চার দিনের অগ্নিপথ: ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

মনোয়ার হোসেন রতন ।।
২২ এপ্রিল ২০২৫। ভারতের কাশ্মীরের পাহেলগাম তখনও ঘুম ভাঙিয়ে পর্যটনের মৌসুমে স্বাগত জানাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ এক ভয়াবহ বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন নিরপরাধ প্রাণ ঝরে গেল- তাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। মুহূর্তেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল উপমহাদেশ। ভারত আঙুল তুললো পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠীর দিকে, আর পাকিস্তান তা অস্বীকার করল দৃঢ়ভাবে। পরিণতিতে দুই প্রতিবেশী পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র আবারও দাঁড়াল এক যুদ্ধের মুখোমুখি।
অপারেশন ও পাল্টা প্রতিশোধ:
অস্থিরতার চার দিন
ভারত এই হামলার পর “অপারেশন সিঁদুর” নামে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সম্ভাব্য জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। জইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তৈয়বার ঘাঁটি ধ্বংসের দাবি করে ভারত সরকার। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান “অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস” যার অর্থ “গলিত সিসা দিয়ে গড়ায় এক প্রাচীর” চালায়, যা ভারতীয় সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে।
এই চার দিন ছিল উত্তেজনা, আতঙ্ক ও ধ্বংসযজ্ঞে ভরপুর। সীমান্তের দুই পাশে সামরিক ছাউনি কাঁপছিল গোলাবর্ষণে, আর মিডিয়া কাঁপছিল জাতীয়তাবাদের উত্তাপে।
আন্তর্জাতিক চাপ ও যুদ্ধবিরতি:
এক শান্তির চুক্তিপত্র
১০ মে, ২০২৫ – যখন যুদ্ধ আর মাত্র এক ধাপ দূরে ছিল পরমাণু অন্ধকার থেকে, তখন দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান সম্মত হয় পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে।
যুদ্ধবিরতির প্রধান শর্ত ছিল-
স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে সব সামরিক অভিযান বন্ধ করা,
১২ মে থেকে সামরিক পর্যায়ের কূটনৈতিক আলোচনা শুরু,
পাকিস্তান তার আকাশসীমা পুনরায় খোলে, যদিও ভারত কিছু সীমাবদ্ধতা বজায় রাখে।
কে কী পেল আর কে হারাল কী?
ভারত সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন করল, কিন্তু বেসামরিক হতাহতের দায়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনা এড়াতে পারেনি।
পাকিস্তান আত্মরক্ষার যুক্তিতে পাল্টা জবাব দিলেও সন্ত্রাসে মদদদানের অভিযোগে রাজনৈতিক চাপে পড়ে।
কাশ্মীর আবার পরিণত হলো যুদ্ধের পরীক্ষাগার; ক্ষয়ক্ষতির চরম মূল্য দিল সাধারণ মানুষ।
ইতিহাস কি আবারও একই ভুলে ফিরে গেল?
এই সংঘাত আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৯৯-এর অধ্যায়গুলোকে। যেখানে রাজনৈতিক মতানৈক্য, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ আর ভূখণ্ডের দাবি-সব মিলিয়ে এক বিস্ফোরণযোগ্য উপমহাদেশ। যুদ্ধবিরতি একটি সাময়িক স্বস্তি দিলেও, স্থায়ী শান্তি নির্ভর করে দুই দেশের আন্তরিক কূটনৈতিক সদিচ্ছা এবং কাশ্মীর ইস্যুর মানবিক সমাধানের ওপর।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়-এই সংঘাত কি শুধুই কূটনৈতিক দাবার চাল ছিল, না কি এটি এক গভীরতর ইতিহাসের অস্থির পুনরাবৃত্তি?
inside post
আরো পড়ুন