরপর আমি হযরত মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে ফিরে আসি। তিনি তখনো বললেন, আপনি ফিরে যান আল্লাহর দরবারে। আমি বললাম আমার লজ্জা অনুভূত হচ্ছে। তারপর,  ছিদরাতুল মুনতাহা-পৌছলাম। তা এত বিচিত্র রঙে আবৃত যে, আমি বুঝতে পারছি না যে, আসলে তা কী। তারপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হল। সেখানে ছিল মুক্তার গম্বুজ আর তার মাটি ছিল মিশকের। (কিতাবুল ঈমান,সহীহ মুসলিম)
➲ জাবির ইবনুূু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রসূলাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, যখন (মিরাজের ব্যাপারে) কুরাইশরা আমাকে অস্বীকার করল, তখন আমি কা’বা শরীফের হিজর অংশের দাঁড়ালাম। আল্লাহ তাআলা তখন আমার সম্মুখে বায়তুল মুকাদ্দাসকে প্রকাশ করে দিলেন, যার ফলে আমি দেখে দেখে বায়তুল মুকাদ্দাসের সমূহ নিদর্শনগুলো তাদের কাছে বর্ণনা করছিলাম। বায়তুল্লাহ শরিফের মিযাবে রহমতের নিচে যে অংশটি পাথর দিয়ে ঘেরা তাকে হিজর বলা হয়।(আম্বিয়া কিরাম (আঃ), সহীহ বুখারি)
◾ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মি’রাজ সম্পর্কে অকাট্য প্রমাণাদি রয়েছে। এজন্য কোনো মুসলমানের পক্ষে তা অস্বীকার করা কিংবা এ ব্যাপারে সংশয় দেখানো উচিত নয়। এমনকি একজন খাঁটি মুসলমানের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে মিরাজের সত্যতা প্রমাণের অপেক্ষা না করে এ বিষয়ে মনেপ্রাণে বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানি কর্তব্য। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজ থেকে ফিরে আসার পর সর্বসাধারণকে তিনি যখন তা অবহিত করলেন তখন অনেকেই মিরাজ অবিশ্বাস্য বলে ঠাট্টা-বিদ্রুপ বলে উড়িয়ে দিলো। এত কম সময়ের মধ্যে কিভাবে তা সম্ভব তার জন্য সন্দিহান হলো তো বটেই, একে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করল মক্কার কাফের-মুশরিকরা। তাদের অপপ্রচারের দুর্বল ঈমানের মুসলমানদেরও মনে সন্দেহ হলো। ঠিক তখনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিরাজে যাওয়ার ঘটনা একজন অবিশ্বাসীর মুখে শুনে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সঙ্গে  সঙ্গে  বিশ্বাস করেছিলেন বলেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে ‘সিদ্দিক’বা সত্যবাদী উপাধি দিয়েছিলেন। এজন্য মিরাজের শিক্ষার বাস্তব প্রতিফলন ঘটানোই একজন আদর্শ উম্মত তথা মুসলমানের কাজ।
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, লেখক,সংগঠক, ধর্ম ও সমাজতত্ত্ববিদ, কুমিল্লা।