পাবলিক টয়লেটে চলছে ছাগল পালন!
প্রকৃতির ডাকে দূষিত চারপাশ
সানোয়ার হোসেন,চৌদ্দগ্রাম।।
পাবলিক টয়লেট পাবলিকের নয়। নাগরিক সেবার অংশ হিসেবে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা এলাকায় এক এক করে নির্মাণ করা হয় চারটি পাবলিক টয়লেট। বাজার ব্যবসায়ী, জনসাধারণের জরুরি প্রয়োজন সারতে ব্যস্ত ও জনবহুল জায়গায় জনগণের টাকায় নির্মিত সেই পাবলিক টয়লেট গুলোর কোনোটিতে পালন হয় ছাগল, কোনোটির কলাপসিবল গেটে ঝুলছে তালা, কোনোটির দরজার ঘুমায় কুকুর, কোনোটির আঙ্গিনা ও ছাদে করা হচ্ছে সবজি চাষ। এ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে মানুষ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিচ্ছে খোলা জায়গা ও অলিগলি; দূষিত হচ্ছে চারপাশ।
পৌরসভার স্যানেটারি ইন্সপেক্টর ইমাম হোসাইন সজিব বলেন ‘পৌরসভার চারটি পাবলিক টয়লেটের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন টয়লেটটি দীর্ঘদিন বেদখল ছিল। সম্প্রতি সেটি দখলমুক্ত করা হয়েছে। উপজেলা খাদ্য গুদামের পাশেরটি ও আটগ্রাম রাস্তার মাথায় মহাসড়কের পাশেরটি বন্ধ রয়েছে।’ খাদ্য গুদামের পাশেরটিতে ছাগল পালন হয় শুনে বললেন ‘খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে. আটগ্রাম রাস্তায় মাথায় মহাসড়কের পাশে নির্মিত টয়লেটটিতে তালা ঝুলছে। ২০২০ সালে নির্মাণের পর কখনো সেটি খোলা দেখা যায়নি। পাশের দোকানিরা বলছেন- এটি এখানে কেন নির্মাণ করা হয়েছে তা বোধগম্য নয়। উপজেলা পশু হসপিটাল ও খাদ্য গুদাম সংলগ্ন পাবলিক টয়লেটটির মহিলা অংশে পাশের হোটেল ব্যবসায়ী ছাগল পালন করেন। পুরুষ অংশের কলাপসিবলে ঝুলছে ছোট একটি তালা। এটা বন্ধ কি না জানতে চাওয়ায় পাশের সেই হোটেল ব্যবসায়ী চাবি এগিয়ে দিয়ে বললেন ১০ টাকা!
ইজারা নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে ওই ব্যবসায়ী বললেন, ‘ইজারা নিয়েছেন বাবুল নামের এক লোক। অস্বীকার গেলেন টয়লেটের ভেতর ছাগল পালনের কথা। তবে টয়লেটের সামনে দুটি বাচ্ছাসহ ছাগল বাঁধা দেখা গেছে তখন। বুধবার রাতে গিয়ে দেখা যায় ওই টয়লেটের ভেতর ছাগল শুয়ে আছে, কলাপসিবল গেটে পর্দা ঝোলানো।
চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের দোকানি শাহবুদ্দিন বলেন, ‘এটা এখানে(হাসপাতালের সামনে) কেন নির্মাণ করা হয়েছে জানিনা। এটা সবসময় বন্ধ থাকে। এটার দরজায় কুকুর ঘুমিয়ে থাকে।’
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার উপ-প্রকৌশলী নূর ইসলাম মিলন জানান, ২০/২১ সালে উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিস ৮০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিলে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা ঠিকাদার ফাতেমা ট্রেডার্সের মাধ্যমে ২০ টি টয়লেট ও ২৯ টি ড্রেন নির্মাণ করা হয়। ইজারাদার খোরশেদ আলমের মাধ্যমে চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকায় চারটি টয়লেট পরিচালিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের দায়িত্বে থাকা নজরুল ইসলাম জানান, ২০১৯/২০ সালে জনসাস্থ্যের একক ৮০ লক্ষ টাকা অর্থায়নে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা ২০টা টয়লেট ২৯ ড্রেন নির্মাণ করে। যা ২১ সালে পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম খাদ্য গুদাম সংলগ্ন পাবলিক টয়লেট থেকে প্রয়োজন সেরে বেরিয়ে আসা ব্যবসায়ী আবুল খায়ের জানান, ‘১০ টাকা দিয়ে টয়লেটের ভেতরে ঢুকলেও স্যাঁতসেঁতে অবস্থা ও ছাগলের দুর্গন্ধে দ্রুত বেরিয়ে এলাম। এটা কি পাবলিক টয়লেট নাকি ছাগলের খামার!’
পালিকের টয়লেটের ইজারাদার সাবেক কাউন্সিলর বাবুল জানান, ‘আমি ও খোরশেদ আলম নামের একজন বাজার এলাকার চারটি টয়লেট ইজারা পেয়েছি ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে। কাঁচা বাজারের সামনে টয়লেটটি মানুষ ব্যবহার করে, কিন্তু বাকি তিনটি টয়লেট কেউ ব্যবহার করেনা বিধায় আমরা লোকসানে আছি। খাদ্য গুদাম সংলগ্ন টয়লেটের ভেতরে কে বা কারা ছাগল রাখে আমরা জানিনা।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘পাবলিক টয়লেট গুলো ইজাদারের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। পৌরসভা স্যানেটারি ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানবো ইজারাদার ঠিক মতো ব্যবহার করছে কি না।’