নামমাত্র ফি‘তে মিলছে কারিগরি শিক্ষা

inside post

দুই জেলার সীমান্তে আলো ছড়ানো প্রতিষ্ঠান
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
শিক্ষার্থী নাজমা আক্তার। গ্রাম থেকে কলেজ দূরে। নিম্নবিত্ত পরিবার। পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিবে। নাজমা আরো পড়তে চান। নিজের ও মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করতে চান। কলেজ দূরে,তাই মা-বাবাকে বুঝাতে পারছেন না। এবার গ্রামে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এনিয়ে নাজমার খুশির শেষ নেই। আবার সে পড়ায় মন দেয়। সে বাজারের দোকানে ছাড়া কখনও কম্পিউটার দেখেনি। সে এখন নিজেই কম্পিউটায় চালায়। ভবিষ্যতে সে প্রকৌশলী হয়ে দেশের সেবা করতে চায়। নাজমার মতো প্রায় ঝরে পড়া ছেলে ও মেয়েদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া এখানে সেমিস্টার ফিও নামমাত্র। কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার সীমান্তবর্তী নবীনগরের জাফরপুরে এই আবদুল হাই ভুইয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা আমেরিকান প্রবাসী মতিন ভুইয়া। তার স্বপ্ন এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকার বেকারত্ব ঘুচবে। আলোকিত হবে কাছাকাছি অবস্থিত নবীনগর,মুরাদনগর,বাঞ্ছারামপুর ও কসবা উপজেলার জনপদ।


সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যন্ত গ্রামে সুরম্য ভবন, পরিপাটি ক্যাম্পাস। সেখানে ফুলের বাগানের সুবাস নাকে লাগে, পাখির কুজন কানে দোলা দেয়। নজরে পড়ে পাশের মাঠের সোনালী ধান। কৃষক মাথায়- কাধে ফসল বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সন্তানরাই পড়ছেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে। ল্যাবে প্রবেশ করে দেখা যায়,আধুনিক সব সরঞ্জাম। শিক্ষকদের লেকচারে মনোযোগ শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের কথা শুনে মনে হলো- জেলা বা বিভাগ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের মতোই তাদের আত্মবিশ্বাস।
কম্পিউটার সায়েন্স ও টেকলোজি বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মা আক্তার,সুমাইয়া আক্তার বলেন,আমরা এখানে এসে প্রথম কম্পিউটার দেখেছি। এখন পাওয়ার এপ্লিকেশনসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামের কাজ করতে পারি। আমরা বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই।


সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আবদুর রহমান মাহফুজ ও সুমাইয়া আক্তার বলেন,আমরা এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করলেও কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা নিজেদের স্বাবলম্বী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
সিভিল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সাকিব হোসেন বলেন, কর্মমুখী শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে উন্নতমানের ল্যাব রয়েছে। এখানে ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে মেয়েরাও বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়ালেখা করছেন।
স্থানীয় সমাজ সেবক মো. ছানা উল্লাহ বলেন,এই জনপদের মানুষকে স্বাবলম্বী করতে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হযেছে। প্রতিষ্ঠাতা এটিকে প্রত্যন্ত গ্রামের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলেননি, শহরের প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি সুযোগ সৃষ্টি করেছেন।
অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. রহমত উল্লাহ কবীর বলেন,প্রতিষ্ঠাতার বাবা আবদুল হাই ভুইয়া শিক্ষক ছিলেন। তার ইচ্ছে ছিলো গ্রামে একটি মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার। প্রয়াত বাবার স্বপ্ন পূরণে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এখান থেকে কোন মুনাফা চান না। তিনি ভুর্তকী দিয়ে এটি পরিচালনা করছেন। নামমাত্র সেমিস্টার ফি। এছাড়া অতি দরিদ্রদের সেমিস্টার ফি মওকুফ,বই ও পোষাক কিনে দেয়াসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়।

আরো পড়ুন