না পৌঁছানো চিঠি… তাহরিমা ইসলাম

 

বাবা তুমি নেই অনেক দিন হল, তবে এখনো থমকে যাওয়া দুপুর বেলায় চারপাশে তোমার গন্ধ টা ছড়িয়ে থাকে। ক্লান্তি দূর করে আবার পথচলায় অনুপ্রেরণা যোগায়। অনেক না বলা কথাবজমে জমে পাহাড় হয়ে যাচ্ছে।আজ তাই লিখছি তোমায়

 

বাবা,

তুমি বলতেই মনে পড়ে ছোট ছোট অনেক স্মৃতি।ভনবম শ্রেনীতে মেধা তালিকায় জীবনে প্রথমবারের মত প্রথম স্থান ছেড়ে দ্বিতীয় স্থানে আমার নাম। কান্না করে যাচ্ছিলাম, খুব ভয়ে ছিলাম।যদি তুমি বকা দাও।কিন্ত না, ঠিক তখনি তুমি পাশে দাঁড়িয়েছিলে বাবা।তুমি খুব রাগী ছিলে কিন্ত সেদিন কোমল স্বরে বলেছিলে-‘মা’ এই প্রথম আর দ্বিতীয় নিয়ে মন খারাপ করতে নেই, এইতো জিবনের শুরু।পরাজিত হওয়া শিখতে পারাও যে জিবনের একটা অংশ।তবে প্রথম হবার চেষ্টা থামিও না, সফলতা নিশ্চয়ই আসবে।জানো এখন কোন কাজ করতে যেয়ে যখন ব্যর্থ হই,মনে পড়ে তোমার কথা, আবার চেষ্টা করার সামর্থ্য পাই। যেন তুমি না থেকেও পাশেই আছো।

বাবা মনে পড়ে,ছোট বেলায় একবার পায়ে লোহার পেরেক বিধেঁ ছিল,কাউকে কাছে আসতে দিচ্ছিলাম না। তখনি তুমি রাগী স্বরে বলেছিলে -চুপ করে বস, আমাকে দেখতে দাও। তুমি যখন পেরেক টা খুলছিলে তখন আমি ভয়ে কান্না করলেও একটুও ব্যথা পাইনি। মনে হয়েছিল তোমার হাতে জাদু আছে। বলতে চেয়েছিলাম তোমায় কিন্ত বলতে পারিনি। আসলে বাবা আমরা কাছের মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতেই বেশি অস্বস্তিবোধ করি।

বাবা কাজের জন্য যত দূরেই তুমি থাকতে আমার মন খারাপের বেলায় একমাত্র সান্ত্বনাই ছিলে তুমি। ঠিক তোমার ফোন পেয়ে যেতাম।আমি বলার আগেই বাবা বলে দিতে আমার মন খারাপ।প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হতো বাবা তুমি কি করে জানলে? কিন্ত প্রশ্ন করা আর হয়নি।ভেবে নিতাম বাবারা সব বুঝে যায়, বলতে হয় না।

আমার পরিক্ষা দিতে যাবার বেলায় জোর করে তোমায় নিয়ে যেতাম,কেনো তা তোমায় বলা হয়নি। আমি ভাবতাম তুমি সাথে গেলেই পরিক্ষাটা ভালো হবে। আর তুমিও সহ্য করে যেতে আমার এই পাগলামি টা। খুব বেশি ভালো ছিলে তুমি বাবা।

বাবা তুমি খুব উদ্ভিদ প্রেমী ছিলে। বাড়িতে তোমায় কোথাও খুঁজে না পাওয়া মানেই তুমি তোমার নার্সারিতে। তুমি তো বলতে গাছেরা নাকি মন খারাপ ভালো করে দেয়। জানো এখন আমার ছাদবাগানেও হরেকরকম গাছ আছে। তোমার পছন্দের রজনীগন্ধা গাছ টাও আছে। এই গাছগুলো আমায় তোমায় স্পর্শের অনুভূতি দেয়। সব গাছের যত্ন তাহমিদ করে,তোমার মতো সে গাছের জন্য পাগল।

বাবা মনে পড়ে আমার জন্মদিনে তোমার শার্টে রাখা কলমটা তুমি আর খুঁজে পেতে না। আমি নিয়ে যেতাম। এখনো আছে, অতি যত্নে রেখেছি। না বলে নেয়ার জন্য আমি দুঃখিত বাবা। তবে জানোতো ঐ কলম গুলোর সাথে প্রতি বছর একটা করে কলম জমা করি আমি, কেনো জানো? তোমার জন্মদিনের উপহার। জানো বাবা,তাসনিম তোমার জন্য এলবাম বানিয়েছে,হাতে আঁকা এলবাম। খুব সুন্দর। অনেক বড় হয়ে গেছে আমাদের তাসনিম।

খুব মনে পড়ে তোমায় বাবা। এখন তোমার আর আমার মাঝে এক মহাকালের দূরত্ব। এই চিঠি তোমার কাছে পৌঁছাবে না আমি জানি, তবুও লিখা। তুমিতো জানো মন খারাপের একমাত্র ঔষুধ তুমি ছিলে,আজও তুমি ই আছো। এতোটা দূরত্বেও চলে গেলে কিন্ত যাবার বেলায় মন খারাপ ভালো করার আর একটা ঔষধ দিয়ে যেতেই ভুলে গেলে। বড্ড তাড়াহুড়োতে চলে গেলে বাবা!
ভালো থেকো তুমি বাবা ।ভালো থাকোক সব বাবারা।

তোমার
পোড়ামুখী