চেতনায় মুজিব ; মাসুদা তোফা

 

বত্রিশ নম্বর বাড়ির পাশ দিয়ে যেতেই তোমার শব্দ শুনি
তুমি যেনো বলছ হে বাংলার মানুষ শোন আমি মরি নাই।
আমি জেগে আছি, জেগে থাকব বাংলাদেশ শত্রু মুক্ত রাখতে।
যদিও তোমরা আমায় দেখ না, আমি কিন্তু সবাইকে দেখি
আটচল্লিশে না শৈশবে শুরু করেছি মরণেও মুক্তি নাই।
জন্মবাড়ি টুঙ্গিপাড়া থেকে বত্রিশ নম্বর আমাকেই খুঁজো
আমার জন্মদিন, মৃত্যুদিন, দশ জানুয়ারি, সাতই মার্চ
বিজয়, স্বাধীনতা আরও অনেক দিনে কত খুঁজে বেড়াও।
ছোট্ট শিশুদের কোলাহলে হয়ে উঠি অশরীরী শিশু মুজিব।
তোমাদের বিশ্বাস ভালবাসা, চক্রান্ত কোনোটাই তো ভুলিনি,
বাংলার মানুষও ভুলেনি, কখনো কোনোদিন ভুলবে না।
আমি চেয়েছিলাম তেইশ বছরের বঞ্চনার অবসান ।

বাংলার মানুষ বাংলায় কথা বলবে,

আপন রাজ্যে স্বাধীনভাবে কাজ করবে,বড়ো অফিসার হবে।
উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবে,সমৃদ্ধ দেশ পাবে।
এরবেশি কিছুই চাইনি, ক্ষমতার লোভ আমার ছিল না কখনো।
ক্ষমতা চাইলে তাদের সাথে আতাত করতে পারতাম ,

আমার ছিলো স্বাধীনতার লোভ,অন্তরজুড়ে ছিলো বাংলা
তোমরাও স্বাধীনতা চেয়েছিলে লক্ষ লক্ষ মা ভাই বোনের
আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বপ্ন ছিনিয়ে এনেছিলাম
আমরা।
এই রক্তস্রোতের ইতিহাস বাঙালি কখনো ভুলে যাবে না।
এ শুধু গৌরবের অতীত, ত্যাগের অতীত, রক্তের অতীত
আমার সাথে বাঙালি আজন্ম মিশে ছিল, পুরো বাংলাও ছিল।
আমি আজও প্রিয় মুখগুলো খুঁজি, আজও দেখি তোমাদের
কেমন করে সেদিনগুলোতে আমরা কঠিন শপথ নিলাম ।
সাত মার্চের উচ্চারিত শব্দগুলো তোমরা মন্ত্রবত তেজে
রক্তে মিশিয়ে যুদ্ধে গেলে কিছুই না ভেবে জীবন বাজী রেখে ।
আমি তখন জেলে বসে প্রতিদিন মৃত্যুর প্রহর গুনলেও
অন্তরে নজরুলের সেই বিদ্রোহী লাইন মনে মনে জপি ,
“জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি”,

তোমাদের এত ভালবাসি বলে আজও মানুষ খুঁজে ফিরি
মৃত্যুতে আমার কষ্ট নেই, কখনোই মৃত্যুকে ভয় পাইনি।
আমার অযুত স্বপ্ন মৃত্যুর সাথে মিশে গেছে সেটাই কষ্ট ।
শুধু ভাবি, কত কাজ অসমাপ্ত রেখে আসতে হলো, এলাম!
তোমরা তো জানতে তখনো আমার মৃত্যুর বয়স হয়নি !
যার আপাদমস্তক জুড়ে স্বপ্ন শুধু বাংলা , বাংলার মানুষ ।
হিমালয়সম স্বপ্ন ছিলো বাংলাদেশকে নিয়ে তবু তোমরা !
বত্রিশ নম্বর ইতিহাস বাড়িটার পাশ দিয়ে গেলে আমি
এসব কথা শুনি, তোমার ভাষণ শুনি চারদিকে হে গুণী
তোমার অতৃপ্ত আত্মার ডাক কান্না হয়ে অনুভবে শুনি।