চেয়ারম্যানের পায়ে ধরে প্রধান শিক্ষকের ক্ষমা ভিক্ষা!

 

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষক ও তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেকে মারধর করে চেয়ারম্যানের পায়ে ফেলে ফেসবুকে লাইভ করার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। ভিডিওতে দেখা যায়,চেয়ারম্যান চেয়ারে বসা। ধাক্কা দিয়ে শিক্ষক ও তার ছেলেকে চেয়ারম্যানের পায়ে ফেলা হয়। এদিকে ফেসবুকে লাইভ দিয়ে একজন ধারা বিবরণী দিচ্ছেন।

 

অনেকটা খেলার ধারা বিবরণী। সেখানে চেয়ারম্যানকে মহান মানুষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শিক্ষক, শিক্ষক নেতাদের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি এক মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন মিয়াজি জোড্ডা পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। শিক্ষক মিয়া মো. আল মামুন জয়াগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সম্পর্কে চেয়ারম্যানের চাচা। এনিয়ে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, চেয়ারম্যানের বাড়ির ছাদে পঞ্চায়েত কমিটির সামনে ভীত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন ওই শিক্ষক ও তার ছেলে শিবলু। এসময় বক্তব্য দিচ্ছিলেন আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংসদ কমান্ড নাঙ্গলকোট উপজেলার সভাপতি, কাশিপুর নেছারিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসার শিক্ষক ও ডেমু ট্রেনের গার্ড ওমর ফারুক লিটন। বক্তব্যে তিনি ওই শিক্ষককে হাতজোড় করে চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। ক্ষমা চাইতে গেলে তেড়ে আসেন ওমর ফারুক লিটন। এসময় শিক্ষক মামুন ও তার ছেলের পিঠে কনুই দিয়ে আঘাত করে চেয়ারম্যানের পায়ের নিচে ফেলেন তিনি। শিক্ষক অঝোরে চেয়ারম্যানের পা ধরে কান্না করছেন। আর বলছেন, আমার ভুল হয়ে গেছে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মামুন, থানা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও জোড্ডা বাজার পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবুল খায়ের, জোড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও নাঙ্গলকোট প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন মজুমদার, কাশিপুর নেছারিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসার সুপার শরীফ মো. বেলাল হোসেন, স্থানীয় জুলহাস মেম্বারসহ এলাকার দুই শতাধিক ব্যক্তি। এরা সবাই চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মিয়াজির অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন পূর্বে নাঙ্গলকোটের জোড্ডা গ্রামে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

 

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে জড়িত আছেন বলে বক্তব্য দেন ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার। পাল্টা বক্তব্যে চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই শিবলু একাধিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা বলে বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় চেয়ারম্যান শিবলুর গালে চড় মারেন। এতে শিক্ষক মামুন প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান অসন্তুষ্ট হন। এর জেরে ওই প্রধান শিক্ষকের জমির মাটি কেটে নেন চেয়ারম্যান। এটা পুলিশকে জানান প্রধান শিক্ষক মামুন। যার প্রতিবাদেই পঞ্চায়েত সভার আয়োজন করেন চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীরা।

আমরা মনে করি, কেউ অপরাধ করলে দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হবে। সেখানে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষককে পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ানো অত্যন্ত দুঃখজনক। তা আবার উৎসাহের সাথে ফেসবুকে লাইভ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রশাসন দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা করি।