টার্মিনাল যেন বাসের কারাগার!
গাড়িটা আগে বাড়ান। লাইনচ্যুত হবেন না। বাসের হর্ন, যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের হাঁকডাকে গমগম করছে। এটি কুমিল্লা জেলা শহরের শতবছরের পুরাতন বাস টার্মিনাল শাসনগাছার দৈনন্দিন চিত্র। এ টার্মিনাল হয়ে প্রতিদিন জেলা শহরে আসা-যাওয়া করে লক্ষাধিক মানুষ। টার্মিনালটি যেন বাসের কারাগার। টার্মিনালে প্রবেশ ও বাইরে যেতে যানজটে আটকে পড়তে হয়।
ঢাকা, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লার দেবিদ্বার, মুরাদনগর, চান্দিনা, হোমনা, বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়াসহ আরো কয়েকটি জেলা উপজেলায় প্রতিদিন আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস আসে যায় প্রায় ৪০০টি।
টার্মিনাল সূত্রে জানা যায়, এখান থেকে দৈনিক ১২টি পরিবহন প্রতিষ্ঠানের বাস চলে প্রায় ৪০০টি। টার্মিনালের যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ৮ জন। তাদের মধ্যে ৪ জন সকালে এবং ৪ জন বিকেলের কাজ করেন। দিক-নির্দেশনা দিতে মাইকম্যান একজন ও টার্মিনালের ইজারার অর্থ আদায়ে আছেন ৫ জন।
এছাড়াও এ টার্মিনালের প্রতিটি গাড়ির সাথে ড্রাইভার ১জন ও একজন হেল্পার ১ জন। এছাড়াও বড় গাড়িগুলের সাথে ড্রাইভার ১ জন ও ২-৩ জন হেল্পার থাকেন। টার্মিনালের পরিবহনের সাথে জড়িয়ে আছে অন্তত ১২০০ পরিবহন শ্রমিক।
আবু তাহের, ৪০ বছর এ গণপরিবহনের সাথেই জড়িয়ে আছেন । বুধবার সকালে দেখা যায়, মাইক হাতে টার্মিনালটির গাড়িগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। সকাল আটটা থেকে রাত্র আটটা পর্যন্ত চলে তার এই দায়িত্ব। দায়িত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, এ কাজ করতে এখন ভালই লাগে। এই স্টেশনের শ্রমিক ড্রাইভারসহ সবার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক।
বাসচালক আবু বক্কর বলেন, গত সাত বছর ধরে এই স্টেশন থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে দাউদকান্দি পর্যন্ত পাপিয়া ট্রান্সপোর্ট বাস চালাচ্ছি। শাসনগাছা বাস টার্মিনালের সব ঠিক থাকলেও আমাদের কয়েকটি জায়গায় বিপাকে পড়তে হয়। এরমধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে স্টেশনে প্রবেশ বের হওয়ার রাস্তাটি। এখানে সবসময় যানজট লেগে থাকে। এই যানজটের মূল কারণ হচ্ছে, ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা ও কিছু সংখ্যক বেপরোয়া বাস চালকদের কারণে।
পরিবহন শ্রমিক আবদুল কাদের ও মুন্না মিয়া বলেন, অনেক সময় টার্মিনালের পৌঁছাতে আমাদের রাত হয়ে যায়। আমাদের যদি এখানে থাকার জন্য সরকার একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিতো অনেক সুবিধা হতো। এছাড়া সংস্কার করে টার্মিনালটির সৌন্দর্য বাড়াতে হবে।
নিউ সুগন্ধা বাসের কনট্রাক্টর মো. সালাউদ্দিন বিপ্লব বলেন, আমি দেশের বিভিন্ন টার্মিনাল ঘুরে দেখেছি সবগুলোতেই পরিবহন শ্রমিকদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আমাদের এ টার্মিনালটিতে নাই।
কুমিল্লা মোটর অ্যাসোসিয়েশনের (বাস মালিক সমিতি) সভাপতি জামিল আহমেদ খন্দকার বলেন, শাসনগাছা বাস টার্মিনালটি সংস্কার করা প্রয়োজন। টার্মিনালের মাঠটি বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্তে ভরে গেছে। জেলা পরিষদ যদি একটু সংস্কারের ব্যবস্থা করতো তা হলে অনেক ভালো হতো।