জবেহ করা গরু চলে যায় পাশের গ্রামে!

।। মাহফুজ নান্টু ।।
ঈদ উৎসবের। তবে হাট থেকে গরু কিনে আনা আরেকটা উৎসব। সব সময় হাটে মাঝারী আকারের লাল রংয়ের গরুর চাহিদা বেশী। হাট থেকে গরু এদিক ওদিক দৌড় না দিলে কোরবানীর ঈদের মজাটাই নষ্ট হয়ে যায়। একবার এক ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটলো।
নিজেদের গরু জবাহ করা শেষ। এবার পাশের বাড়ির আবদুল হক দাদা গরুটাকে জবেহ করা হবে। আমরা এগিয়ে গেলাম। তখন বয়স কত হবে। বড়জোর ১৩/১৪ বছর। গ্রামে কোরবানির ঈদে অন্যের পশু জবেহ করার সময় সহযোগিতা করতে হয়। এটা অলিখিত নিয়ম। সামাজিক রীতিনীতি। আবদুল হক দাদা পাশে দাড়িয়ে আছেন। গরুর উপর দিয়ে পায়ের নিচে রশিটাকে পেচিয়ে আনা হলো। এটা গরু জবেহ করার কৌশল। আমরা ছোটরা গরুর পায়ের কাছে ধরলাম। মাথায় ও শিংয়ে ধরলেন কয়েকজন তাগড়া যুবক। আবদুল হক দাদা মসজিদের ইমামের কাছে নাম বলতে শুরু করলেন। যাদের নামে কোরবানি করা হবে। মসজিদের ইমামকে আমরা হুজুর বলি। তখন আমাদের মসজিদে দেলোয়ার হুজুর ইমাতি করতেন। হুজুর আবদুল হক দাদার কাছ থেকে নাম শুনে দোয়া পড়লেন। আল্লাহু আকবর বলে গরুর গলায় ছুরি চালালেন। গরুটা পা ঝাড়া দিলো। আমিসহ আরো দুই একজন পড়ে গেলাম। পায়ে প্রচণ্ড ব্যাথা পেলাম। গরুটা নিস্তেজ হয়ে গেলো। আমরা এবার অন্য আরেকটা গরু জবেহ করতে গেলাম। হঠাৎ শোর চিৎকার শুরু হলো। কাছে গিয়ে দেখলাম গরু উঠে দৌড় শুরু করেছে।
গরু দৌড়াতে দৌড়াতে পাশের গ্রাম রামপুরে চলে গেলো। ওই গ্রামের মানুষজন প্রথমে ভয় পেলো। সবাই এদিক ওদিক ছুটাছুটি শুরু করলো। পরে সবার সহযোগিতায় গরুটাকে আটক করা হলো। আব্বুর সাথে দৌড়ে গেলাম। আব্বু গরু জবেহ করতে পারতেন। হুজুরের অপেক্ষা না করে আব্বু ছুরি নিয়ে দৌড়ে গেলেন। গরু জবেহ করলেন।
এখন হাট থেকে গরু কেনা দায়িত্ব। তাই গরুর দৌড়টাকে উপভোগ করতে পারি না। এখন আব্বু নেই। ওই বাড়ির দাদাও নেই। সবাই পরপারে চলে গেছেন। আমি বড় হয়েছি। বড় হতে গিয়ে কত দিন কত রাত পার হয়েছে টের পাইনি।

লেখক:সাংবাদিক।