থাকেন সরকারি কোয়ার্টারে ভাড়া দেন না কর্মকর্তা-কর্মচারী

মো.ফজলে রাব্বি, আখাউড়া সংবাদদাতা

সরকারি কোয়ার্টারে বিনা ভাড়ায় বসবাস করছেন আখাউড়া উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) সহ উপজেলার অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী। উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে সরকারি কোয়ার্টারে বেসরকারি লোকজনও বসবাস করছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস সূত্রে জানাগেছে, আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসা ছাড়া হিসাব রক্ষণ অফিসে উপজেলার কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন থেকে বাড়ি ভাড়া বাবদ টাকা কাটা হয় না।

অথচ প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার কোনটাই খালি নেই। সেখানে বসবাস করা কর্মকর্তারা ভুলেই গেছেন সরকারি এই সম্পত্তিতে থাকতে হলে নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। তারা নিজেদের বাসা মনে করে বছরের পর বছর দখলে রেখেছেন কোয়ার্টারগুলো। আর প্রতিবছর বিদুৎ বিল ও রক্ষণাবেক্ষণে উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিল থেকে আবাসিক ভবনগুলোর সংস্কার বাবদে লাখ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

জানাগেছে, সরকারি কোয়ার্টারে বিনা ভাড়ায় থাকার তালিকায় রয়েছেন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা, সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার, কৃষি ব্যাংক ম্যানেজার, দারিদ্র বিমোচন কর্মকর্তা, কৃষি অফিসার, আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামার, প্রাণী সম্পদ অফিসের ভি.এফ,উপজেলা প্রকৌশল (এলজিআরডি) অফিসের সার্ভেয়ার সহ উপজেলা প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী।

আখাউড়া উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ২ তলা বিশিষ্ট সরকারি ৬ টি আবাসিক কোয়ার্টার রয়েছে। তার মধ্যে উপজেলা পরিষদের অধীনে ৩টি এবং উপজেলা পল্লী উন্নয়ন (বিআরডিবি) কর্মকর্তার অধীনে ৩ টি কোয়াটার।

পরিষদের এক নাম্বার বাসা (করবী) তে সরকারি ভাবে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। অথচ বিনা ভাড়ায় এই কোয়ার্টারে থাকছেন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শওকত হোসেন খান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার নূরজাহান বেগম, সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো.বদরুল ইসলাম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার কফিল উদ্দিন, কৃষি ব্যাংক ম্যানেজার মুকবুল হোসেন।

দুই নাম্বার বাসা (চামেলী) তেও সরকারি ভাবে কাউকে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এই কোয়ার্টারে থাকছেন উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মির্জা মো.তরিকুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো.জাকির হোসেন, উপজেলা দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হক, উপজেলা কৃষি অফিসের অফিসার ইফতেখার রসূল সিদ্দিক, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মো. আরাফাত হোসেন, উপজেলা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামার প্রকৌশলী মো. শামিম আলম।

পরিষদের তিন নাম্বার বাসার (কামেনী) নীচতলায় সরকারি ভাবে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের ভি.এফ মো. একরাম হোসেন কে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই ভবনের উপরের তলায় উপজেলা ভূমি অফিসের চেইনম্যান মো. কবির হোসেন কে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দ ছাড়াও এই কোয়ার্টারে থাকছেন উপজেলা প্রকৌশল (এলজিআরডি) অফিসের সার্ভেয়ার মো.জহুরুল ইসলাম,উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) অফিসের অফিস সহায়ক নূরে আলম।

উপজেলা পল্লী উন্নয়ন (বিআরডিবি) কর্মকর্তার অধীনে ৩ টি কোয়ার্টার রয়েছে। সেই কোয়ার্টার গুলোতেও রয়েছে অনিয়ম। পল্লী উন্নয়ন কর্মচারীদের নামে কাগজে কলমে বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে থাকছেন অন্যরা। উপজেলা কমপ্লেক্সর চার নাম্বার কোয়ার্টার পলাশ/ক বরাদ্দ রয়েছে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসের পরিদর্শক মো. কিরণ চৌধুরীর নামে অথচ সেই বাসায় থাকছেন শিউলি আক্তার নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী, পাঁচ নাম্বার কোয়ার্টার মহুয়া/ক তে থাকছেন উপজেলা সাব-রেজিস্ট্র্রি অফিসের নকল নবিশ জহিরুল ইসলাম, মহুয়া/খ তে থাকছেন নকল নবিশ রোকসানা আক্তার, মহুয়া/গ তে থাকছেন নকল নবিশ আসমা আক্তার। মহুয়া/ঘ বরাদ্দ রয়েছে পল্লী উন্নয়ন অফিসের অফিস সহকারী আকলিমা আক্তারের নামে অথচ সেই বাসায় থাকছেন খোদ উপজেলা পল্লী উন্নয়ন (বিআরডিবি) কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন।

এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরী করতেন শাহানা বেগম। তিনি দীর্ঘদিন সরকারি কোয়ার্টারের থাকছিলেন। তার বকেয়া বাসা ভাড়া আসে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। শাহানা জানান,কয়েক মাস পূর্বে উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান আবুল কাশেম ভূইয়ার কাছে বাসা ভাড়া বকেয়া বাবদ দেড় লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্ত ওই টাকা তিনি এখনো সরকারি কোষাগারে জমা দেননি।

আখাউড়া উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আবু ইউছুফ নুরুল্লাহ্ জানান,আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসা ভাড়া বাবদ বেতন থেকে টাকা কর্তন করা হয়। কিন্তু এর বাইরে উপজেলার কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন থেকে বাড়ি ভাড়া বাবদ টাকা কাটা হয় না। বিষয়টি একাদিকবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে জানানো হয়েছে।

এমন অব্যবস্থাপনা কেন? এমন প্রশ্নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তার বলেন,বাসা গুলোতে পরিবার নিয়ে থাকার মতো না। কয়েকজন অফিসার ব্যাচলর হিসেবে কোন রকম থাকছেন। আগামী মিটিংয়ে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। যে বাসা গুলো ব্যবহারের অনুপযোগী সেগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হবে।

উপজেলা সরকারি কোয়ার্টার বরাদ্দ কমিটি’র সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান আবুল কাশেম ভূইয়া বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোয়ার্টারে বিনা ভাড়ায় থাকার বিষয়টি আমাকে কেউ জানাননি। এই রকম হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, শাহানা বেগমের বাসা ভাড়া বকেয়া বাবদ আমার কাছে দেড় লাখ টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকা আমি অফিসের লোকজনের কাছে দিয়ে দিয়েছি। সরকারি কোষাগারে জমা না হয়ে থাকলে সেটা আমার বিষয় না।