নগরীতে অযত্নে মরছে পুকুর দিঘি
কুমিল্লা নগরীতে দিন দিন দখল দূষণ আর অযত্নে মরছে পুকুর- দিঘি। এনিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন নগরীর সচেতন বাসিন্দারা। এবিষয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদে উল্লেখ করা হয়, ভরাট হয়ে যাচ্ছে নগরীর তিনশ’ বছরের পুরানো ছোটরা জংলিবিবি পুকুর। এ পুকুরের উত্তর পাশে রাতের আঁধারে চলে ভরাটের কাজ। নগরীর আরেকটি ৩০০ বছরের প্রাচীন দিঘি উজির দিঘি। দিঘিটি ভরাট চেষ্টার অভিযোগ উঠে। নগরবাসীর প্রতিবাদের মুখে আপাততঃ সেটির কাজ বন্ধ রয়েছে। কাপ্তান বাজার এলাকার কয়েকটি পুকুর ময়লা আবর্জনা ফেলে কৌশলে ভরাট করা হচ্ছে। নগরীর পুরাতন চৌধুরীপাড়ার টিএন্ডটি অফিসের পুকুরটি অযত্নে মরতে বসেছে। কচুরিপানা জমাট বাঁধা পুকুরে বেড়ে উঠছে কলা গাছ। এটি সর্বশেষ করে সংস্কার হয়েছে তা কেউ জানে না।
ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবির বলেন,নগরীর বজ্রপুর ইউসুফ স্কুল রোডে অজিতগুহদের একটি পুকুর, মোহিনী মোহন বর্ধনের বাড়ির সামনের পুকুর, ইউসুফ স্কুলের ভেতরের পুকুর,ডাঃ নিত্যহরির বাড়ির ভেতরের পুকুর, প্রয়াত বাদল হাজরার বাড়ির পাশের পুকুর ছিলো। সেগুলো ভরাট হয়ে গেছে। পাকিস্তান আমলে ভরাট হয়ে গেছে ইপিজেড রোডের আনন্দ সাগর দিঘিটি। ৭০এর পর ভরাট হয়েছে শাসনগাছা ডাক বাংলো দিঘি। তালপুকুরপাড়ে দুটি পুকুর আর নেই,হারিয়ে গেছে রায় বাড়ির পুকুর,ভিক্টোরিয়া কলেজের কমন রুমের পাশের পুকুর,ক্ষিতি দত্তের পুকুর,সারদা পাল মাঠের পুকুর,ঠাকুরপাড়া জোড় পুকুর,লালা পুস্কুরনী,ঝাউতলা কামিনী কুটিরের পাশের পুকুর,খ্রিষ্টান পাড়ার পুকুর,পার্কের ভেতরে ব্যাঙ সাগর। পুরো নগরীতে গত একশত বছরে শত শত পুকুর ভরাট হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, ব্যক্তি মালিকানার দোহাই দিয়ে অনেকে পুকুর দিঘি ভরাট করছেন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পুকুর দিঘির প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনে পুকুর দিঘি অধিগ্রহণ করতে পারে। তারপর দেখভালের জন্য সেগুলো লিজ দিতে পারে। এছাড়া কচুরিপানায় মরতে বসা পুকুর গুলো সংস্কার করতে পারে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক শওকত আরা কলি জানান, ছোটরা জংলিবিবি পুকুর ভরাট নিয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। উজির দিঘির বিষয়েও আমরা অবগত রয়েছি। অন্যান্য ক্ষেত্রে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে আমরা উদ্বেগের সাথে সাথে লক্ষ্য করছি বেসরকারির সাথে সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোও পুকুর ভরাটের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সম্প্রতি সড়ক বিভাগ একটি পুকুর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালায়ের জন্য একটি পুকুর ভরাট করা হয়। এছাড়া কারাগার কর্তৃপক্ষ চিড়িয়াখানার পাশের জলাশয় এবং কারা ফটকের বাম পাশের পুকুরটি ভরাট করে ফেলেছে। আমরা চাই এই প্রতিযোগতা বন্ধ হোক। রক্ষা পাক প্রাণ প্রকৃতি।