পরিবারের আহার জোগায় ছয় উনুন!
হাসিবুল ইসলাম সজিব।।
মাথায় কালো চুল। মুখে হালকা সাদা-কালো দাড়ি। মুখের চামড়ায় ভাঁজ। হাতে চলছে পিঠা তৈরি। তার দুইহাতে চলে ছয় চুলা। দিনে আট ঘন্টা চলা ছয় পিঠার উনুন ঘোরায় তার পরিবারের সদস্যদের ভাগ্যের চাকা। পেটে আনে ভাত। মুখে ফোটায় হাসি।
তিনি মোস্তফা মিয়া। কুমিল্লা নগরীর ধর্মসাগর পাড়ের দক্ষিণ গেটে তাকে দেখা যায় শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।
কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন কাজ শুরুর আগেই উনুন গুলোকে মুছে নতুন সাজ করেন। বলেন, এগুলিই তার পেটের খাবার দেয়। তার বাড়ি কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বাদুরতলা এলাকায়। বাবা মায়ের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি প্রথম। পরিবারের অভাব অনটনের বিদ্যালয়ে যাওয়া হয়নি তার। তবে ধার্মিক ও সামাজিক শিক্ষা পেয়েছেন পরিবার থেকে। আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় মাথাভর্তি টেনশন ঘিরে থাকে তার চারপাশে। কোন উপায় না পেয়ে এক পর্যায়ে ফুটপাতের পাশে অল্প পুঁজি নিয়ে বিভিন্ন মৌসুমী বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করেন মোস্তফা মিয়া। শীতকালে ধর্মসাগর পাড়ে একটি ভ্যানে ছয়টি মাটির চুলা দিয়ে প্রতিদিন আট ঘন্টা ধরে পিঠা বানিয়ে বিক্রি করেন। চিতই এবং ভাঁপা পিঠা সাথে থাকে সরিষা, কাঁচামরিচ, শুঁটকি ও মিশ্রিত ভর্তা। এতে ভালো সাড়া পান ক্রেতাদের কাছ থেকে। দূর থেকে ধর্মসাগর পাড়ে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা তার পিঠা খেতে ভিড় জমান ভ্যানের চারপাশে। মাঝে মাঝে পিঠা খাওয়ার জন্য ধরতে হয় সিরিয়াল। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে বিশেষ কিছু হচ্ছে এখানে। এ পিঠা খেয়ে ক্রেতারা যেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তেমনি তিনি উৎসাহের সাথে পরিপাটি করে পরিবেশন করেন ক্রেতাদের মাঝে। প্রতিদিন পিঠা বিক্রি করে তার আয় হয় তিন-চার হাজার টাকা। পিঠা বিক্রির আয় দিয়ে সুন্দর ভাবে চলছে পরিবার।
তিনি জানান, তিনজন মেয়ে এবং এক জন ছেলের জনক তিনি। দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। এখন তারা স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে ছোট মেয়ে। একমাত্র ছেলে, সেও এখন বাবার সাথে সময় দেয় ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে।
পিঠা খেতে আসা রফিকুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, মারজিয়া সুলতানা, রিফাত আহমেদ ও মারিয়া আক্তার বলেন, আমরা দূর থেকে এসেছি। বিকেলের নাশতা খুঁজছিলাম। এখানে পিঠার দোকান দেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম। সিরিয়াল ধরে নিয়েছি। স্বাস্থ্য সম্মত করার চেষ্টা করেছেন তিনি। পিঠাও অনেক মজাদার। ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেলো এসব পিঠা খেয়ে।
স্থানীয় আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, আমরা বিকেলে হাঁটতে বের হই। সব সময়ই দেখি ভিড় লেগে আছে। আমরাও তার পিঠা খাই। টেস্ট ভালো। শীতকাল এলেই এসব পিঠার ধুম পড়ে। মানুষও হুমড়ি খেয়ে পড়ে।