দরিদ্রের ডাক্তার চিন্ময় সাহা পোদ্দার
মোহাম্মদ শরীফ।
দেবিদ্বারে দরিদ্রের ডাক্তার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন চিন্ময় সাহা পোদ্দার।
করোনা কালীন সময়ে দুই বার করোনা আক্রান্ত হয়েও তিনি বন্ধ রাখেননি সেবা প্রদান। টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়েছেন সাধারণ মানুষ কে। সুস্থ হয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। মৃত্যু পদযাত্রী দরিদ্র রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন, খরচ বহন করেছেন। দরিদ্র রোগীর চিকিৎসা ও খরচ বহনের নজির তার অনেক। তার দরিদ্র বান্ধব চিকিৎসা খ্যাতির জন্য বি-পাড়া, চান্দিনা, মুরাদনগর, তিতাস, বরুড়া, বি-বাড়িয়া, হোমনা, নবীনগর সহ আশেপাশের ৮টি উপজেলা থেকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীরা চিকিৎসা নিতে ভীড় করছেন। চিন্ময় সাহা পোদ্দার বলেন, ‘মানুষের মনে একটা বিশ্বাস জন্মেছে এখানে আসলে ভাল চিকিৎসা পাওয়া যায়। করোনার প্রাথমিক পর্যায়ে আশেপাশের উপজেলা থেকে এত রোগী ভীড় করেছেন যে, সামাল দেওয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছিল। ভীড়ের কারনে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশংকা দেখা দিয়েছিল। তাই বিকল্প হিসেবে আমরা টেলিমেডিসিন সেবার ব্যবস্থা করি’। চিন্ময় সাহা জানান, ‘করোনায় আমরা খুব কম সংখ্যক রোগী কুমেক- এ রেফার করার চেষ্টা করেছি। কারন এখানকার রোগীরা অধিকাংশ দরিদ্র। এছাড়া তারা আমাদের উপর ভরসা রেখেছেন’।
দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে এই মানবিক ডাক্তার জানান, ‘ রোগীদের চিকিৎসার জন্য অত্যাবশকীয় পরীক্ষা -নিরীক্ষার সুবিধাদি না থাকা সত্ত্বেও বুকের এক্সরে ও রোগীর গতিপ্রকৃতি লক্ষ্য করে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। সর্বোচ্চ সতর্ক থেকেছি রোগীকে ঔষধ প্রদানের ক্ষেত্রে। যে ঔষধ টা করোনায় অকার্যকর হিসেবে স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশ দিয়েছে, সাথে সাথে সেটি আমরা বাদ দিয়েছি। মডারেট ও সিভিয়ার রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকের খরচ
৩৬০ টাকায় কমিয়ে নিয়ে আসি আমরা।
এখানে অনেক মুমূর্ষু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এটা ছিল আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারন এনারা এত দরিদ্র ছিলেন যে, কুমিল্লা গিয়ে চিকিৎসা করানোর সক্ষমতা ছিল না’। করোনা চিকিৎসার জন্য জন্য প্রাথমিকভাবে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ বেডের একটি ইউনিট স্থাপন করা হয়। পরে তা বাড়িয়ে ১৫ বেডে করা হয়। সেখানে ১৪ সদস্যদের চিকিৎসক টীমের নেতৃত্ব দেন চিন্ময় সাহা পোদ্দার। রোজিনা, মো কাউছার ও সুরিয়া বেগম তিন মুমূর্ষু রোগীকে নিজেদের টাকায় চিকিৎসা দিয়ে আলোচনায় এসেছেন এই চিকিৎসা সেবা টীম। করোনা রোগীর লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে এই টীম একটি বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা তৈরী করে। যা দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্ষেত্রে প্রথম। করোনা কালীন সময়ে তারা ৮ হাজারের বেশী রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করেছেন।
দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কবির আহমেদ বলেন, ‘ করোনাকালীন সময়ে ডা. চিন্ময় সাহা পোদ্দার এর অবদান প্রশংসনীয়। তিনি হাসপাতালের পাশাপাশি রোগীর বাড়ি গিয়েও চিকিৎসা দিয়েছেন’।
করোনায় মৃত লাশ দাফন টীম ‘ওরা ৪১’ প্রতিষ্ঠাতা আবু কাউছার অনিক জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিন-রাত কাজ করেছেন মানবিক ডা. চিন্ময়’।