দেশ মাতানো কুমিল্লার রসমালাই

 

 

inside post

কুমিল্লার রসমালাই। দিন দিন বাড়ছে যার জনপ্রিয়তা। ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। প্রায় দোকানের সামনের সড়কে ক্রেতার সারি দেখা যায়। নাম শুনে জিবে জল আসা রসমালাইয়ের সুখ্যাতি এখন দেশজোড়া। অন্য জেলার কোনো দর্শনার্থী কুমিল্লায় এসেছেন কিন্তু রসমালাই নিয়ে যাননি, তা ভাবা কঠিন। রসমালাই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে মাতৃভান্ডার,ভগবতী পেড়া ভান্ডার, শীতল ভান্ডার,কুমিল্লা মিষ্টি ভান্ডার, জলযোগ, পিপাসা, পোড়াবাড়ি ও জেনিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। আসল রসমালাই পেতে আপনাকে যেতে হবে নগরীর মনোহরপুর,কান্দিরপাড় ও নিউ মার্কেট এলাকায়। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

 

গংবাদে উল্লেখ করা হয়, মাতৃভান্ডার,ভগবতী পেড়া ভান্ডার, শীতল ভান্ডার পাশাপাশি তিনটি প্রতিষ্ঠান। পাশের কারখানায় দেখা গেছে কারিগরদের ব্যস্ততা। কেউ হাতে দুধের ছানা তৈরি করছেন। কেউ দুধ চুলায় ফুটাচ্ছেন। কেউ দুধের ঘন ক্ষীরে ছানা মেশাচ্ছেন। কারখানার বাতাসে রসমালাইয়ের মিষ্টি ঘ্রাণ। রসমালাই ছাড়া সেখানে বিভিন্ন প্রকারের মিষ্টিও তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ক্রেতার উপস্থিতি। রসমালাই প্লাস্টিকের বক্সে নিয়ে ঢাকনা লাগানো হচ্ছে। ঢাকনার ওপরে ক্যাঁত ক্যাঁত শব্দ তুলে স্কচটেপ লাগানো হচ্ছে। এখানে ক্রেতার ভিড় প্রায় সড়কে যানজট লেগে থাকে।

 

কুমিল্লার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, কুমিল্লার রসমালাই স্বাধীনতার পূর্বে ক্ষীরভোগ নামে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতার পর রসে ডুবা মিষ্টি ক্ষীর ভোগ ক্রেতাদের মুখে মুখে হয়ে যায় রসমালাই।

ব্যবসায়ীদের সূত্রমতে, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০০ সালে প্রথম কুমিল্লায় বাণিজ্যিকভাবে রসমালাই উৎপাদন শুরু হয়। কুমিল্লার মাতৃভান্ডার, ভগবতী পেড়া ভান্ডার ও শীতল ভান্ডার ১৯৩০ সাল থেকে রসমলাই বিক্রি করে আসছে। কুমিল্লা মিষ্টি ভান্ডার ১৯৫০ সালে রসমলাইয়ের ব্যবসা শুরু করে। বংশ পরম্পরায় চলছে রসমলাইয়ের ব্যবসা।
কুমিল্লায় বর্তমানে শতাধিক মিষ্টির দোকান রয়েছে। কুমিল্লা মিষ্টি মালিক সমিতির অধীনে ৩২টি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা রসমালাইও তৈরি করেন।

 

সূত্র আরো জানায়,কুমিল্লা নগরীতে উৎপাদিত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের রসমালাইয়ের মান ও স্বাদ কাছাকাছি। তবে মাতৃভান্ডারের জনপ্রিয়তা বেশি। মাতৃভান্ডারের রসমালাইয়ের জনপ্রিয়তার কারণে জেলার বিভিন্ন জায়গায় ব্যাঙের ছাতার মতো মাতৃভান্ডার গড়ে ওঠে। শুধু মাতৃভান্ডার নামের আগে পরে নানা শব্দ যুক্ত করে তারা ব্যবসা করছেন। নকল মাতৃভান্ডারের পাল্লায় পড়া ক্রেতার সংখ্যাও কম নয়। নকল মাতৃভান্ডারগুলো মহাসড়কের নিমসার থেকে পদুয়ার বাজার পর্যন্ত গড়ে উঠেছে। তবে মূল মাতৃভাণ্ডার কতৃর্পক্ষের দাবি তাদের কোন শাখা নেই।

ক্রেতা আফিফ হোসেন ও দীনেশ সেন বলেন,আসল রসমালাই কিনতে আমরা নগরীর মনোহরপুর আসি। মাতৃভান্ডার,ভগবতী পেড়া ভান্ডার, শীতল ভান্ডার ছাড়া রসমালাই কিনে তৃপ্তি পাই না।

 

ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন,কুমিল্লায় মনীন্দ্র সেন ও ফনীন্দ্র সেন প্রথম রসমালাইয়ের ব্যবসা শুরু করেন। যদিও প্রথমে এর নাম ছিলো ক্ষীরভোগ। কুমিল্লা ছিলো ত্রিপুরা রাজ্যের হেড কোয়াটার্র। ছিলো বাণিজ্য কেন্দ্র। এখানে বৃটিশ কর্মকর্তা,নগরীর উচ্চ বিত্তের নিকট ক্ষীরভোগ বেশ জনপ্রিয়তা পায়। তারা কুমিল্লার বাইরে বেড়াতে গেলে ক্ষীরভোগ নিয়ে যেতেন। এতে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে রসমালাইয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এই মিষ্টান্ন রসে পরিপূর্ণ বলে মানুষের মুখে মুখে এটি রসমালাই হয়ে যায়।

 

 

কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আতিক উল্লাহ খোকন বলেন,কুমিল্লার খাদি ও রসমালাইয়ের বিশ্ব বাজার ধরার মতো মান রয়েছে। এজন্য সরকারের বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা ঘরে আসবে। বাড়বে কর্মসংস্থান।
আমরা জানি,খাদির সাথে রসমালাই কুমিল্লার ঐতিহ্য। এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। রসমালাইয়ের বিশ্ব বাজার ধরার মতো মান রয়েছে। এজন্য সরকারের বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। তবে রসমালাইয়ের নামে যেন কোন প্রতিষ্ঠান ভোক্তাদের সাথে প্রতারণা করতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে রসমালাই তৈরি ও মানহীন রসমালাই তৈরি বন্ধ করতে হবে।

আরো পড়ুন