‘চোখের সামনে নাতিডা পুইড়া গেলো’

মাহফুজ নান্টু।
বিকেলে বড় নাতিকে নিয়ে বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন রওশন আরা। বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। দোয়ার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। সঙ্গে করে বড় নাতি সাফিনকে নিয়ে রওনা হলেন। মা ও সন্তানকে অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়ে আসলেন তার ছেলে সাইফুল ইসলাম।

চাঁদপুরের মতলবে যাবেন। তাই মতলব সার্ভিসের একটি বাসে উঠলেন। নাতিকে নিয়ে চালকের আসনের পাশে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে বসলেন রওশন আরা। বাসটি চিটাগাং রোড থেকে ছেড়ে আসে। পথিমধ্যে গৌরিপুর আসলে হঠাৎ করেই বাসে আগুন ধরে যায়। ইঞ্জিন থেকে আগুনের সূত্রপাত। কিছু বুঝে উঠার আগে নাতি সাফিনকে টেনে বের করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যান। বাসের দরজা দিয়ে তিনি বের হলেন, তবে বাসে রয়ে যায় নাতি সাফিন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট ভর্তি রওশন আরা কান্না জড়িত কন্ঠে স্বজনদের জানান, চোখের সামনে নাতিডা পুইড়া গেলো। আল্লায় আমারে নিয়া যাইতো আমার নাতিডারে বাঁচাইয়া রাইখা যাইতো। এদিকে ছেলের লাশ নেয়ার জন্য শুক্রবার সকাল থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপেক্ষা করছেন বাবা সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছেলে আগুনে পুড়ে মারা গেছে। মা হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। আমার দুই ছেলের মধ্যে সাফিন বড়। রাতেকাজ শেষ করে যখন বাসায় যাইতাম, আব্বু আব্বু কইয়া পোলাডা কোলে ঝাপাইয়া পড়তো। এখন কে আইবো আমার কাছে। ছেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তার গলা ধরে আসে, তিনি চোখ মুছতে থাকেন।

উল্লেখ্য- ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকালে চলন্ত বাসে আগুন লেগে দগ্ধ হয়ে এক শিশুসহ দুই যাত্রী মারা যান। নিহতরা হলেন দাউদকান্দির দলুয়াকান্দি গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে সাফিন (৪) ও দাউদকান্দির তিনপাড়া গ্রামের আহাদ উল্লাহর ছেলে রফিকুল ইসলাম(৬০)। আহত হয়েছেন ২০ জন।